যারা সারাদিন বাইরে থাকেন, তাদের এক দিন অন্তর অন্তর মাস্ক লাগানো উচিত। এতে করে মুখের পিগমেনটেশন দূর হবে, রোদে পোড়া দাগ কম হয়ে যাবে। আর যারা বাসায় থাকে তারা সপ্তাহে অন্তত একবার মুখে মাস্ক দিতে পারেন। তবে ত্বক বুঝে মাস্ক দেওয়া উচিত। মাস্ক অনেক রকম হতে পারে। বলিরেখার জন্য মাস্ক, রোদের দাগ দূর করার মাস্ক, ব্রণ কমানোর মাস্ক, ত্বক উজ্জ্বল করার মাস্ক আরও কতো কী! কারো স্কিন শুষ্ক আবার কারো স্কিন অয়েলি। তাই ত্বকভেদে যত্ন নিতে মাস্ক নির্ধারণ করতে হবে। এখন আসা যাক, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরে বসে কিভাবে ত্বকভেদে যত্ন নিতে মাস্ক বানিয়ে নিবেন?
ত্বকভেদে যত্ন নিতে ফেইস মাস্ক
মাস্ক ব্যবহারের আগে ফেইস স্ক্রাব করে নিন
প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো ত্বকভেদে যত্ন নিতে মাস্ক দেওয়ার আগে মুখটিকে স্ক্রাব (Scrub) করে নেওয়া ভালো। বাসায় বসে চিনি, চালের গুড়া, মধু দিয়ে স্ক্রাব বানিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে পারবেন। বেসন অথবা চালের গুড়া প্রতিদিনের ফেইস ওয়াশ (Face wash)-এর বদলেও ব্যবহার করতে পারবেন।
আসুন এবার দেখে নেই ফেইস মাস্ক বানানোর নিয়ম!
১) হলুদের মুখের মাস্ক
২ টেবিল চামচ বেসন, ১ টেবিল চামচ হলুদ বাটা, ১ মধু মিশিয়ে মুখে এবং ঘাড়ে দিবেন। ১৫ মিনিট রাখবেন। এতে করে মুখ উজ্জ্বল হবে। মুখের দাগ দূর করবে।
২) অয়েলি এবং নরমাল স্কিন-এর মাস্ক
১. ডিমের মাস্ক
ডিমের সাদা অংশ, মধু, লেবু ভালো করে বিট করে মুখে লাগিয়ে রাখবেন ১৫ মিনিট। এতে করে মুখের রোদে পোড়া দাগ চলে যাবে, মুখ ফর্সা হবে। ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডস চলে যাবে।
২. টক দই-এর মাস্ক
ডাল বাটা, চন্দন গুঁড়ো, টক দই-এর মাস্ক তৈরি করে মুখে লাগিয়ে রাখুন যতক্ষণ না শুকায়। এতে করে মুখের ময়লা ভেতর থেকে পরিষ্কার হয়ে যাবে। ত্বক অনেক লাবণ্যতা আসবে এবং মুখের অপ্রয়োজনীয় তেল দূর হবে।
৩. কমলার মাস্ক
কমলা লেবুর খোসা শুকিয়ে গুঁড়ো করে, সেটাতে চন্দন গুঁড়ো, মুলতানি মাটি, মধু দিয়ে মাস্ক বানিয়ে দিলে মুখের দাগ দূর হয়, নতুন করে ব্রণ গজাতে পারে না, মুখের লোমগ্রন্থি ছোট হয়ে যায়।
৩) শুষ্ক ত্বকের মুখের মাস্ক
শুষ্ক ত্বকে খুব তাড়াতাড়ি বলিরেখা পড়ে। তাই এমন কিছু দিয়ে মাস্ক করা উচিত যেটা বলিরেখা কমায়। যেমন গাজর, টমেটো, স্ট্রবেরি ইত্যাদি। ডিমের সাদা অংশ ও মুখের বলি রেখা কমাতে সাহায্য করে। শুষ্ক ত্বকের সব মাস্ক-এই বাদামের তেল দেওয়া যায়। বাদামের তেল বলিরেখা দূর করে, ত্বক কোমল করে।
১. ফ্রুট মাস্ক
গাজর, টমেটো, কমলার রস করে তার সাথে চালের গুঁড়ো মিলিয়ে মুখে লাগান। দেখবেন মুখ কতো উজ্জ্বল হয়ে গিয়েছে। কলা এবং মধু দিয়ে মাস্ক তৈরি করে মুখে দিতে পারেন। মুখ কোমল হয়ে যাবে।
২. অ্যালোভেরা মাস্ক
অ্যালোভেরা ত্বকের জন্য খুব জনপ্রিয়। অ্যালোভেরার জেল বের করে, মধু মিক্সড করে মুখে লাগিয়ে রাখবেন। মুখের দাগ, ত্বকের ছোপ ছোপ দাগ চলে যাবে।
৪) মুখ ফর্সা করার মাস্ক
১. টক দই মাস্ক
২ চামচ টক দই, ১ চামচ মধু, ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিক্সড করে মুখে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এটা আপনি সপ্তাহে ২ বার করতে পারবেন।
২. হলুদের মাস্ক
১ চামচ হলুদ বাটা, ৩ চামচ গোলাপ জল, ১ চামচ চন্দন গুঁড়ো, ১ চামচ সয়াবিন গুঁড়ো মিক্সড করে মুখে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট।
৩. দুধের মাস্ক
২ চামচ গুঁড়ো দুধ, ১ চামচ মধু, ২ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মুখে দিন। মুখ ফর্সা হবে।
৫) ব্রণ দূর করার মাস্ক
১. ডিমের মাস্ক
৪ টেবিল চামচ লেবুর জুস, ৩ টেবিল চামচ টক দই, ২ টেবিল চামচ মধু, ১ টি ডিমের সাদা অংশ মিক্সড করে মুখে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। এতে করে খুব তাড়াতাড়ি ব্রণ চলে যাবে।
২. নিমের মাস্ক
২ চামচ নিম পাতা গুঁড়ো, ১ টেবিল চামচ চন্দন, ১ টেবিল চামচ অরেঞ্জ পিল মিক্সড করে মুখে লাগিয়ে রাখুন ২৫ মিনিট। লাগালে ব্রণ চলে যাবে
৩. বেসনের মাস্ক
৩ টেবিল চামচ বেসন এবং ৩ টেবিল চামচ টক দই মিক্সড করে মুখে দিন। খুব সহজ উপায় ব্রণ দূর হবে।
খেয়াল রাখতে হবে সবগুলো উপাদানে যেন প্রাকৃতিক উপায় তৈরী করা, কোন প্রকার এক্সট্রা উপাদান না দেওয়া থাকে।
৬) মুখের পোর ছোট করার মাস্ক
অতিরিক্ত তেল মুখ থেকে বের হলে আমাদের মুখের পোর (লোম গ্রন্থি) বড় হয়ে যায়। একটু বয়স হলেও মুখের পোর বড় হয়ে যায়। এর জন্য বাইরে থেকে ঘরে আসলে মুখে ২/১টি বরফ কুচি ঘষে নিলে পোর সাইজ ছোট হয়ে আসে। মুখ থেকে তেল বের হতে পারে না। মুখের পোর ছোট করারও কিছু মাস্ক আছে। কিন্তু অনেকেই আজকাল ডিস্প্রিন মাস্ক, বেকিং সোডার মাস্ক দেয়। কিন্তু আমি মনে করি এতে সাময়িকভাবে পোর সাইজ ছোট হলেও, মুখের ব্রণের দাগ দূর করলেও, পরে স্কিন-এ অনেক সমস্যা করে। ত্বকের রঙ কালো করে ফেলে। তাছাড়া ডিস্প্রিন অথবা বেকিং সোডা ক্ষার জাতীয়, তাই মুখে এসব দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট না করাই ভালো।
১. ডিমের মাস্ক
ডিমের সাদা অংশ এবং লেবুর রসের মাস্ক পোর সাইজ ছোট করে।
২. অ্যাপেস সাইডার ভিনেগার মাস্ক
১ চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার (Apple Cider Vinegar), ১ চামচ মধু মিক্সড করে মুখে লাগিয়ে রাখুন। সপ্তাহে ২ বার এই মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
৩. অ্যালোভেরা মাস্ক
অ্যালোভেরা জেল, ১ চামচ মধু মিক্সড করে মুখে লাগিয়ে রাখুন। এতে করে মুখ ফর্সা হবে, পোর-ও ছোট হবে আস্তে আস্তে।
৭) ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডস দূর করার মাস্ক
১. দারচিনি মাস্ক
আধা চামচ দারচিনি গুঁড়ো এবং ১ চামচ ময়দা মিক্সড করে মুখে লাগিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। মুখের সব ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডস দূর হয়ে যাবে। দারচিনিতে মুখ জ্বলতে পারে, লাল হয়ে যেতে পারে। ভয়ের কিছু নেই এটা কিছুক্ষণ পর সেরে যাবে।
২. ডিমের সাদা অংশ ও টিস্যু পেপার মাস্ক
যাদের নাকে অনেক ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডস আসে তারা ডিমের সাদা অংশ নাকে লাগিয়ে টিস্যু পেপার দিয়ে মুড়ে দিবেন। শুকিয়ে গেলে মাস্ক এর মত করে তুলে ফেলবেন। দেখবেন টিস্যু পেপারে ব্ল্যাকহেডস জমা হয়ে আছে
৩. টুথপেস্ট ও লবণ মাস্ক
টুথ পেস্ট আর লবণ মিশিয়ে নাকে লাগিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। তারপর ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন নাকে কোন ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডস নেই।
৮) দাগ দূর করার মাস্ক
শুষ্ক এবং নরমাল ত্বকের জন্য –
১. দুধ ও লেবুর মাস্ক
২ চামচ কাঁচা দুধ এবং ২ চামচ লেমন জুস মিক্সড করে মুখে লাগান প্রতিদিন। ফলাফল দেখুন ৭ দিনে, লেবুর রস দাগ দূর করার জন্য সব চেয়ে ভালো উপকরণ।
২. ডালের মাস্ক
২ টেবিল চামচ মসুর ডাল, ৩ চামচ কাঁচা দুধ, ১ চামচ বাদাম তেল। ১ চামচ নারিকেল তেল, সামান্য হলুদ বাটা মিক্সড করে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট পর মুখ ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন।
৩. জাফরান মাস্ক
দুধ এবং অল্প জাফরান নিয়ে গুলে,এই মাস্ক ব্যবহার করলে, তা দাগ দূর করার জন্য খুব ভালো।
অয়েলি ত্বকের জন্য –
১. অরেঞ্জ পিল মাস্ক
১ চামচ অরেঞ্জ পিল, ২ চামচ টক দই মিশিয়ে মুখে লাগান ১০ মিনিট। এটা আপনার মুখের ছোপ ছোপ দাগ দূর করবে। মনে রাখতে হবে টক দই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং ঘরে বানানো হতে হবে
২. শসার মাস্ক
শসার রস, লেবুর রস, ভিটামিন এ ক্যাপসুল মিশিয়ে মুখে লাগান, দাগ দূর হবে।
৯) চকলেট এবং কফি মাস্ক
এই মাস্কটা বাইরের দেশে অনেক পপুলার। এই মাস্ক দিলে মুখ হাইড্রেট (Hydrate) করে। বাইরের দেশে এই মাস্ক পার্লার-এ করতে অনেক টাকার প্রয়োজন পরে।
১. চকলেট মাস্ক
কোকো পাউডার ২চামচ, চিনি ১ চামচ, গুঁড়ো দুধ ২ চামচ, মধু ১ চামচ মিক্সড করে মুখে লাগান ১৫ মিনিট এর জন্য।
২. কফি মাস্ক
১ চামচ কফি, গুঁড়ো দুধ মিশিয়ে মুখে লাগান ১৫ মিনিট এর জন্য।
এই ২ মাস্ক মুখ ফর্সা করে ও পিগমেন্টেশন (pigmentation) দূর করে। সব স্কিন-এর জন্য প্রযোজ্য।
এই তো জানলেন ত্বকভেদে যত্ন কিভাবে হবে। সবশেষে ছোট টিপস দেই, রাতে ঘুমাবার আগে মাস্ক দেওয়া ভালো। মাস্ক ধুয়ে টোনার লাগিয়ে ক্রিম দিয়ে শুয়ে পড়বেন। এতে করে ফলাফল খুব তাড়াতাড়ি পাবেন! যাই করুন না কেন রোদে গেলে সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না। যাদের রোদে বেশি যাওয়া হয় তারা হলুদ, লেবু এড়িয়ে চলুন অথবা ছুটির দিনে, রাতে মাস্ক লাগানো ভালো হবে তাদের জন্য। এখন থেকে ত্বকভেদে যত্ন হোক নিয়মিত ঘরোয়া উপায়ে।
এবার চলুন দেখে নেওয়া ত্বকভেদে যত্ন নিতে কিছু অথেনটিক প্রোডাক্টস যেগুলো কিনা পাচ্ছেন শপ.সাজগোজ.কম-এ!
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ; সাটারস্টক