“আরে বাহ!ফেস মাস্ক-টা এত ভালো! তাহলে তো কিনতেই হয়! আচ্ছা এখনই অর্ডার করে দেই। ২/১ দিনের মধ্যেই তো পেয়ে যাবো।”
২/১ দিন পর প্রোডাক্ট হাতে পেয়ে ২-৩ দিন ব্যবহারের পর মনে হল এটা আপনাকে স্যুট করছে না। তখন আর ফেলে রাখা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। বেশ কয়েক মাস পর যখন ড্রয়ার ক্লিন করতে যাবেন, তখন মনে পড়বে এটার কথা। কিন্তু ফেলে দেওয়া ছাড়া আর উপায় থাকবে না।
উপরের ব্যক্তিটি কি আপনি?? যিনি অনলাইনে হুট হাট বিজ্ঞাপন দেখেই ঝাপিয়ে পড়েন প্রোডাক্ট কিনতে। ভাবেন, এটাই আপনার জন্যে ভালো হবে! কিন্তু হুটহাট কেনার ফলে বেশ কিছু প্রোডাক্ট-ই শেষ পর্যন্ত ফেলে দিতে হয়। ফলে লাভের লাভ তো কিছু হয়ই না, উল্টো টাকাটা জলে যায়।
এজন্যে অনলাইনে স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কেনার সময় কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কী কী সাবধানতা? আসুন জেনে নেই।
[picture]
১. স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কেনার আগে সবচেয়ে বেশি যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো নিজের স্কিন টাইপ জানা। কারণ এতে কোন প্রোডাক্টটি আপনার স্কিনের জন্যে তৈরী তা বুঝতে পারবেন। কারন অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট আপনি দেখতে পাবেন। তো আপনি যদি আপনার স্কিন টাইপ না জানেন, তবে হুট করে একটা প্রোডাক্ট অর্ডার করে ফেললে পরে সেটা আর কাজে দেবে না।
২. স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কেনার আগে একটু রিসার্চ করে নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। নিজের স্কিন টাইপ জেনে, যে প্রোডাক্ট-টি আপনি অর্ডার করতে চাচ্ছেন, সেটা আপনার স্কিনের জন্যে বানানো কিনা সেটা বুঝতে পারবেন।
৩. অনলাইনে একজন একটা প্রোডাক্ট ভালো বলে রিভিউ দিলেই তালে পড়ে না নেচে প্রোডাক্ট-টা সম্পর্কে একটু যাচাই বাছাই করে নেওয়া ভালো। এক্ষেত্রে আপনার বন্ধু হতে পারে গুগল/ইউটিউব। সেখানে আপনি স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট-টির নাম লিখে সার্চ করলেই অসংখ্য রিভিউ পেয়ে যাবেন। এ থেকে ভালো ধারণা পাবেন।
৪. অনেকেই ভাবেন, কমদামী প্রোডাক্ট খারাপ। বেশী দামি প্রোডাক্টগুলো ভালো কাজ করে। তাই হুট করে অনেকগুলো টাকা খরচ করে এক একটা প্রোডাক্ট অনলাইনে অর্ডার করে ফেলেন। এটা কখনোই ঠিক না। বেশী দামি প্রোডাক্ট মানেই যে ভালো তা কিন্তু নয়। অনেক কমদামী প্রোডাক্ট-ও কিন্তু বেশী দামের প্রোডাক্ট-এর মতো সেইম কাজ করে। তাই প্রোডাক্ট-এর উপর প্রথমে রিসার্চ করতে হবে, এরপর এর দিকে হাত বাড়াতে হবে। কারণ, অনলাইনে রিজনেবল অনেক ভালো মানের প্রোডাক্ট-ই আপনি পাবেন।
৫. স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কেনার আগে এর উপাদানসমূহের দিকে নজর দেওয়া কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনলাইনে কিনছেন বলে সামনাসামনি আপনি ইনগ্রেডিয়েন্টস দেখতে পারবেন না। এক্ষেত্রেও একটু নেট ঘেটে দেখে নিতে হবে অথবা ফেসবুক পেজ থেকে কিনলে তাদের জিজ্ঞেস করে নিতে পারেন। যে কোনো ক্ষতিকর উপাদানযুক্ত (যেমন: প্যারাবেন) প্রোডাক্ট থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন। চেষ্টা করবেন হারবাল উপাদান সমৃদ্ধ (যেমন: কোকোনাট অয়েল, আর্গান অয়েল, নিম, রোজমেরি ইত্যাদি) প্রোডাক্ট কিনতে।
৬. অনলাইনে স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে সবসময় চেষ্টা করবেন বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট কিনতে। কারণ এটা আপনার স্কিন বলে কথা। তাই এটা সবসময় মাথায় রাখবেন, যে ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট আপনি আগে ব্যবহার করেছেন এবং ভালো ফল পেয়েছেন, ওই সকল ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট কেনার চেষ্টা করবেন। তবে আপনি যদি নতুন কোনো ব্র্যান্ড ট্রাই করতে চান, তবে ওই যে বলেছিলাম নেট থেকে আগে রিভিউ দেখে নেবেন। অনলাইনে প্রোডাক্ট কিনতে গেলে ইন্টারনেট-ই আপনার বড় বন্ধু।
৭. অনেক সময় অনলাইনে নকল প্রোডাক্ট বিক্রয় করে থাকে। তাই বিশ্বস্ত সাইট/পেজ থেকে স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কেনার চেষ্টা করবেন।
৮. প্রোডাক্ট টি আসল কি নকল তা কিন্তু প্রোডাক্ট এর প্যাকেজিং দেখেও অনেক সময় বোঝা যায়। যেহেতু সামনাসামনি দেখতে পারবেন না, তাই একটু গুগল করলেই জেনে যাবেন কোনো প্রোডাক্ট এর আসল নকলের পার্থক্য। আর এটির মাধ্যমেই প্রোডাক্ট এর প্যাকেজিং এর ছবি দেখে কিছুটা হলেও বুঝতে পারবেন। চাইলে কেনার আগে পেজ ওউনার-কে বার কোড স্ক্যান করে দেখাতে বলবেন।
৯. ফেসবুকে আমরা প্রায়ই দেখে থাকি রঙ ফর্সাকারী প্রোডাক্ট সেল করা হচ্ছে আর মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে তা কিনছে। এতে যে তারা তাদের স্কিনের বড় ধরনের ক্ষতি করে ফেলছে, তার খেয়াল কয়জনে রাখছে। মনে রাখবেন, ২ দিনের জন্যে ফর্সা হতে গিয়ে নিজের বড় ধরনের ক্ষতি করবেন না। তাই অনলাইনে এই সকল চটকদার বিজ্ঞাপন থেকে দূরে থাকুন। নিজের স্কিন-কে ভালোবাসুন, নিজেকে ভালোবাসুন।
এইতো জেনে নিলেন, অনলাইনে স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কেনার ব্যাপারে কিছু সাবধানতার কথা। আশা করছি আপনাদের জন্য হেল্পফুল হবে। ভালো থাকবেন।
লিখেছেন- জান্নাতুল মৌ