আমাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ রোগ হচ্ছে জ্বর। বাচ্চা থেকে বুড়ো কমবেশি সবাই কখনো না কখনো এই রোগের স্বীকার হয়েছে। অথচ এই অতি সাধারণ রোগটা সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষেরই খুব একটা স্বচ্ছ ধারণা নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ জ্বর হলে খুব একটা গুরুত্ব দেন না এবং প্রায়ই দেখা যায় বাড়ির পাশের ওষুধের দোকান থেকে একপাতা নাপা কিনে এনে খাওয়া শুরু করে দেন ডাক্তারের সাথে কোনো রকম পরামর্শ ছাড়াই। জ্বর যদি সাধারণ হয় অর্থাৎ খুব বেশি মারাত্নক না হয় তবে এটুকুই যথেষ্ট। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় মারাত্নক কোনো রোগের লক্ষণ হিসেবে আমাদের শরীরে জ্বর আসে। সেক্ষেত্রে আন্দাজে ওষুধ খাওয়াটা শুধু ক্ষতিকর নয়, অনেক সময় মারাত্নক ঝুকিপূর্ণও হতে পারে।
জ্বরের রকমফেরঃ
আমরা যদি সাধারণভাবে জ্বরের রকমফের করতে চাই তাহলে বলতে হবে জ্বরকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলো হল ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, ভাইরাল জ্বর এবং প্যারাসাইটিক জ্বর।
ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন- ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন জনিত জ্বরের বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে। যদি রেসপিরেটরি ট্রাক্ট ইনফেকশন থেকে জ্বর আসে তাহলে জ্বরের সাথে সাথে সর্দি, কফ এবং শ্বাসকষ্ট থাকবে। আবার অনেক সময় জ্বর যদি ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন হয় তবে জ্বরের সাথে ঠান্ডা লাগা ভাব থাকবে।
ভাইরাল জ্বর- ভাইরাল জ্বর যেকোনো রোগীর জন্যই যথেষ্ট কষ্টকর। এই জ্বরের মধ্যে রয়েছে ডেঙ্গু জ্বর, ভাইরাল হেপাটাইটিস এ, ভাইরাল হেপাটাইটিস বি ইত্যাদি।
প্যারাসাইটিক জ্বর- এই ধরনের জ্বর রোগীর জন্য সবচেয়ে কষ্টদায়ক। সবথেকে মারাত্নক জ্বরগুলো এই বিভাগের মধ্যেই পড়ে। ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, টাইফয়েড এর মত ক্ষতিকর জ্বরগুলো আসলে প্যারাসাইটিক জ্বরের বিভিন্ন ধরন।
জ্বর হলে কী করবেন?
আপনার অথবা আপনার বাসার কারো জ্বর হলে আপনার প্রথম কর্তব্য হবে যেনতেন ওষুধ না খেয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা। কারণ কীভাবে অথবা কী কারণে জ্বর এসেছে তা আমাদের মত সাধারণ মানুষের পক্ষে সঠিকভাবে জানা সম্ভব নয়। বিশেষ করে জ্বর যদি তিনদিন অতিক্রম করে যায় তাহলে তা মারাত্নক ক্ষতিকর হতে পারে। এ অবস্থায় সময় নষ্ট না করে করে অতি দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। এছাড়া কিছু নির্দিষ্ট খাবার আছে যেগুলো জ্বর উপশম হয়ত করে না কিন্তু জ্বরের সময় অনেক আরাম দেয়। প্রথমেই বলব আদার কথা। জ্বর হলে আদা চা খাওয়ার কথা সকলেই বলে থাকেন। গরম চায়ের সাথে আদা মিশিয়ে খেলে আদার ঝাঝালো স্বাদ আপনার গলায় আরাম দেবে সেই সাথে মুখের স্বাদও বাড়াবে। যেহেতু জ্বরে রোগীর মুখের স্বাদ তেঁতো হয়ে যায়, কাজেই এধরনের ঝাঝালো স্বাদের খাবার মুখের রুচি বাড়াবে। তাছাড়া আদার মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান দেহকে রোগের সাথে লড়ার জন্যও শক্তি প্রদান করবে। জ্বরের সময় আর একটি দরকারি খাবার হচ্ছে মুরগির হালকা স্যুপ। মুরগির স্যুপের মধ্যে জ্বরের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্লুইড থাকে। তাছাড়া এর আমিষ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যেকোনো রোগে এনার্জি দেয়ার জন্য দরকারি। আর এই স্যুপে যদি বিভিন্ন রকম সবজি যোগ করা যায় তাহলে আরো ভালো হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ফ্রেশ ফল বিশেষত ভিটামিন সি যুক্ত ফল জ্বরের রোগীর জন্য খুবই উপকারী।
লিখেছেনঃ সাদিয়া রিফাত ইসলাম
ছবিঃ এক্সপার্টবিকন.কম