আজকাল সবার মুখেই বিশেষত স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের মুখে একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়। সেটা হচ্ছে ডিটক্সিফিকেশন। সোজা কথায় ডিটক্সিফিকেশন বলতে বুঝায়, শরীর থেকে টক্সিন বা দূষিত বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়া অথবা বের করে দেয়ার প্রক্রিয়াকে আরো দ্রুত করা।
আমাদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবেই বিভিন্ন দূষিত পদার্থ তৈরি হয়। কখনো বা ক্ষতিকর খাবার থেকে (যেমন তৈলাক্ত খাবার, ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত মিষ্টি ইত্যাদি) আবার কখনো বা ক্ষতিকর অভ্যাস যেমন মদ্যপান,ধূমপান থেকে আবার কখনো বা আমাদের চারপাশের দূষণ থেকে আমাদের শরীরে দূষিত বর্জ্য জমা হয়। যদিও আমাদের দেহের নিজস্ব প্রক্রিয়াই এই টক্সিন দেহ থেকে বের করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের লাইফস্টাইলের ভুল আর ব্যস্ততা আমাদের শরীরের এই ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়াকে দিনের পর দিন হ্রাস করে দিচ্ছে। কিন্তু এ থেকে বাঁচার উপায় নেই একথা বলা যাবে না। বহু প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন দেশে ডিটক্সিফিকেশনের জন্য বিভিন্ন উপায় ব্যবহার হয়ে আসছে। এর মধ্যে বহুল প্রচলিত কিছু উপায়ের কথা এখানে আলোচনা করা হল।
[picture]
লেবু ও মধুর শরবত:
সবচেয়ে বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় ডিটক্সিফিকেশন পানীয় হচ্ছে লেবু ও মধুর শরবত। ডাক্তার থেকে শুরু করে বিউটিশিয়ান সকলেই এই পানীয়টির গুণ নিয়ে কথা বলে। বিশেষত যারা আয়ুর্বেদ নিয়ে কমবেশি পড়াশোনা করেছেন তাদের কাছে এই শরবতের মত পছন্দের পানীয় খুব কমই আছে। এই পানীয়টি গ্রহণ করার সঠিক নিয়ম হচ্ছে এক গ্লাস উষম গরম পানিতে একটি লেবুর রস ও এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন খালি পেটে খেতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি সকালে খাওয়া যায়। এই পানীয়টি পেট পরিষ্কার করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং সেই সাথে সারাদিন ফ্রেশ রাখে। তবে একটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। পানীয়টি উষম গরম পানির সাথে নিতে হবে। ঠান্ডা পানির সাথে নিলে উপকারের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি।
লেবু ও লবণের পানীয়:
যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য মধু নিষেধ। ডায়াবেটিস রোগীরা মধুর বদলে উষম গরম পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে রোজ সকালে খেতে পারেন।
গ্রিন টি:
গ্রিন টির উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। আজকাল একটি জনপ্রিয় টিভি বিজ্ঞাপন প্রায়ই দেখা যায় যেখানে গ্রিন টি পান করাকে শরীরের ভিতর থেকে স্নান করার সাথে তুলনা করা হয়েছে। এই তথ্যটি সম্পূর্ণ সঠিক। কারণ আমাদের শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দিয়ে আমাদের দেহকে ভিতর থেকে পরিষ্কার করা এবং আমাদেরকে সু্স্থ রাখার ক্ষেত্রে আর কোনো খাবার এত ভালো ভূমিকা পালন করে না। নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে এটি আমাদের দেহের রক্ত পরিষ্কার করে, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে, দেহ থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয়, আমাদের ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে, ব্রণ ও একনে সমস্যা প্রতিরোধ করে, ওজন কমার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং সর্বোপরি আমাদের দেহের সুস্থতার হার অনেক বাড়িয়ে দেয়।
পানি:
ডিটক্সিফিকেশনের জন্য সবচেয়ে সহজ ও প্রাকৃতিক উপায় হচ্ছে বেশি বেশি পানি পান করা। শরীরের সকল অঙ্গ- প্রত্যঙ্গগুলো সঠিকভাবে কাজ করার জন্য নিয়মিত দুই থেকে তিন লিটার পানি খেতে হবে। তবে রোজ চার লিটারের বেশি পানি না খাওয়াই ভালো। কারণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি খেলে তা আমাদের কিডনীর ক্ষতির কারণ হতে পারে।
লিখেছেন- সাদিয়া রিফাত ইসলাম
ছবি- সাটারস্টক