আজকে আমি যে প্রোডাক্ট নিয়ে রিভিউ লিখতে বসেছি, সেটা এখন বিউটি ওয়ার্ল্ডে খুব জনপ্রিয় নাম। প্রোডাক্টটি হলো আরগান অয়েল! স্কিন কেয়ার হোক, আর হেয়ার কেয়ারই হোক, সব কাজের কাজী কিন্তু এই স্কিন ক্যাফে আরগান অয়েল। মরক্কোতে আরগান গাছের ফল থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করে এই তেল পাওয়া যায়। আরগান ফলে আছে ভিটামিন এ, ই, অ্যান্টি অক্সিডেন্টস, ওমেগা ৬ফ্যাটি এসিডস এবং লাইনোলিক এসিড, যা চুল আর ত্বকের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
স্কিন ক্যাফে আমাদের বাংলাদেশি একটা প্রিমিয়াম স্কিন কেয়ার অ্যান্ড হেয়ার কেয়ার ব্র্যান্ড। যদি এদের প্রোডাক্টগুলোর প্যাকেজিং দেখলে কখনওই সেটা মনে হবে না, কারণ এদের প্যাকেজিং দেখে আমি নিজেই প্রথমবার বাইরের কোন কোম্পানির প্রোডাক্ট ভেবেছিলাম। তাদের প্রোডাক্ট রেঞ্জগুলোর মধ্যে কিছু প্রডাক্ট – অর্গানিক এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েল, অলিভ অয়েল, জোজোবা অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল, অ্যাভোকাডো অয়েল, সুইট আমন্ড অয়েল, অ্যালোভেরা জেল এবং আরগান অয়েল। সবগুলো প্রোডাক্টই আমি অনেকদিন ধরে ব্যবহার করছি।
আরগান অয়েল
এ মুহূর্তে স্কিন ক্যাফে আরগান অয়েল আমার মোস্ট ফেভারিট। ৫০ এম এল এর খুব সুন্দর কালচে খয়েরী রঙের বোতলে ড্রপারওয়ালা ঢাকনার প্যাকেজিং এ আসে তেলটি। ড্রপারের সাহায্যে ফোঁটায় ফোঁটায় খুব সহজে তেল বের হয়ে আসে এবং ড্রপার থাকে বলে প্রোডাক্ট ওয়েইস্টেজ ও হয় না। তেলটা বেশ ঘন কনসিস্টেন্সির। আর যারা বলে থাকেন যে আরগান অয়েল অনেক বেশি এক্সপেনসিভ, তাদের জন্য বলছি, আপনার ডেইলি ইউসেজের জন্য কিন্তু ৪-৫ফোঁটা আরগান অয়েলই যথেষ্ট! ওতেই আপনার স্কিন আর হেয়ার কেয়ার কমপ্লিট হয়ে যাবে । এর ইনগ্রিডিয়েন্ট হচ্ছে ১০০% মরক্কান আরগান অয়েল।
এর মাল্টিপারপাস এবিলিটির কথা বলে শেষ করা যাবে না। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে দেখে নেওয়া যাক, কেন আমি এটাকে মাল্টিপারপাস এবিলিটির ওয়ান্ডার প্রোডাক্ট বলছি –
আরগান অয়েল এর ৯টি উপকারিতা
১) নাইট টাইম ময়েশ্চারাইজার হিসেবে
রাতে ঘুমানোর আগে হাতের তালুতে এক-দুই ফোঁটা আরগান অয়েল ঢেলে নিন। তারপর হাতের তালুতে ভালোভাবে ম্যাসাজ করে পুরো মুখে, চোখের নিচে, গলায় ভালোভাবে মেখে ঘুমিয়ে যান। এটা আপনার স্কিনকে ডিপলি নারিশ করবে, বিশেষ করে নরমাল টু ড্রাই স্কিনের অধিকারীরা চোখ বন্ধ করে নিশ্চিন্তে এটা ব্যবহার করতে আপনার নাইট টাইম ময়েশ্চারাইজার হিসেবে।
২) স্কিন টোনার হিসেবে
আপনার স্কিন যদি নরমাল টু অয়েলি হয় তাহলে ৬০-৮০এম এল পানি ফুটিয়ে নিন। তাতে একটা গ্রিন টি ব্যাগ দিয়ে ৭-১০মিনিটের জন্য ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রেখে দিন। এবার ঢাকনা খুলে টি ব্যাগ তুলে ঐটা ঠাণ্ডা হবার জন্য রেখে দিন। ঠাণ্ডা হলে তাতে ২ফোঁটা টি ট্রি অয়েল আর ২ফোঁটা আরগান অয়েল দিয়ে নিশ্চিন্তে এক সপ্তাহের জন্য টোনার হিসেবে ব্যবহার করুন। আর যদি ড্রাই স্কিন হয় তাহলে টি ট্রি অয়েলটা বাদ দিবেন আর দুই ফোঁটার জায়গায় চার ফোঁটা আরগান অয়েল দিবেন।
৩) এক্সফোলিয়েটিং
৩টেবিল চামচ বেসনের সাথে ২-৩ফোঁটা আরগান অয়েল, আর পরিমাণ মতো সাধারণ পানি বা গোলাপজলের সাথে মিক্স করে এক্সফোলিয়েটিং স্ক্রাব তৈরি করতে পারেন। স্কিনের ডেডসেলস দূর করে স্কিনের ব্রাইটনেস বাড়াবে।
৪) একনে আর স্ট্রেচমার্কসের দাগ দূর করতে
অ্যাকনে আর স্ট্রেচমার্কসের দাগ দূর করার জন্য ও আরগান অয়েলের জুড়ি নেই। প্রতিদিন রাতে স্পটের জায়গাগুলোতে দুই-তিন ফোঁটা আরগান অয়েল ম্যাসাজ করুন। মাস তিনেক থেকে ছয়ের মধ্যে ডেফিনিটলি দাগ দূর হবে।
৫) কাটাছেঁড়ায়, পোকামাকড় কামড়ালে, রেজর বার্নে অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে
কাটাছেঁড়া অথবা রেজর বার্নে অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে আরগান অয়েল নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন। এর অ্যান্টি হিলিং প্রোপার্টি স্কিনকে ডিপলি পেনিট্রেশন করে।
৬) ঠোঁটের যত্নে
শুধু এক ফোঁটা আরগান অয়েল আপনার ঠোঁটের ময়েশ্চারকে ধরে রাখবে, ফাটাভাব আর কালচে ভাব দূর করবে ।
৭) ফুল বডি ময়েশ্চারাইজার
আপনার পছন্দের যেকোন তেল (নারকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল) নিয়ে তাতে দুই ফোঁটা আরগান অয়েল মিক্স করে নিশ্চিন্তে ফুল বডি ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করুন। হাত-পা ফাটার সমস্যা যাদের আছে তারা ও এভাবে ব্যবহার করলে অবশ্যই ভালো ফল পাবেন।
৮) লিভ ইন কন্ডিশনার
কয়েক ফোঁটা আরগান অয়েল কিন্তু আপনার পুর চুলে লিভ ইন কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য যথেষ্ট। এমনকি আপনি হেয়ার স্টাইলিং এর আগে, কার্ল বা স্ট্রেইট করতে চাইলে তার আগে হিট প্রোটেক্টেন্ট স্প্রে তৈরি করতে আরগান অয়েল ব্যবহার করতে পারেন নিশ্চিন্তে। তার জন্য যেটা করতে হবে সেটা হলো ৫০এম এল গোলাপজল, ২চা চামচ নারকেল তেল, ১টা ভিটামিন ই ক্যাপসুল আর ২ফোঁটা আরগান অয়েল ভালোভাবে মিক্স করে একটা পরিষ্কার খালি স্প্রে বোতলে ভরে ফেলতে হবে। এবার ৮-১০ইঞ্চি দূরত্বে এই স্প্রে বোতল ধরে পুর চুলে স্প্রে করে নিন, আর চুলের কোন প্রকার ক্ষতির ভয় ছাড়াই করে ফেলুন হেয়ার স্টাইলিং।
৯) অ্যান্টি এইজিং সিরাম হিসেবে
আরগান অয়েলে ন্যাচারাল অ্যান্টি এইজিং প্রোপার্টি আছে, তাই বয়স যখন ত্রিশের কোঠা পেরিয়ে যায়, তখন প্রতিদিন রাতে অ্যান্টি এইজিং সিরাম হিসেবে নিশ্চিন্ত মনে দুই-তিন ফোঁটা আরগান অয়েল মেখে ঘুমিয়ে যান।
স্কিন ক্যাফে আরগান অয়েল ব্যবহারে যা যা ভালো লেগেছে-
(১) প্যাকেজিং
এর কালচে খয়েরী রঙের ড্রপারসহ ঢাকনার বোতলটা আমার খুব পছন্দের। ড্রপার থাকায় ফোঁটায় ফোঁটায় খুব সহজেই যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই তেল বের করে নেয়া যায়।
(২) মাল্টিপারপাস এবিলিটি
স্কিন হোক, আর হেয়ার হোক, ডেইলি ৪-৫ফোঁটা আরগান অয়েল হলেই যথেষ্ট।
(৩) কনসিস্টেন্সি এবং স্মেল
তেল টার কনসিস্টেন্সি বেশ ঘন, যার কারণে পরিমাণে খুবই কম লাগে। আর এর হালকা মিষ্টি স্মেলটাও আমার ভীষণ পছন্দের।
তেলটির যা ভালো লাগেনি-
সত্যি কথা বলতে কী এই প্রোডাক্টটার ভালো লাগে নি অংশে লেখার মতো আমি তেমন কিছু খুঁজে পাচ্ছি না।
সব মিলিয়ে আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে স্কিন ক্যাফে আরগান অয়েল একেবারেই পয়সা উসুল একটা পণ্য! দেশের বেশ কিছু বড় বড় কসমেটিক্সের দোকানে, অনলাইন শপগুলোতেও যমুনা ফিউচার পার্ক আর সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত সাজগোজ শপে পেয়ে যাবেন এই তেলটি। চাইলে বাসায় বসে অনলাইনেও অর্ডার করে দিতে পারেন। আরগান অয়েলটি সাজগোজ শপ এ পাবেন। আমি একটা বোতল কিনেছি প্রায় চার মাস হয়ে গিয়েছে। এখনো বেশ খানিকটা বাকি আছে। এরই মাঝে আরেকটা বোতল অর্ডারও করে ফেলেছি!
Stay Beautiful, Stay Gorgeous.
ছবিঃ সংগৃহীত – সাজগোজ.কম