ডায়েট সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের একটি অপরিহার্য অঙ্গ। বিশেষ করে আমার মতো যাদের অল্পতেই ওজন বাড়ার প্রবণতা রয়েছে তাদের তো এই ডায়েট নিয়ে চিন্তার অন্ত নেই। ডায়েটিশিয়ানদের মতে, সব ধরনের ডায়েট সবার জন্য না। আপনার শরীরের ওজন, উচ্চতা এবং শারীরিক পরিশ্রমের হারের উপর নির্ভর করে আপনার ক্যালরি চাহিদা। আবার কেউ চাইলেই খুব কম ক্যালরি বা খুব বেশি ক্যালরির ডায়েট বেছে নিতে পারবেন না। এটা নির্ভর করে শরীরের বর্তমান ওজন, শারীরিক অবস্থা- যেমন কোন রোগের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি, কোন নির্দিষ্ট ধরনের খাবারের প্রতি সেনসিটিভিটি ইত্যাদি। আজকে কথা বলবো ৯০০ ক্যালরি ডায়েট চার্টবা লো ক্যালরি ডায়েট নিয়ে। ডাক্তার অথবা পুষ্টিবিদের পরামর্শ ব্যতীত এতো কম ক্যালরীর ডায়েট অনুসরণ না করাই উত্তম। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে এবার দেখে নেই!
৯০০ ক্যালরি ডায়েট চার্ট নিয়ে যত কথা
যেহেতু এ ধরনের লো ক্যালরি ডায়েটে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমে যায় কাজেই এ ক্ষেত্রে মাছ, মাংস, ডিম, ফলের রস, স্যুপ, লো ফ্যাট দুধ, টকদই, ওটমিল এগুলো নিয়মিত খেতে হয়। এই ধরনের কম ক্যালরির ডায়েটের অনেক উপকারিতার সাথে সাথে বেশ কিছু অপকারিতাও আছে। যে এই ডায়েটটি মেনে চলবে তার এই ডায়েটের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে রাখা দরকার।
উপকারিতা
১) দ্রুত ওজন কমানো এই ধরনের ডায়েটের সবচেয়ে বড় সুবিধা।
২) দ্রুত ওজন কমানোর ফলে হাইপ্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ (high blood pressure), রক্তে কোলেস্টেরলের (cholesterol) মাত্রা বেড়ে যাওয়া, হার্টের সমস্যাসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ এড়িয়ে চলা সম্ভব।
অপকারিতা
উপকারিতার পর এখন এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে কথা বলা যাক। তা হলো-
১) ডাক্তার বা ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে কখনোই এ ধরনের লো ক্যালরী ডায়েট শুরু করা উচিত না।
২) হঠাৎ করে ব্লাড প্রেশার বা ব্লাড সুগার নেমে যাওয়ার মতো তাৎক্ষণিক লক্ষণের পাশাপাশি চুল পড়ে যাওয়া, চামড়া রুক্ষ হয়ে যাওয়া বা চামড়ার লাবণ্যতা কমে যাওয়ার মতো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
৩) সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যাপারটি হলো–
- শরীর ক্রমশ দুর্বল হয়ে যাওয়া
- কাজের প্রতি অনাগ্রহ
- সবসময় ঝিমুনি ও খিটখিটে ভাব
মনে রাখবেন অতিরিক্ত বেশি ওজন যেমন শরীরের জন্য ক্ষতিকর, অতিরিক্ত কম ওজনও কিন্তু তাই।
৯০০ ক্যালরি ডায়েট চার্ট করার ক্ষেত্রে কিছু ফ্যাক্টর
৯০০ কিলোক্যালরি ডায়েট প্ল্যান করার সময় নিচের ফ্যাক্টরগুলো খেয়াল রাখতে হবে। তবে চলুন সেই ফ্যাক্টরগুলো সম্পর্কে জেনে নেই!
১) প্রোটিন গ্রহন
যেহেতু শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট কম গ্রহণ করা হচ্ছে কাজেই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডাল গ্রহনের প্রতি জোর দিতে হবে। প্রতিদিনই ডিম এবং দুধ অবশ্যই খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
২) ভিটামিন ও মিনারেলস
নিয়মিত ভিটামিন ও মিনারেলস সমৃদ্ধ শাকসবজি ও ফল খেতে হবে।
৩) আদর্শ খাদ্য তালিকা
খাদ্যগোষ্ঠীর ৬টি গ্রুপ যেমন- শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন, মিনারেলস ও পানি থেকেই খাবার নির্বাচন করতে হবে। এর মধ্যে এই লো ক্যালরি ডায়েটে শর্করা জাতীয় খাবার ভাত, রুটি, পাউরুটি, নুডলস ইত্যাদি পরিমিত পরিমাণে খেতে হয়।
৪) প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার
রেডি টু ইট বা প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ বেশিরভাগ সময়েই এসব খাবারে অতিরিক্ত লবণ যোগ করা থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
৫) সবজি
সবজি যতটা সম্ভব কম তেল দিয়ে রান্না করতে হবে। সিদ্ধ করে স্যুপ হিসেবে খাওয়া সবচেয়ে ভালো। সবজির মধ্যে আলু বাদ দেয়া ভালো। কারণ মাটির নিচের উদ্ভিদ বলে প্রাকৃতিকভাবেই আলুতে শর্করা বা সুগারের পরিমাণ বেশি।
৬) তেল বা সস ব্যবহার
মাছ বা মাংসে অতিরিক্ত তেল, মশলা বা সস ব্যবহার করা যাবে না।
৭) ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলতে হবে
যে কোন ধরনের ফাস্ট ফুড (যেমন–বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ইত্যাদি) কোল্ড ড্রিংকস, আইসক্রিম, নারিকেল, বাদাম, কাজুবাদাম, আলু, মিষ্টি আলু, শুকনা ফল (যেমন– খেজুর, খোরমা, কিসমিস) বাদ দিতে হবে।
৮) টক জাতীয় ফল
প্রতিদিন অন্তত ১টি টক জাতীয় ফল খেতে হবে। সেটা হতে পারে আমলকি, মাল্টা, কমলা, পেয়ারা ইত্যাদি।
সারাদিনে ৯০০ কিলোক্যালরির ডায়েট প্ল্যান
এবার দেখে নেয়া যাক ৯০০ কিলোক্যালরির ডায়েট প্ল্যানটি কেমন হতে পারে! নিম্নে সকাল, দুপুর, বিকাল, রাত ও ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কী কী খাবার খাওয়া উচিত তা দেয়া হলো-
সকাল (৭–৮) টার মধ্যে
১) লাল আটার রুটি- ১টি
২) বাটি সবজি (আলু বাদে–কম তেলে রান্না করা)- ১/২ বাটি
৩) ডিম সিদ্ধ- ১টি
এর সাথে ফলের সালাদ (সকাল ১১-১১;৩০ এর দিকে) খাবেন। তবে হ্যাঁ, পাকা আম এবং পাকা কলা বাদ দেওয়াই ভালো।
দুপুরে (১–২) টার মধ্যে
১) ভাত –১/২ কাপ
২) ডাল –১/২ কাপ
৩) মাছ/মাংস– ২ টুকরা (ঝোল বাদে)
৪) সালাদ –১ কাপ
বিকালে (৫–৬) টার মধ্যে
আলু বাদে (২–৩) ধরনের সবজির স্যুপ খেতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় সবজি সিদ্ধ করে অল্প করে লবণ ছিটিয়ে স্যুপটি খেতে পারলে।
রাত (৮–৯) টার মধ্যে
- কর্ন ফ্লেক্স – ১/২ কাপ
- বা ওট্স (সিদ্ধ করা –সবজি, চিকেন বা দুধ দিয়েও খেতে পারেন)
ঘুমানোর আগে
টক দই বা লো ফ্যাট দুধ – ১/২ কাপ
যারা খুব কম সময়ের মধ্যে বেশ খানিকটা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য এই লো ক্যালরি ডায়েট উপকারী হলেও এর সাথে নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটাও বেশ জরুরি। স্কিপিং, ফ্রী হ্যান্ড এক্সারসাইজ বা যোগব্যায়াম দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে। আপনার সুস্থতা কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি।
ছবি- সংগৃহীত: endocrinologyadvisor, Shutterstock