কি? শুনতে অদ্ভুত লাগছে? জীবনটা আসলেই অনেক ছোট। একারণেই দোয়া করার সময় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা বলি, দীর্ঘজীবী হও। অনাকাঙ্ক্ষিত কোন দুর্ঘটনার ওপর আমাদের কারো হাত থাকে না। সেদিকটা যদি বাদ দেই তাহলে আমরা কত বছর সুস্থভাবে বেঁচে থাকব তার অনেকটাই নির্ভর করে আমাদের জীবনযাত্রার ওপর। জীবনযাত্রায় সামান্য কিছু বদল আপনাকে আরও বেশ কিছু বছর সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে।
১) বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিন(৭ বছর)
বন্ধুর পাল্লা যত ভারী হবে, আপনি তত বেশি ভালো থাকবেন। ভালো বন্ধু আপনার জন্য একটি সাপোর্ট নেটওয়ার্ক তৈরি করবে, যে কাজই করুন না কেন, পাশে বন্ধুরা থাকলে কঠিন কাজও সহজ মনে হবে। ভালো বন্ধু আপনার খারাপ সময়ে পাশে থাকবে। যেকোনো ক্রিটিক্যাল সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে বন্ধুরা অনেক বড় ভূমিকা রাখে। এমন অনেক বিষয় যা থাকে হয়ত পরিবারের সাথেও শেয়ার করা যায় না। সে সময় বন্ধুরা পাশে থাকলে মনের জোর বাড়ে। এছাড়াও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে থাকলে মানুষের শরীরে অক্সিটোসিন নামক হরমোন তৈরি হয়, যা ব্রেন ফাংশনকে শান্ত রাখে।
২) দাঁড়িয়ে কাজ করুন ( ২ বছর)
হয়তো আপনি সকাল-বিকাল ঠিকই হাঁটেন, বা হয়তো এক্সারসাইজও করেন মাঝে, কিন্তু সারাদিন ডেস্কে বসে কাজ করাটা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। আপনি যখন বসে থাকেন, তখন আপনার ব্লাড সারকুলেশন কমে যায়, ক্যালোরি ক্ষয় হয় খুব কম, সুগার মেটাবোলিজম প্রায় স্থির হয়ে যায় এবং যেসব এনজাইম শরীরের ফ্যাটগুলো ভাঙতে সাহায্য করে সেটা বন্ধ থাকে। তাই একটানা বসে কাজ করবেন না। কাজের সময় ফোনে কথা বললে কয়েক মিনিটের জন্য হেঁটে কথা বলুন। চা-কফি খেতে খেতে একটু হাঁটুন। অর্থাৎ একটানা বসে কাজ করবেন না। প্রতি ঘণ্টায় যদি আপনি ৫-১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকেন, সারাদিন কাজের পরেও আপনি অনেক বেশি ভালো বোধ করবেন।
৩) ফ্লস করুন(৬ বছর)
দু’বেলা দাঁত ব্রাশ করলেই আপনি ওরাল হাইজিন নিশ্চিত করতে পারবেন, ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। ব্রাশ করার পরেও অনেক সময় দাঁতের ফাঁকে অনেক ক্ষতিকর জিনিস থাকতে পারে যা পেটে গেলে হৃদ-রোগ, ডায়বেটিস এমনকি আথ্রাইটিস এর মত রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই রেগুলার ফ্লসিং অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত রোগের ঝুঁকিও কমিয়ে দিতে পারে।
৪) ডায়েটে রাখুন সবজি (২ বছর)
প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখুন সবজি। রান্না করা বা কাঁচা সবজি দুটোতেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাইটোকেমিক্যাল ও অ্যান্টি -অক্সিডেনট। তবে রান্না করা সবজির চেয়ে কাঁচা সবজি অনেক বেশি কার্যকর, কেননা রান্নার পরে খাদ্যগুণ কিছুটা হলেও কমে যায়। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন এক কাপ কাঁচা সবজি।
৫) ইতিবাচক চিন্তা করুন (৭ বছর)
জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং হাসিখুশি থাকা আপনাকে বেশিদিন বাঁচতে সাহায্য করবে। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আপনার ব্রেন ফাংশনকে ভালো রাখবে, স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি করবে, ডিপ্রেশন কমাবে এবং আলঝেইমার এর ঝুঁকি কমাবে।
৬) BMI ঠিক রাখুন (৩বছর)
আপনার ওজন এবং উচ্চতার মাঝে ব্যাল্যান্স রাখুন। নিজের BMI হিসেব করুন। যদি ২৫-৩০ এর মধ্যে হয় তাহলে আপনার উচ্চতা এবং ওজনে ব্যাল্যান্স নেই। আর ৩০ এর উপরে হওয়া মানেই আপনি স্বাস্থ্য ঝুকিতে আছেন। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত ওজন ডায়বেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কোলন ক্যান্সার এর ঝুঁকি বাড়ায়।
৭) বাদাম খান প্রচুর পরিমান( ৩ বছর)
প্রতিদিন এক মুঠো করে বাদাম আপনাকে অনেক বেশি সুস্থ রাখবে। বাদাম খেলে হাই ব্লাড প্রেশার, হাই কোলেস্টেরল, ইনসুলিন রেজিসটেনস এর ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে।
৮) নিয়মিত ব্যায়াম করুন ( ৫ বছর)
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা মনে করেন ব্যায়াম করাটা শুধু মোটাদের জন্য জরুরি। কিন্তু সত্যিটা আপনি যদি ঠিকঠাক স্বাস্থ্য ও অজনের অধিকারি হয়ে থাকেন, তবুও প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিটের ব্যায়ামের প্রয়োজন রয়েছে আপনার। ওজন কমানো ছাড়াও ব্যায়ামের রয়েছে আরও নানান উপকারিতা। এটি আপনার মুড ভালো রাখবে, হরমোন ব্যাল্যান্স করবে, হাড় শক্ত করবে, কোলেস্টেরল লেভেল ঠিক রাখবে সর্বোপরি আপনি থাকবেন পুরোপুরি ফিট।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
লিখেছেন – মাহাবুবা বীথি
ছবি – ফটোগ্রাফারস.ক্যানভেরা.কম