রূপচর্চার কথা মনে হলে একটা কমন ছবি আমাদের সবার চোখেই ভাসে যে মুখে ফেইসপ্যাক আর সাথে চোখের উপর গোল করে কাটা শসার টুকরা! তাই না? শসা কি শুধুই চোখের নিচের ফাইন লাইনস, পাফিনেস, ডার্ক সার্কেল দূর করার জন্য ব্যবহার করা হয়? না, এর বেনিফিট এতটাই বেশি যে বিভিন্ন স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টেও কিন্তু শসা বা Cucumber এক্সট্র্যাক্ট থাকে। স্কিনের ডালনেস, ইরিটেশন ও সানবার্ন দূর করতে দারুণ কার্যকরী এটি। অনেকেই হয়তো জানি, আবার অনেকেই জানি না। তাই এই জানা অজানার কনফিউশন বাদ দিয়ে চলুন এখন একটু ডিটেইলসে জেনে নেই।
শসার স্কিনকেয়ার বেনিফিটস
প্রথমেই এক নজরে দেখে নিন Cucumber বা শসার স্কিনকেয়ার বেনিফিটস।
১. স্কিনের পাফিনেস কমায় শসা, কারণ এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন সি। সাথে সাথেই স্কিনে রিফ্রেশিং ফিল এনে দেয়।
২. এতে থাকা হাই ওয়াটার কনটেন্ট (৯৬%) স্কিনের একনে ব্রেকআউটস কমায় এবং পোরস টাইটেনিং করে। ফলে স্কিনের ডালনেস রিপেয়ার হয়ে স্কিন দেখায় ক্লিয়ার ও হেলদি।
৩. শসার আরেকটি উপকারী দিক হলো, এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে যা প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস প্রিভেন্ট করে। তাই ইয়াংগার লুকিং স্কিন পাওয়া যায় সহজেই।
৪. শসার অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপারটিজ স্কিনের জন্য খুবই বেনিফিসিয়াল এবং এর কুলিং ইফেক্ট স্কিনের ইরিটেশন কমায়।
৫. শসায় থাকা ভিটামিন সি ও ই স্কিনকে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করে। পাশাপাশি আপনার যদি সানবার্ন থাকে, সেটিও কমিয়ে আনে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন এই উপাদানটি?
হাইড্রেটিং মিস্ট
প্রথমে শসা স্লাইস করে কেটে নিন। এবার একটি স্প্রে বোতলে পানি ও শসার স্লাইস দিয়ে সারারাত রেখে দিন। পরের দিন ঘুম থেকে উঠে এই পানি ফেইসে স্প্রে করে নিন। এটি অনেকটা ফেইস মিস্টের মতো কাজ করবে। স্কিনের এক্সেস অয়েলিনেস দূর করবে ইনস্ট্যান্টলি। সেই সাথে স্কিনকে রাখবে হাইড্রেটেড।
স্কিনের ডালনেস রিপেয়ার করতে ফেইস মাস্ক
আগেই বলেছি শসায় প্রায় ৯৬% পানি থাকে, তাই স্কিনের ডালনেস রিপেয়ার করে সুদিং ফিল দিতে এটি বেশ কার্যকরী। একটি ছোট শসা স্লাইস করে ব্লেন্ডারে স্মুথ পেস্ট বানিয়ে নিন। সাথে ২ চা চামচ অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে নিন। এবার ক্লিন ফেইসে এই মাস্ক লাগিয়ে নিন, ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ব্যস, ইনস্ট্যান্টলি পেয়ে যাবেন গ্লোয়ি ও ক্লিয়ার স্কিন!
সানবার্ন কমাতে ফেইস মাস্ক
যাদের ফেইসে ব্ল্যাক প্যাচেস বা সানবার্ন আছে, তারা স্কিনকেয়ারে ইনক্লুড করুন শসা! বিশেষ করে সেনসিটিভ ও একনে প্রন স্কিনে সব ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট স্যুট করে না, তারাও কিন্তু এই উপাদানটি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন। একটি ছোট শসা স্লাইস করে ব্লেন্ড করে নিন। তারপর ছোট মিক্সিং বোলে নিয়ে ১ টেবিল চামচ ইয়োগার্ট বা টকদই এতে মিশিয়ে নিন। ১৫ মিনিট ফেইসে রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কুলিং টোনার
শসা ভালো করে ধুয়ে কুঁচি করে একটি ব্লেন্ডারে স্মুথ পেস্ট বানিয়ে নিন। একটি ছাঁকনির সাহায্যে ছেঁকে লিকুইড অংশটুকু আলাদা করে রাখুন। শসার রসের সাথে মিক্স করুন রোজ ওয়াটার। এবার ফ্রিজে স্টোর করুন এবং টোনার হিসেবে ফেইসে অ্যাপ্লাই করুন কটন প্যাডের সাহায্যে। এটি ৩/৪ দিনের বেশি স্টোর করা যাবে না, কারণ এতে প্রিজারভেটিভস দেওয়া নেই।
ইরিটেশন কমাতে ফেইস মাস্ক
সেনসিটিভ ও একনে প্রন স্কিনের জন্য এই মাস্ক খুবই কার্যকরী। শসার রস, পরিমাণমতো মুলতানি মাটি ও ১ ড্রপ টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল একসাথে মিশিয়ে স্মুথ পেস্ট তৈরি করুন। এই মাস্ক পুরো ফেইসে ইভেনলি অ্যাপ্লাই করুন। ১০-১৫ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে দু’বার ইউজ করলে স্কিন ইরিটেশন কমে যাবে।
ক্লেনজিং মাস্ক
শসা শুধু স্কিনকে রিফ্রেশই করে না, পাশাপাশি ব্লেমিশ ও ডার্ক স্পটস রিমুভ করে। আর ওটস এক্সেস অয়েল কমিয়ে এক্সফোলিয়েটরের কাজ করে। শসার রস ও ১ চা চামচ ওটস একসাথে মিক্স করে আধা ঘন্টার জন্য রেখে দিন। তারপর ফেইসে অ্যাপ্লাই করে ১৫-২০ মিনিট রেখে জেন্টলি স্ক্রাব করে ধুয়ে ফেলুন। ১৫ সেকেন্ড স্ক্রাবিং করাই এনাফ।
ডায়েটেও রাখুন শসা
এইতো গেলো ফেইস মাস্ক, টোনার ও ফেসিয়াল মিস্টে শসার ব্যবহার। পাশাপাশি আপনি যদি রেগুলার ডায়েটে শসা রাখেন এবং সপ্তাহে এক বা দুই দিন শসার জুস/স্মুদি খান তাহলে তো আরও বেনিফিট পাবেন। শসার ডিটক্স ওয়াটারও আপনার শরীরকে রাখবে ফিট এবং স্কিনকে করবে ভেতর থেকে গ্লোয়ি।
স্কিনের ডালনেস, ইরিটেশন ও সানবার্ন দূর করার ন্যাচারাল সল্যুশন কী সেটা জেনে নিলেন। আজ এই পর্যন্তই। সরাসরি শসা দিয়ে তো রূপচর্চা হলোই, শসার নির্যাসযুক্ত স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টও ট্রাই করতে পারেন কিন্তু! এখন Cucumber এক্সট্র্যাক্টযুক্ত শিটমাস্ক, ক্লেনজার, টোনার সহ বিভিন্ন স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টস অ্যাভেইলেবল। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ৪টি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) ও সীমান্ত সম্ভার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাটারস্টক, সাজগোজ