‘বাইরে বের হওয়ার আগে ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করেছি। স্কিন বেশ ফ্রেশই দেখাচ্ছে। আলাদা করে সানস্ক্রিন লাগানোর কী দরকার?’ আপনিও কি এমন ভাবছেন? তাহলে এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে বের হয়ে আসুন। কারণ প্রতিদিন সকালে বাইরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই না করলে দেখা দিবে সান স্পটস, হাইপারপিগমেন্টেশনের মতো নানা সমস্যা। একেক সানস্ক্রিনে একেক রকম SPF দেখা যায়। তাহলে আপনি কীভাবে বুঝবেন বাংলাদেশি আবহাওয়ার জন্য কোন সানস্ক্রিনটি আপনার জন্য উপযুক্ত হবে? এই কনসার্ন অনুযায়ী একটি সানস্ক্রিন সম্পর্কে আজ আপনাদের জানাবো। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক।
সানস্ক্রিন ব্যবহার না করলে কী কী ক্ষতি হতে পারে?
আমাদের স্কিন সাধারণত UVA ও UVB নামে দুই ধরনের সূর্যরশ্মি ফেইস করে। এই দুই রশ্মির কারণে আমাদের স্কিনে যে প্রবলেমগুলো হয়-
UVA রশ্মিঃ ত্বকের ভেতর পর্যন্ত যেয়ে কোলাজেন প্রোডাকশন কমিয়ে দেয় এই রশ্মিটি। আর এ কারণে দেখা দেয় প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস।
UVB রশ্মিঃ আমাদের ত্বকের সানবার্ন হয় এই রশ্মির কারণে। এছাড়া স্কিনে পিগমেন্টেশন বা ডার্ক প্যাচের মতো সমস্যাগুলো হওয়ার পেছনেও এই রশ্মিটি দায়ী।
সূর্যের এই রশ্মিগুলো থেকে স্কিনকে সুরক্ষা দেয়ার কাজটিই সানস্ক্রিন করে। তাই ত্বককে এই রশ্মিগুলো থেকে সুরক্ষিত রাখতে হলে স্কিন কেয়ার রুটিনে সানস্ক্রিন অ্যাড করা মাস্ট!
এসপিএফ (SPF) ও পি এ প্লাস (PA+) কী?
সানস্ক্রিনে SPF শব্দটির সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। এর অর্থ হচ্ছে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর (Sun Protection Factor)। এই SPF এর উপরই ডিপেন্ড করে আপনার সানস্ক্রিন আপনাকে সান ড্যামেজ থেকে কতটুকু সুরক্ষা দিবে। ধরুন আপনার সানস্ক্রিনে SPF 35 লেখা আছে। এর অর্থ হচ্ছে সানস্ক্রিনটি আপনাকে ইউভি রে থেকে ৯৭% সুরক্ষা দিবে। ঠিক একইভাবে SPF 50 ৯৮% ইউভি রে এবং SPF 100 যুক্ত সানস্ক্রিন আপনাকে ৯৯% সুরক্ষা দিবে।
সুরক্ষা দেয় তো বুঝলাম, কিন্তু কতক্ষণের জন্য? সব সানস্ক্রিনই একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সূর্যরশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয়। আপনি যত লম্বা সময় সূর্যের আলোতে থাকবেন, যত বেশি ঘামবেন তত এর কার্যকারিতা কমতে থাকবে। যে ব্যক্তি SPF 30 যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করছেন তিনি অবশ্যই SPF 15 এর চেয়ে বেশি সুরক্ষা পাচ্ছেন। তবে আরও একটি বিষয় জানিয়ে রাখি, আপনি যত বেশি এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিনই ব্যবহার করুন না কেন ২/৩ ঘন্টা পরপর অবশ্যই সেটা রিঅ্যাপ্লাই করতে হবে।
বাংলাদেশি আবহাওয়ার জন্য বেস্ট সানস্ক্রিন
আগেই বলেছি, সানস্ক্রিনে থাকা SPF আমাদের স্কিনকে সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর দিক থেকে সুরক্ষা দেয়। বাংলাদেশি আবহাওয়ার জন্য SPF 30 থেকে 60 আছে এমন সানস্ক্রিন উপযুক্ত। রাজকন্যা ব্র্যান্ড এই বিষয়ের দিকে খেয়াল রেখেই ‘Rajkonna Sunscreen SPF 40 PA+++’ নামে নতুন একটি সানস্ক্রিন বাজারে নিয়ে এসেছে।
রাজকন্যার এই সানস্ক্রিনে আছে SPF 40, যা কড়া রোদে বাইরে বের হলেও ফুল প্রোটেকশন দিবে। যাদের অয়েলি স্কিন, তারা শুধু অয়েলের কারণে নয়, ঘামের কারণেও বেশ প্রবলেম ফেইস করেন। এই সানস্ক্রিনটি ওয়াটার ও সোয়েট রেজিস্ট্যান্ট। সেই সাথে এটি লাইট ওয়েট হওয়ায় রি অ্যাপ্লাই করার পরও স্কিনে হেভি ফিল হয় না। এই সানস্ক্রিন ব্যবহারে আমি কী কী বেনিফিট পেয়েছি তার সবই আজ আপনাদের জানাবো। আমি কেন এটি আপনাদের সাজেস্ট করছি সেটা তাহলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন।
Rajkonna Sunscreen SPF 40 PA+++ এর বেনিফিটস
- নন-কমেডোজেনিক হওয়ায় একনে প্রন স্কিনের জন্য স্যুইটেবল
- লাইট ওয়েট ও নন গ্রিজি হওয়ায় ফেইসে হেভি ফিল হয় না
- অ্যাপ্লাই করার পর স্কিনে ম্যাটিফাইয়িং লুক দেয়
- অল টাইপ স্কিন এমনকি সেনসিটিভ স্কিনেও স্যুইটেবল
- সান এক্সপোজার থেকে ফুল প্রোটেকশন দিবে বলে এজিং প্রসেস ডিলে হবে
- হোয়াইট কাস্ট দেয় না
- ত্বক উজ্জ্বল করে তুলবে
- ডার্ক প্যাচেস ও হাইপারপিগমেন্টেশন এর প্রবলেম হবে না
যেভাবে ব্যবহার করবেন
বাইরে যাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিনটি ব্যবহার করুন। এতে সানস্ক্রিন স্কিনে ভালোভাবে অ্যাবজর্ব হয়ে যাবে। হাতের দুই আঙুল পরিমাণ সানস্ক্রিন নিয়ে মুখে ও গলায় লাগিয়ে নিন। বাইরে থাকলে ২ ঘন্টা পরপর অবশ্যই রি অ্যাপ্লাই করতে হবে। রি অ্যাপ্লাই করার আগে ফেইস মেকআপ ওয়াইপস দিয়ে মুছে নিতে পারেন বা নরমাল পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে পারেন। যারা মেকআপ করে বাইরে যান, তারা রি অ্যাপ্লাই এর জন্য SPF যুক্ত কমপ্যাক্ট পাউডার ইউজ করতে পারেন। দিনের বেলা বাসায় থাকলেও স্কিন ভালো রাখার জন্য সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করতে হবে। মেঘলা দিনে বা বৃষ্টি হলেও সানস্ক্রিন মিস দেয়া যাবে না।
প্রতিটি প্রোডাক্টই নির্দিষ্ট পরিমাণে অ্যাপ্লাই করতে হয়। কম ব্যবহারে যেমন বেনিফিট নেই, তেমনই বেশি ব্যবহারেও স্কিনে ভেসে ভেসে থাকবে। পুরো ফেইসের জন্য দুই আঙুল পরিমাণ সানস্ক্রিন নিলেই এনাফ। এতে ফুল ফেইসই কভার হবে। হাতের তালুতে সানস্ক্রিন নিয়ে রাব করা যাবে না। আঙুলে সানস্ক্রিন নিয়ে আলতোভাবে ফেইসে একটা লেয়ার ক্রিয়েট করতে হবে।
ইউজ করার পর একনে প্রবলেম হবে না তো?
অনেকেরই কমপ্লেইন থাকে, সানস্ক্রিন ইউজ করার পর স্কিনে একনে, পিম্পল বা ব্রেকআউটস দেখা দেয়। যাদের এ ধরনের সমস্যা হয় তারা সানস্ক্রিন কেনার আগে সেটি নন-কমেডোজেনিক কিনা দেখে নিবেন। রাজকন্যার এই সানস্ক্রিনটি নন-কমেডোজেনিক বলে একনে প্রন স্কিনেও ইউজ করতে পারবেন। কিন্তু সানস্ক্রিন ব্যবহারের পর ডাবল ক্লেনজিং কিন্তু মাস্ট। কারণ প্রোপারলি ক্লিন না করলে পোরস ক্লগ হয়ে যেতে পারে। আর এ কারণেই একনে বা ব্রেকআউটস দেখা দেয়।
প্যাকেজিং
রাজকন্যা সানস্ক্রিনটি পাওয়া যাচ্ছে সাদা হলুদ রঙের ৬০ গ্রামের একটি আকর্ষণীয় টিউবে। রি অ্যাপ্লাই করার জন্য ইজিলি ব্যাগে ক্যারি করতে পারবেন।
টেক্সচার ও স্মেল
সানস্ক্রিনটির টেক্সচার ক্রিমি হলেও বেশ লাইট। অ্যাপ্লাইয়ের পর একদমই হেভি ফিল হয় না। আমার স্কিনে অ্যাবজর্ব হতে ৮/১০ সেকেন্ড লাগে। এর স্মেল বেশ মাইল্ড। আমার বেশ ভালো লেগেছে।
কারা ব্যবহার করতে পারবেন?
যে কোনো স্কিন টাইপের মানুষই এই সানস্ক্রিন ইউজ করতে পারবেন। বছরের যে কোনো সময়, যে কোনো আবহাওয়ায় সব বয়সীদের জন্যই এটি মাস্ট। ইউভি রেডিয়েশন থেকে স্কিন ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রেগুলার সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাইয়ে এই আশঙ্কা অনেকটাই কমে আসে। সেই সাথে স্কিনও ভালো থাকে।
খেয়াল রাখুন কিছু বিষয়ে
- শুধুমাত্র বাহ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য
- চোখের সংস্পর্শে এলে তাৎক্ষণিকভাবে পর্যাপ্ত পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলুন
- শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন
- ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নিন
- কোনো ধরনের ইরিটেশন বা রেডনেসের প্রবলেম হলে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন
আমার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল
এর আগে আমি যে সানস্ক্রিনগুলো ইউজ করেছি সেগুলো আমার স্কিনে স্যুট না হওয়ায় পিম্পল উঠে গিয়েছিল, আবার হোয়াইট কাস্টও দিয়েছিল। এরপর থেকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করাই এক রকম বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিদিন বাইরে যেতে হয় বলে স্কিনে প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস দেখা দেয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যাচ্ছিল। তাই আমাদের দেশের আবহাওয়ার জন্য স্যুইটেবল হবে এমন কিছুই খুঁজছিলাম।
আমি সাধারণত সাজগোজ থেকেই স্কিন কেয়ারের বিভিন্ন প্রোডাক্ট কিনি। এবারও তাদের অ্যাপ সার্চ করতে করতে এই সানস্ক্রিনটির সন্ধান পেয়ে গেলাম। যেহেতু রাজকন্যা ব্র্যান্ডের অন্যান্য প্রোডাক্ট আগেও ইউজ করেছি তাই এই ব্র্যান্ডের উপর ভরসা আগে থেকেই ছিল। আর দেরি না করে অনলাইনে অর্ডার দিয়ে ঘরে বসেই পেয়ে গেলাম প্রোডাক্টটি। খুব বেশিদিন হয়নি ইউজ করা শুরু করেছি, তবে এখনই বুঝতে পারছি সানস্ক্রিনটি আমার স্কিনে খুব ভালোভাবে স্যুট করেছে। আমার স্কিন নরমাল। স্কিনে এটি গ্রিজি ফিল তো দেয়ই না, সেই সাথে হোয়াইট কাস্টের প্রবলেমও হচ্ছে না। যেহেতু আমি ইউজ করে বেনিফিট পাচ্ছি, তাই ভাবলাম আপনাদেরকেও এটি সম্পর্কে জানিয়ে দেই।
এই তো জানিয়ে দিলাম, বাংলাদেশি আবহাওয়ার জন্য উপযুক্ত একটি সানস্ক্রিন সম্পর্কে। আপনার স্কিন যেমনই হোক না কেন, এই সানস্ক্রিন ইউজ করতে পারবেন। অথেনটিক সব স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপ প্রোডাক্ট সাজগোজে পেয়ে যাবেন। সাজগোজের কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার এ অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।
ছবিঃ সাজগোজ