ঋতুর পরিবর্তন ও ত্বকের ধরন ভেদে রূপচর্চার নিয়মনীতিতেও পরিবর্তন হয়। কোনো ঋতুতেই স্বাভাবিক ত্বকের যত্নে তেমন বেগ পেতে হয় না। কিন্তু শুষ্ক ত্বকের যত্ন নেয়া বেশ কঠিন। শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কমতে শুরু করার সাথে সাথেই শুষ্ক ত্বক আরও শুষ্ক হতে শুরু করে। দিনে দিনে ত্বক রুক্ষ ও মলিন হয়ে পড়ে। শুষ্ক ত্বকের অধিকারীরা তাই শীতের শুরুতে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। পুরো শীত জুড়ে আপনার ত্বককে সুন্দর ও সুস্থ রাখতে এখানে কিছু উপায় দেয়া হলো-
[picture]
- ঘরের ভেতরে আর্দ্র আবহাওয়া বজায় রাখুন। উষ্ণ পরিবেশ শুষ্ক ত্বকের জন্য উপযোগী। ঘর থেকে বাইরে যাওয়ার সময় অবশ্যই মুখে, হাতে পায়ে ও ঠোঁটে প্রয়োজনীয় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
- অতিরিক্ত গরম পানি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। গরম পানি শুষ্ক ত্বককে আরও বেশি শুষ্ক করে তোলে। হালকা গরম পানি গোসল ও হাত, মুখ পরিষ্কারের জন্য ব্যবহার করুন। গোসলের পানিতে সামুদ্রিক লবণ ব্যবহার করতে পারেন। ভালো ময়েশ্চারাইজার ও ক্লিনজিং মিল্ক যুক্ত সাবানও ব্যবহার করতে পারেন, সেক্ষেত্রে বেশি পানি ব্যবহার করে ভালো করে ত্বক থেকে সাবান ধুয়ে ফেলতে হবে। গোসলের পরপরই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
- বাতাসের আর্দ্রতা কমলে শুষ্ক ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যায়। ত্বক সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। ফলে ত্বকে র্যাশ বা চুলকানির ভাব দেখা দেয়। গরম পোশাক যেন নরম ও আরামদায়ক হয় সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখুন। ঘরে তুলে রাখা পোশাক পরিধানের পূর্বে অবশ্যই তা রোদে দিয়ে বা বাতাসে রেখে পরে পরিধান করুন। উলের টুপি, হাতমোজা , স্কার্ফ নরম হওয়া আবশ্যক।
- বাইরে যাওয়ার সময় ত্বকে ময়েশ্চারাইজারের সাথে সাথে অবশ্যই সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করবেন। কারণ শীতেও সূর্যের আলোতে ক্ষতিকর UV রশ্মি থাকে। অবশ্যই SPF 30 অথবা কাছাকাছি মাত্রারও হতে পারে।পার্টিতে বেজ মেক-আপেও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
- এই সময় শুষ্ক ত্বকের অধিকারীদের অনেকের হাত পা ফেটে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। পায়ের গোড়ালি ফেটে যাওয়ার লক্ষণ এই শীতে বেশি দেখা যায়। ঘুমানোর আগে গ্লিসারিনের সাথে পানি বা গোলাপজল মিশিয়ে লাগালে এই ফেটে যাওয়া গোড়ালি ফিরে পাবে মসৃণতা। ঘরে বসে সেরে নেয়া যায় মেনিকিউর বা পেডিকিউর।
- রাতে শুতে যাওয়ার আগে দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে হালকা ম্যাসাজ করে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। শুষ্কতা কমবে অনেকটাই। মধু, দই, ডিম, গাজরের রস একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান, ২৫ মিনিট পর আলতো করে ঘষে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ৩ দিন করতে পারলে শুষ্কতা কমে যাবে। এছাড়াও আমন্ড বাটা ও মধু দিয়ে প্যাক করে মুখে লাগান ১৫ মিনিট পর ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ৩ দিন করলে অনেক উপকার পাবেন।
- অনেকের ঠোঁট শুষ্ক হয়ে ফাটতে থাকে। কমলার রস মেখে কিছুক্ষণ রাখতে পারেন অথবা গোলাপের পাপড়ির সঙ্গে দুধের সর মিশিয়ে ঠোঁটে মাখাতে পারেন। দাগ তো কমবেই, ঠোঁট নরমও থাকবে। ঠোঁট নরম রাখতে ভালো মানের লিপবাম ব্যবহার করতে পারেন।
- শীতের ত্বকের আসল যত্ন খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। শীতের সব রকম শাকসবজি ও ফল খাবেন এবং প্রচুর পানি পান করবেন। ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষার জন্য পানি খুবই দরকার। শীতের শাক সবজিতে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ত্বকের সুরক্ষায় অতি কার্যকর।
শীতে শুষ্ক ত্বককে সুস্থ রাখতে ত্বকের যত্ন ও খাদ্যভ্যাসে সচেতন হতে হবে। সকালে ঘুম থেকে জেগে ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় ভারী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। সবসময় ব্যাগে একটি ছোট্ট ময়েশ্চারাইজার ও একটি লিপবাম রাখতে পারেন, তাহলে প্রয়োজনে সহজেই নিজেকে পরিপাটি করে নিতে পারবেন।
লিখেছেন – বৈশাখী
ছবি – স্টাইলক্রেজ.কম