কাশি একটি যন্ত্রনাদায়ক ও বিরক্তিকর অসুখ৷ এটা ভাইরাস সংক্রমণ, ঠান্ডা লাগা, ফ্লু, হাঁপানি, যক্ষ্মা, ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণে হতে পারে। কাশির উপসর্গ হল গলা ব্যথা, বুকে ব্যথা ও চাপবোধ, শ্বাসকষ্ট, গলার স্বরভাঙ্গা ইত্যাদি৷ এখানে সাধারণ ঠান্ডা লাগা কাশির ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে৷ এই কাশির জন্য প্রতিদিনের কর্মক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়৷ স্কুল-কলেজে ক্লাসের সময়, অফিসে কাজের সময় অথবা কোন মিটিং, সিনেমা হলে হঠাৎ করে কাশি শুরু হয়ে গেল; কী যে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় তখন৷ সেজন্য যত তাড়তাড়ি নিরাময় হওয়া যায় ততই ভালো৷ অনেকে কফ সিরাপ খেয়ে থাকেন কিন্তু এগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শরীরের ক্ষতি করে৷ যারা সিরাপ খেতে চান না তারা প্রাকৃতিক ভেষজ ওষুধের দ্বারা উপকৃত হতে পারেন৷ এগুলোর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই৷ এই ঠান্ডায় অনেকে কাশিতে কষ্ট পাচ্ছেন৷ এর থেকে পরিত্রাণের কিছু উপায় নিচে দেয়া হল-
[picture]
(১) একটি প্যানে ৪ কাপ পানি, ৪ টেবিল চামচ গ্রেড করা আদা, ১টা লেবুর রস, ৬টি ছেঁচা লবঙ্গ জ্বাল দিয়ে ২ কাপ করুন৷ ছাঁকনায় ছেঁকে ১ কাপ মধু দিয়ে খুব ভালো ভাবে মেশান৷ ঠান্ডা করে বোতলে সংরক্ষণ করুন, ফ্রিজে ২ সপ্তাহ রাখা যায়৷ দিনে রাতে ৩/৪ বার ১ টেবিল চামচ করে খেতে হবে৷ শিশুদের ১ চা চামচ করে ২ বার দিবেন৷ যাদের শুষ্ক কাশি তাদের জন্য এটা ভালো৷
(২) একটি প্যানে দেড় কাপ পানি ও ২ চা চামচ তুলসি পাতা কুচি জ্বাল দিন৷ জ্বাল দিয়ে ১ কাপ করুন৷ ছাঁকনায় ছেঁকে ১ টেবিল চামচ মধু মেশান৷ এই তুলসি চা দিনে রাতে ২ বার খেতে হবে৷ শুষ্ক ও তরল এই দু’ধরনের কাশির জন্যই ভালো৷
(৩) ১ চা চামচ ছেঁচা গোলমরিচ ১কাপ ফুটন্ত গরম পানিতে ৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন৷ চামচ দিয়ে একটু নাড়ুন৷ ছেঁকে ১ টেবিল চামচ মধু মেশান৷ দিনে রাতে ২ বার খাবেন৷ যাদের তরল কাশি, বুকে কফ জমে আছে তাদের জন্য ভালো৷
(৪) যষ্টিমধু (কবিরাজী দোকানে কিনতে পাওয়া যায়) ২ ইঞ্চি পরিমাণ ১ টুকরা এক গ্লাস পানিতে জ্বাল দিন, ১৫ মিনিট পর ছেকে নিন৷ পরদিন সকালে, দুপুরে ও রাতে ৩ বার খাবেন৷ যতদিন কাশি না ভালো হয় ততদিন খেতে হবে৷ এটা শুষ্ক ও তরল এই দু’ধরনের কাশির জন্যই ভালো৷
(৫) একটি প্যানে ১/২ কাপ পানি, ১ চা চামচ হলুদের গুঁড়া, ১ চা চামচ ছেঁচা গোলমরিচ, ১ টুকরা দারূচিনি ২/৩ মিনিট জ্বাল দিতে হবে৷ ছেঁকে ১ টেবিল চামচ মধু গুলিয়ে খাবেন৷
(৬) ১ কাপ হালকা গরম পানিতে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস ও ১ টেবিল চামচ মধু গুলিয়ে খাবেন ৷ দিনে রাতে ২ বার খেতে হবে৷
(৭) হঠাৎ কাশি শুরু হলে ১ চিমটি লবণ ও ১ চিমটি গোলমরিচের গুঁড়া ১টা লেবুর ৪ ভাগের ১ ভাগের উপর মাখিয়ে চুষতে হয়৷
(৮) রাতে ঘুমাতে যাবার আগে ১ গ্লাস গরম দুধে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে খাবেন৷
কিছু নিয়ম:
– ১ চা চামচ লবণ ও ১ গ্লাস গরম পানি একসাথে মিশিয়ে গড়গড়া করুন দিন ও রাতে ৪/৫ বার ৷
– সব সময় গলা একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন৷
– যখন গলা খু্সখুস করবে তখন একটি লবঙ্গ মুখে দিয়ে চিবুতে থাকবেন, এটাতে গলার খু্সখুস ভাব কমে যায়৷ প্রচন্ড কাশির বেগও এটাতে কমে৷
– হঠাৎ কাশি শুরু হলে ১ চিমটি লবণ ও ১ চিমটি গোলমরিচের গুঁড়া ১টা লেবুর ৪ ভাগের ১ ভাগের উপর মাখিয়ে চুষতে থাকুন, কাশির বেগ কমে আসবে৷
একটি কথা বলে রাখা ভালো, যাদের মধু পেটে সহ্য হয় না তারা চিনি অথবা মিছরি ব্যবহার করতে পারেন; তবে মধুর উপকারিতা পাবেন না৷ যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা চিনির বিকল্প যেটা ব্যবহার করেন সেটাই করবেন৷ শিশুদেরকে মধু দেবেন – ১ থেকে ৫ বছরের শিশুকে আধা চা চামচ, ৬ থেকে ১১ বয়সের শিশুদের জন্য ১ চা চামচ; এবং যাদের বয়স ১২ থেকে উপরে তাদেরকে ২ চা চামচ৷ নবজাতক থেকে ১ বছরের কম বয়সের শিশুকে মধু দেবেন না, পেটে সমস্যা হবে৷ উপরের যেকোন একটি (যেটা আপনার সুবিধা) নিয়মিত খেতে থাকুন, আশাকরি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন৷
ছবি- হানিফ্যানাটিক.কম
লিখেছেন- পারভীন কাওসার