ফল রাজ্যের রাজার কথা আমরা সবাই জানি কিন্তু সেই রাজ্যের স্বর্ণকুমারীকে জানেন? অনেকেই জানেন না। আচ্ছা, ধাঁধাঁ ধরলে বলতে পারবেন? বলুন তো-“ বন থেকে বেড়োলো টিয়ে , সোনার টোপর মাথায় দিয়ে”– এর উত্তর কি? এইতো, ঠিক ধরেছেন, মজার ধাঁধাঁটির উত্তর হবে- আনারস! এই আনারসকেই বলা হয়ে থাকে স্বর্ণকুমারী। কি সুন্দর সোনালী বরণ পাকা পাকা রসালো আনারস! দেখলেই জিভে যেন জল চলে আসে। আনারস খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি এর রয়েছে নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা।
আনারস ভিটামিন এ,বি ও সি এর একটি উৎকৃষ্ট উৎস। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ব্রোমেলেইন, বিটা-ক্যারোটিন, মিনারেল, শর্করা, ফাইবার, আয়রন, প্রোটিন ও সহজপাচ্য ফ্যাট খুবই অল্প পরিমাণে। এছাড়া প্রতি কেজি আনারস থেকে প্রায় ৫০০ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। অর্থাৎ নানান পুষ্টিতে সমৃদ্ধ এই স্বর্নকুমারী আনারস। চলুন তবে জেনে নেই এর কিছু পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।
(১) আনারস একটি রুচিবর্ধক ফল। তাই, মুখে রুচি না পেলে আনারস খান।
(২) ছোটবেলায় কৃমি হবার কথা শুনলেই দাদী-নানী বলতেন, সকালে খালি পেটে আনারস খেলেই কৃমি খতম! আসলে, আনারস হল প্রাকৃতিক কৃমিনাশক। এছাড়া, শুনে অবাক লাগবে যে, আনারসের পাতাও কৃমি দূর করতে সক্ষম। কয়েকদিন, খালি পেটে অর্থাৎ সকালে ঘুম থেকে উঠেই ২ চা চামচ আনারসের পাতার রস খেলেও কৃমির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু খালি পেটে আনারশ খাবেন না একদম। অ্যাসিডিটি হয়।
(৩) আনারস –এ প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকায় এবং এতে ফ্যাট-এর পরিমাণ একেবারেই কম হওয়ায় এই ফল ওজন কমাতে সহায়ক।
(৪) দেহের হাড় এবং মাড়িকে মজবুত রাখতে আনারসের কিন্তু জুড়ি নেই। কারণ এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম, মিনারেলস, ম্যাংগানিজ ও ভিটামিন থাকে। মুখের ভেতরের জীবাণুর আক্রমণ রোধ করে।
(৫) আনারস ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। আনারস দেহের চামড়া কুচকে যাওয়া প্রতিরোধ করে থাকে ভিটামিন সি এর মাধ্যমে। এছাড়া আনারস ত্বকের অতিরিক্ত তেল কাটিয়ে ব্রনের ঝামেলা থেকেও রেহাই দেয়।
(৬) চুল পড়ার সমস্যায় নেই আজকাল এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। এই সমস্যার সমাধান দিচ্ছি! আনারস খেলে চুল পড়া কমে যায়। কারণ , আনারস এ প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, মিনারেল ও আয়রন রয়েছে।
(৭) হজমে সমস্যা? তার সমাধানেও আনারস। পেট ফাঁপা বা বদহজম হলে কয়েক টুকরো আনারস, লবণ ও গোল মরিচে মেখে খেয়ে নিন। খেতেও দারুণ লাগবে আর পেটের সমস্যাও দূর হয়ে যাবে।
(৮) হুটহাট করেই আজকাল বৃষ্টির কবলে পড়তে হয়। সিজন চেঞ্জ তারপর গরম এমন মৌসুমে জ্বর তো প্রতি ঘরে ঘরে। এই ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরে শরীর ব্যাথায় আনারস অনেক উপাদেয়। কারন আনারসে এক প্রকার প্রদাহনাশক এনজাইম রয়েছে। সেই সাথে ভিটামিন সি তো আছেই।
(৯) ম্যাকুলার ডিগ্রেডেশন রোগে আক্রান্ত হলে আমাদের চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে দৃষ্টিহীনতার শিকার হতে হয়। আনারসে বিদ্যমান বিটা-ক্যারোটিন এই অন্ধত্বের হাত থেকে বাঁচায়। প্রতিদিন যদি এক কাপ পরিমান আনারসের জুস বা সমপরিমাণ আনারস খাওয়া যায় তবে এই রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা প্রায় ৩০% কমে যায়।
তাছাড়া দিনের শেষে যখন ক্লান্তি ভর করে আপনাকে দমিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে, তখন আনারসই আপনাকে ফিরিয়ে দিবে সকল এনার্জি। এই সিজনে তাই প্রতিদিন ঘরে আনারস রাখুন। আনারস খেতে পারেন জুস করে কিংবা সালাদে। স্বাদ গ্রহণের পাশাপাশি দেহের খনিজ পদার্থের অভাব মিটিয়ে নেয়ার সময় এখনই।
লিখেছেন- শিফাত আরা সঞ্চা