রাস্তা ঘাটে চলতে ফিরতে কত ঘটনা ঘটে। যে কোনও মুহূর্তে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে যে কেউ। এমনকি আপনার অনেক আপনজন। এ অবস্থায় ঘাবড়ে না গিয়ে প্রাথমিক কিছু পদক্ষেপ নিলে অনেক সময় অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থা এড়ানো যায়।
কেউ কেউ হঠাৎ করে আবার কেউ কেউ ধীরে ধীরে অজ্ঞান হতে পারে। অনেকে অল্প সময়ের জন্য, কেউবা অনেকক্ষণ অজ্ঞান থাকতে পারে। অজ্ঞান রোগী গা ঝাঁকুনি বা উচ্চ শব্দে বা ব্যথায় সাড়া নাও দিতে পারে। অনেকের শ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমনকি, নাড়ীর গতিও কমে যেতে পারে। এরকম হলে তাড়াতাড়ি, সব সময় চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় এমন হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
অজ্ঞান হওয়ার কারণ গুলো কী কী?
অনেক কারণে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে যে কেউ। কিছু কিছু সাধারণ কারণ হলোঃ
১) সড়ক দূর্ঘটনা
২) অনেক রক্তক্ষরণ
৩) বুকে বা মাথায় অনেক জোরে আঘাত পেলে
৪) অনেকসময় ওষুধের ডোজ বেশি হয়ে গেলে
৫) এলকোহল পয়েজিং হলে
এছাড়া,
৬) রক্তে সুগার বা চিনির পরিমান কমে গেলে
৭) ব্লাড পেশার কমে গেলে
৮) সিনকোপ (মস্তিষ্কে রক্তসরবরাহ কমে গেলে)
৯) পানিশূন্যতা হলে
১০) হার্টের সমস্যা হলে
১১) নিউরোলজিক সিনকোপ ( খিচুনি, ট্রানজিয়েন্ট ইশকেমিক এট্যাক)
১১) একটানা অনেকক্ষণ একজায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলে
১২) খুব জোরে জোরে শ্বাস নিলে, ইত্যাদি।
কী দেখে বুঝবেন যে একজন মানুষ অজ্ঞান হয়ে গেছে?
কিছু কিছু চিহ্ন দেখে বোঝা যায় যে, অজ্ঞান হয়ে গেছে মানুষটি।
১) হঠাৎ করে সাড়া না দেয়া।
২) কথা জড়িয়ে যাওয়া।
৩) রোগী দ্বিধাগ্রস্ত থাকে।
৪) হার্টের গতি বেড়ে যাওয়া।
৫) ঝিমঝিম লাগা বা হালকা মাথা ব্যথা করা।
এরকম দেখলে সাথে সাথে আপনার করণীয় কী?
১) প্রথমেই দেখতে হবে, শ্বাস আছে কিনা? যদি থাকে, চিত করে শোয়াতে হবে।
২) শোয়ানোর পর, দুই পা ১২ ইঞ্চি উপরে তুলে রাখতে হবে,যাতে মস্তিষ্কে রক্তসরবরাহ বাড়ে।
৩) টাইট কাপড় পরে থাকলে, খুলে দিতে হবে, বিশেষ করে বুকের,গলার আর কোমড়ের।
৪) ঘাড়ের নিচে উচু কিছু রেখে, মাথা নিচে নামিয়ে, থুতনি উপরে রাখতে হবে, যাতে শ্বাস-প্রশ্বাস চলাচলে বাঁধা তৈরি না হয়।
৫) শ্বাস বন্ধ থাকলে, কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিতে হবে।
যদি শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক থাকে আর ৩ মিনিটের মধ্যে জ্ঞান না ফিরে তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে হবে। আর শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ থাকলে সাথে সাথে নিকটস্থ ভালো চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।
ডাক্তার অনেক সময় শেষ চেষ্টা হিসেবে cpr দেয়। অনেক রোগী এতে ভালো হয়ে যায়। অনেকে সময় cpr কাজ করে না। তখন রোগীর আত্মীয় অভিযোগ করে ডাক্তার বুক চেপে রোগী মেরে ফেলেছে। অথচ এটা একটা ভিত্তিহীনকথা। cpr মানে হল cardiopulmonary resuscitation। এটা দেয়ার সময় রোগীর বুকের উপর এমনভাবে চাপ দিতে হয়, যাতে বুকের হাড্ডি ভেঙে যায়, হার্টে ম্যাসাজ হয়। কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাসও দেয়া হয়। এটাই রোগীর শেষ সময় করা হয়। তাই ডাক্তার কে অযথা তার কাজে বাঁধা দিবেন না অথবা উল্টো অভিযোগ করবেন না।
এছাড়া, যদি ব্লাড প্রেশার কমের কারণে অজ্ঞান হয়, তাহলে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ডাক্তার মেডিকেশন দিবে। অনেক সময় রক্তে সুগার বা চিনি কমের কারণে অজ্ঞান হতে পারে। তখন সাথে সাথে মিষ্টি জাতীয় কিছু খাবার দিতে হবে।
কেউ অজ্ঞান হলে কখনই যা করবেন নাঃ
১) অজ্ঞান রোগীকে খাবার বা পানীয় দিবেন না।
২) একা ফেলে কোথাও যাবেন না।
৩) বালিশ মাথার নিচে রাখবেন না।
৪) অজ্ঞান রোগীর মুখে বা গালে চড় থাপ্পড় মেরে জাগানোর চেষ্টা করবেন না।
লক্ষ্য করুনঃ
১) এমন পরিস্থিতি পরিহার করুন, যাতে আপনার রক্তে সুগারের পরিমান কমে যায়। বিশেষ করে ডায়াবেটিস আছে যাদের, তাদের পকেটে সবসময় চকলেট রাখুন। অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকবেন না।
২) একস্থানে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন না।
৩) গরমকালে প্রচুর পানি খান।
৪) যদি মনে হয় যে পড়ে যাবেন,তাহলে সাথে সাথে শুয়ে পরুন অথবা হাটু ভাঁজ
করে, মাথা সামনে ঝুঁকিয়ে কোনকিছুর উপর ভর দিয়ে বসে পরুন।
লিখেছেনঃ মৌসুমী
ছবিঃ এন ডি এফ এ টেইনিং.কো.ইউকে