শীতের সময় বেশির ভাগ মানুষই ডালনেস, খুশকি সহ আরও অনেক চুলের সমস্যায় জর্জরিত থাকে। বিশেষ করে শীতকালে শ্যাম্পু করার পরদিনই চুল কেমন যেন চিটচিটে হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে ধূলো বালি খুব সহজে আটকে যায় আর শুরু হয় চুল পড়া, ড্যামেজ হওয়ার মত হাজার সমস্যা। সঙ্গে সঙ্গে চুলের ভলিউম বাড়িয়ে চুল আরও খসখসে ও রুক্ষ করে তোলে। শীতের রোদ মিষ্টি লাগলেও সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাব, পলিউশনের কারণে চুল ফ্রিজি হয়ে যায়। সৌভাগ্যক্রমে কিছু ঘরোয়া উপাদানের মাধ্যমে আমরা শীতে রুক্ষ, নির্জীব চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি। আমাদের হেয়ার ফলিকলসের মধ্যে থাকে ন্যাচারাল অয়েল (সেবাম), যা স্ক্যাল্প ভালো রাখে। হেয়ার কন্ডিশনার চুলে সেবাম ব্যালান্স বজায় রাখে। এই ঘরোয়া কন্ডিশনার ড্যামেজ চুলেকে মোলায়েম, মসৃণ আর রিজুভিনেট করে। তবে আগেই বলে রাখি সব গুলো রেসিপি ট্রাই করার দরকার নেই। আপনার পছন্দ ও উপকরণের প্রাপ্যতা অনুযায়ী যেকোনো একটি বেছে নিন। আরেকটি মজার কথা আপনাদের সাথে শেয়ার না করলেই নয় বাজার থেকে কেনা কন্ডিশনার আমরা সাধারণত শ্যাম্পু করার পর ব্যবহার করি কিন্তু ঘরে তৈরি বেশির ভাগ কন্ডিশনারই আমরা আগে চুলে লাগাই তারপর শ্যাম্পু করি বা পানি দিয়ে শুধু ধুয়ে ফেলি।
গ্লিসারিন কন্ডিশনার
শুষ্ক চুলের পাঠিকারা এই কন্ডিশনারটি ব্যবহার করবেন। ১টি পাকা কলা, ৪ টেবিল চামচ যেকোনো চুলের তেল, ৪ টেবিল চামচ মধু, ৪ টেবিল চামচ গ্লিসারিন। সব গুলো উপকরণ এক সাথে ব্লেন্ডারে ব্লেণ্ড করুন। তারপর পরিষ্কার চুলে লাগিয়ে মাথায় শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল ঢেকে ফেলুন। ৩০ মিনিট পর চুল ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন চুল নরম ও মোলায়েম হয়ে উঠেছে।
নারকেল তেলের কন্ডিশনার
এই কন্ডিশনারটি তৈরি করার জন্য লাগবে ১ কাপ পানি, ১টি ডিমের কুসুম, ১ চা চামচ নারকেলের তেল। একটি বাটিতে ডিমের কুসুম নিয়ে খুব ভালো ভাবে ফেটিয়ে নিন, ফেনা হয়ে উঠলে নারকেল তেল মিশিয়ে আরও কিছুক্ষণ ফেটান। এর সাথে পানি মিশিয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেটান যতক্ষণ পর্যন্ত না মিশ্রণটি স্মুদ হয়ে যায়। এই কন্ডিশনারটি চুলে ম্যাসাজ করে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন ৩০ মিনিটের মত। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তেল চুলের স্কাল্পকে কন্ডিশন করে আর ডিমে থাকে বায়োটিন নামের এক ধরনের নিউট্রিয়েনট, যা চুলের গোড়া মজবুত করে। এই কন্ডিশনার তৈলাক্ত চুলের অধিকারীরা ব্যবহার করতে পারেন।
অলিভ অয়েলের ডিপ কন্ডিশন
শীতে যদি দেখেন চুল প্রাণহীন হয়ে উঠছে তবে সপ্তাহে অন্ততপক্ষে একবার হালকা গরম অলিভ অয়েল চুলে ভালো ভাবে ম্যাসাজ করে লাগান। এভাবে ২/৩ ঘণ্টা চুলে তেল লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করুন। তারপর দেখবেন শাইনি আর স্বাস্থ্যকর চুলের বাহার।
হানি কন্ডিশনার
১/২ কাপ মধু, ৪ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল। এই ২টি উপাদান এক সাথে মিশিয়ে কোন বোতলে ভরে রাখুন। তারপর গোসলের আগে চুলে লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে মাথাটি ঢেকে ৩০ মিনিট রেখে দিন। এরপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
মেয়নিজ কন্ডিশনার
চুল ডিপ কন্ডিশন করার কাজে মেয়োনিজের চেয়ে সস্তা আর উপকারী উপাদান আর কিছুই নেই। ১ কাপ মেয়োনিজ ( চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী ), ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, ১ টেবিল চামচ বাদামের তেল নিন। তারপর ভালো ভাবে মিশিয়ে মিশ্রণটিকে ১৫ মিনিট এভাবেই রেখে দিন। উপাদানগুলো যেন আরও ভালো ভাবে মিশে যায়। এরপর চুলের গোড়ায় ম্যাসেজ করে লাগিয়ে নিন।
কলা লেবুর কন্ডিশনার
৪ টেবিল চামচ ম্যাসড পাকা কলা নিন এর সাথে এক চামচ মধু আর ১ চা চামচ জাম্বুরা বা লেবুর রস নিন। এবার খুব ভালো করে মিশিয়ে নিন উপকরণ গুলো। তৈরি হয়ে গেল আপনার হেয়ার কন্ডিশনার। গোসলের ৩০ মিনিট আগে চুল সহ স্কাল্পে ম্যাসেজ করুন। তারপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
নারকেল দুধের কন্ডিশনার
১টি এভোক্যাডো, ১ কাপ নারকেলের দুধ, ২ টেবিল চামচ নারকেলের তেল। এভোক্যাডোর খোসা ছাড়িয়ে ম্যাস করে নিন। এর সাথে নারিকেলের দুধ এবং নারিকেল তেল মিশিয়ে স্মুদ একটি মিক্সচার তৈরি করে নিন। পুরো চুলে লাগিয়ে নিন এটি। ডিপ কন্ডিশনের জন্য ৩০ মিনিট চুলে লাগিয়ে রাখবেন। তারপর চুল শ্যাম্পু করে ফেলুন। এভোক্যাডো নামক ফলটি আমাদের দেশে সব জায়গায় পাওয়া যায় না তাই যারা দেশের বাইরে আছেন তারা চাইলে রেসিপিটি ট্রাই করতে পারেন। আপনার চুলের ধরন যদি নরমাল হয়ে থাকে তবে এই কন্ডিশনারটি আপনারই জন্য।
সিয়া বাটার কন্ডিশনার
শীতে চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়ার কারণে দুমুখো চুল দেখা দেয়। অর্থাৎ চুলের আগা ফেটে যায়। সিয়া বাটারকে চুলের আগা ফাটার ডাক্তারও বলা চলে। পরিমাণে অল্প একটু নিলেই চুলের কন্ডিশনের কাজ হয়ে যায়। যদিও এই বাটারটি আমার বাংলাদেশে বসবাসকারী পাঠিকাদের জন্য পাওয়া একটু কষ্টকর হয়ে যাবে তবুও রেসিপিটি দিলাম যেন দেশের বাইরে থাকা পাঠিকারা ব্যবহার করতে পারেন। ১ ১/৩ কাপ সিয়া বাটার, ১/২ কাপ অলিভ অয়েল, ১ চা চামচ ভিটামিন ই অয়েল। মিডিয়াম সাইজের একটি সস প্যানে সিয়া বাটার গরম করুন যতক্ষণ পর্যন্ত না গলে যায়, এরপর এর সাথে অলিভ অয়েল মিশান। ৩০-৪০ মিনিট সময় দিন এটি ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য। কিন্তু খেয়াল রাখবেন মিশ্রণটি যেন জমে না যায়। এখন ভিটামিন ই অয়েল মিশিয়ে নাড়তে থাকুন। মুজের মত ঘনত্ব হলে ব্যবহার করুন বাকিটা এয়ার টাইট কন্টেইনারে সংরক্ষণ করুন।
এলো ডিপ কন্ডিশনার
যারা তাদের চুল সুপার সফট করতে চান তারা এই কন্ডিশনারটি ট্রাই করে দেখতে পারেন। ১/৪ কাপ এ্যালোভেরা জেল, ১/৪ কাপ নারিকেলের তেল অথবা অলিভ অয়েল। এই ২ টি উপাদান একসাথে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
আমরা সবাই বিভিন্ন ব্র্যান্ড এর কন্ডিশনার ব্যবহার করে থাকি। অনেক সময় আশানুরূপ ফল পাইনা। তাই এই শীতেও ঝলমলে স্বাস্থ্যজ্জল চুলের জন্য প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে নিজের কন্ডিশনার নিজেই বানিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিন।
লিখেছেন – রোজেন
ছবি – এডিটরসটপ ডট কম