ড্যানড্রাফ নাকি ড্রাই স্ক্যাল্প – আপনি কোন সমস্যায় ভুগছেন?

ড্যানড্রাফ নাকি ড্রাই স্ক্যাল্প – আপনি কোন সমস্যায় ভুগছেন?

1 (10)

চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেননি এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যায়। নানা কারণে চুল পড়লেও অনেকেই কমপ্লেইন করেন যে, অতিরিক্ত খুশকি বা ড্যানড্রাফের কারণে চুল স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পড়ছে। কিন্তু সব সময় যে ড্যানড্রাফই চুল পড়ার জন্য দায়ী তা কিন্তু নয়। হতে পারে আপনার স্ক্যাল্প ড্রাই, তাই হেয়ার ফল বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ দুটোর মধ্যে আসলে পার্থক্য কোথায়? আমাদের স্ক্যাল্প ফেইসের মতো অয়েলি বা ড্রাই হতে পারে। অয়েলি স্ক্যাল্পেই যে খুশকির সমস্যা হবে এমন নয়, ড্রাই স্ক্যাল্পেও হতে পারে। ড্যানড্রাফ নাকি ড্রাই স্ক্যাল্প এর সমস্যা হচ্ছে সেই তফাৎটা না বোঝার কারণে অনেকে সঠিকভাবে হেয়ার কেয়ার করা নিয়ে ঝামেলায় পড়েন। আজ আপনাদের জানাবো এই দুটোর মধ্যে পার্থক্য কী, কেন এই সমস্যা হয় এবং কোন সমস্যায় কীভাবে হেয়ার কেয়ার করবেন সে সম্পর্কে।

ড্যানড্রাফ নাকি ড্রাই স্ক্যাল্প – কীভাবে বুঝবেন? 

আমাদের মধ্যে কেউ হয়তো ড্যানড্রাফের সমস্যায় ভুগছেন, কেউ ড্রাই স্ক্যাল্পের। আবার অনেকেই দুটো প্রবলেম একইসাথে ফেইস করছেন। দুটো সমস্যার মধ্যে অনেক মিল থাকায় পার্থক্য সহজে বোঝা যায় না। কিন্তু আপনি ঠিক কোন সমস্যায় ভুগছেন সেটা কীভাবে বুঝবেন? এ জন্য সবার আগে ড্যানড্রাফ ও ড্রাই স্ক্যাল্পের পার্থক্য বোঝা জরুরি। চলুন তাহলে এ বিষয়ে আগে বিস্তারিত জেনে নেই-

ড্যানড্রাফ কী?

ডার্মাটোলজিস্টের মতে, এটি স্ক্যাল্পের একটি ইনফ্ল্যামেটরি কন্ডিশন যেটা মাইল্ড থেকে সিভিয়ার হতে পারে। বিশেষত সেবোরেইক ডার্মাটিটিস (Seborrhoeic Dermatitis) বা ফাঙ্গাসজনিত কারণে চুলে খুশকি দেখা দিতে পারে। আমাদের স্ক্যাল্পের সেলগুলো প্রতি ২৮ দিন পর পর রিজেনারেট হতে থাকে। স্ক্যাল্পের গভীর থেকে নতুন সেল উপরে উঠে আসে এবং উপরের সেলগুলো ঝরে পড়ে যায়। এই ঝরে পড়া সেলগুলো সময়মতো ক্লিন করা না হলে তখন এগুলো একসাথে হয়ে খুশকি তৈরি করে। আমাদের একেকজনের স্কিন যেমন একেক রকম, তেমনই আমাদের স্ক্যাল্পেও ভ্যারিয়েশন আছে। এই ভ্যারিয়েশনের উপর ডিপেন্ড করে ড্যানড্রাফকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।

ড্রাই-ড্রাই খুশকির কারণ হচ্ছে ড্রাই স্ক্যাল্প। এমন স্ক্যাল্পে অয়েলের পরিমাণ কম থাকে। যার কারণে সময়ের আগেই পুষ্টির অভাবে সেলগুলো ঝরে পড়ে যায়। স্ক্যাল্প ইচিনেসের কারণও এই ড্রাইনেস।

অয়েলি- যাদের স্ক্যাল্প বেশি অয়েলি, তাদের স্ক্যাল্প থেকে অনেক বেশি তেল রিলিজ হয়। এই তেল সময়মতো ক্লিন করা না হলে তখন ডেড সেলগুলো এই তেলের সাথে আটকে যেয়ে খুশকির জন্ম দেয়।

ড্যানড্রাফ

ড্যানড্রাফের কারণ

ড্যানড্রাফ হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ বের করা কঠিন, তবে কিছু কমন ফ্যাক্টর আছে যেটা মোটামুটি সবার ক্ষেত্রেই সমান। যেমন-

ফাঙ্গাল অ্যাটাক

ড্যানড্রাফ হওয়ার পিছনে Malassezia Globosa কে মেজর কালপ্রিট হিসাবে ধরা হয়ে থাকে। ন্যাচারালি সবার স্ক্যাল্পেই এটি থাকে। স্ক্যাল্পের ময়েশ্চার ব্যালেন্স করার জন্য নরমালি যে সিবাম প্রোডাকশন হয়, সেটা যদি কখনো বেড়ে যায় তখনই এই ফাঙ্গাসের সূচনা হয়। আর যত দ্রুত এই ফাঙ্গাস বাড়ে, ততই ডেড সেল আর সেই সাথে ড্যানড্রাফও বাড়তে থাকে। কারও ক্ষেত্রে যদি এই সমস্যা সিভিয়ার হয়, তাহলে অবশ্যই ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নেয়া উচিত।

সঠিক শ্যাম্পু সিলেক্ট না করা  

স্ক্যাল্পে ডেড সেলস জমা হলে এবং সেই সাথে যদি এক্সেস সিবাম প্রোডিউস হয়, তখন ইচিনেস আরও বাড়ে। এক্ষেত্রে আপনি যদি শ্যাম্পু ব্যবহার না করে স্ক্যাল্প ক্লিন না রাখেন, তাহলে খুশকিও বেড়েই চলবে।

SHOP AT SHAJGOJ
    অস্বাস্থ্যকর খাবার 

    আমাদের খাদ্যাভ্যাসও ত্বক ও চুলের উপর প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত ফ্যাট, সুগার, প্রসেসড ফুড আপনার স্কিন ও স্ক্যাল্পের সিবাম প্রোডাকশন বাড়িয়ে দেয়। ফলে ড্যানড্রাফ দেখা দেয়।

    স্ট্রেস ও হরমোনাল ইস্যু

    হরমোনাল চেঞ্জ যেমন- পিউবার্টি, প্রেগনেন্সি এসব কারণেও ড্যানড্রাফ হতে পারে। স্ট্রেসের কারণে কর্টিসল লেভেল বেড়ে যেয়ে স্ক্যাল্পের সিবাম প্রোডাকশন বাড়িয়ে দেয়। আর সেখান থেকে ড্যানড্রাফ হয়।

    আবহাওয়ার পরিবর্তন 

    ড্যানড্রাফের জন্য কোনো ফিক্সড ওয়েদার নেই। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা যে কোনো সময় এ সমস্যা হতে পারে। সহজ কথায় বলতে গেলে, খুশকি হওয়ার জন্য যেসব কমন ফ্যাক্টর আছে সেগুলোর মাঝে যে কোনোটি এই সমস্যাকে বাড়াতে পারে। যেমন- অতিরিক্ত গরম থেকে ঘাম হয়ে মাথার তালু ঘেমে গেলে ফাঙ্গাল অ্যাটাক হওয়ার চান্স বেশি থাকে। আবার শীতকালে স্ক্যাল্প ড্রাই হওয়ার কারণে এই সমস্যা আমরা একটু বেশিই ফেইস করি।

    ড্যানড্রাফের ট্রিটমেন্ট

    ১) খুশকি সমস্যা দূর করতে হেয়ার কেয়ারে রাখুন টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল। এটি অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল, ফলে ফাঙ্গাল অ্যাটাক হতে দেয় না। সাথে যুক্ত করুন অলিভ ও জোজোবা অয়েল। তিনটি অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন। অলিভ অয়েল চুলের গোড়া শক্ত করতে সাহায্য করে। জোজোবা অয়েলের লাইট ওয়েট ময়েশ্চারাইজিং প্রোপার্টিজ স্ক্যাল্পে নারিশমেন্ট প্রোভাইড করে। চুলে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।

    ড্যানড্রাফের ট্রিটমেন্ট

    ২) ড্যানড্রাফ দূর করার জন্য মেডিকেটেড শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত যেগুলোতে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, কিটোকোন্যাজল, জিংক পাইরিথিপন বা সেলেনিয়াম সালফাইড থাকে। এসব ইনগ্রেডিয়েন্টস ফাঙ্গাল ইনফ্ল্যামেশন হতে দেয় না। এখন মার্কেটে অ্যান্টি ড্যানড্রাফ রেঞ্জ অ্যাভেলেবল। খুশকির সমাধানে এগুলো ইউজ করতে পারেন।

    ৩) ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার এবং ভিটামিন-ডি সাপ্লিমেন্ট রাখুন ডায়েটে। ডার্মাটোলজিস্টের মতে, এসব উপাদান স্ক্যাল্পের অয়েল প্রোডাকশনে ব্যালেন্স রাখে এবং ফাঙ্গাল গ্রোথ প্রিভেন্ট করে।

    ৪) ড্যানড্রাফের সমস্যা কমাতে ইউজ করতে পারেন Skin Cafe Anti Dandruff Treatment। এতে আছে আমলা পাউডার, নিম, অরেঞ্জ, মেথি, শিকাকাই ও হেনা। এই সবগুলো ইনগ্রেডিয়েন্ট ড্যানড্রাফ দূর করতে খুব ভালো কাজ করে।

    ড্রাই স্ক্যাল্প কী?

    আমাদের স্ক্যাল্প ও হেয়ারের ন্যাচারাল অয়েল যদি ব্যালেন্সড থাকে, তাহলে স্ক্যাল্পও ময়েশ্চারাইজড ও হাইড্রেটেড থাকে। কিন্তু নানা কারণে এই ময়েশ্চারাইজেশন কমে যেতে পারে। যেমন- বয়স বৃদ্ধি, কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার, আবহাওয়ার পরিবর্তন, চুল অতিরিক্ত ধোয়া ইত্যাদি। এমন নানা কারণে স্ক্যাল্প ড্রাই হয়ে যায়। ঠিক তখনই দেখা দেয় ফ্লেকিনেস, ইচিনেস ও ইরিটেশনের মতো সমস্যা। দেখা দেয় সাদা ছোট ছোট ফ্লেকস।

    ড্রাই স্ক্যাল্প

    ড্রাই স্ক্যাল্পের কারণ

    কিছু কিছু ফ্যাক্টর এই ড্রাই স্ক্যাল্পের সমস্যাকে ট্রিগার করে। সেগুলো হলো-

    আবহাওয়ার পরিবর্তন  

    শীতকালে ওভারঅল স্কিন ড্রাই হয়ে যায়, সেই সাথেও স্ক্যাল্পও। পর্যাপ্ত পরিমাণে ময়েশ্চারাইজ না করলে স্ক্যাল্পের এই সমস্যা আরও বেড়ে যায়।

    কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট 

    অতিরিক্ত ব্লো ড্রাই, হাই হিট, কালারিং, কেমিক্যাল স্ট্রেইটিং বা হাই pH যুক্ত শ্যাম্পু স্ক্যাল্প ড্রাই করে। স্ক্যাল্পের ড্রাইনেস কমানোর জন্য সচেতন হতে হবে এসব দিকেও।

    স্ট্রেস

    এটি এমন একটি সমস্যা যা আপনার ত্বক ও চুল ভালো থাকার পিছনে অনেক বড় বাঁধা। স্ট্রেসের কারণে এমন কিছু হরমোন রিলিজ হয়, যা স্ক্যাল্পের ইনফ্ল্যামেশন বাড়িয়ে দেয় আর স্ক্যাল্পের ময়েশ্চার ধরে রাখার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে দেখা দেয় ড্রাই স্ক্যাল্প ও ইচিং প্রবলেম।

    SHOP AT SHAJGOJ
      নিউট্রিশনাল ডেফিসিয়েন্সি

      ভিটামিন আমাদের হেলদি স্ক্যাল্পের জন্য অনেক জরুরি। ভিটামিন বি-৬, বি-১২ এবং অ্যাসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড- এগুলো ডায়েটে না থাকলে স্ক্যাল্প পর্যাপ্তভাবে ময়েশ্চারাইজড হয় না। তাই পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার দিয়ে সাজাতে হবে খাদ্য তালিকা।

      ডিহাইড্রেশন

      ডিহাইড্রেটেড স্কিন বা স্ক্যাল্পে সমস্যার শেষ নেই বললেই চলে। তাই রেগুলার সঠিক পরিমাণে ওয়াটার ইনটেক হওয়া জরুরি। এতে স্ক্যাল্প হাইড্রেটেড থাকে এবং ইচিং, ফ্লেকিং, ইরিটেশন সহজে হয় না। আবার বারবার হার্শ শ্যাম্পু ব্যবহার করলেও স্ক্যাল্পের হাইড্রেশন ও ময়েশ্চার লেভেল কমে যেয়ে স্ক্যাল্প ড্রাই হতে পারে।

      ড্রাই স্ক্যাল্পের ট্রিটমেন্ট

      ১) শ্যাম্পু করার কিছুক্ষণ আগে চুলে অয়েল ম্যাসাজ করে নিন। এতে হেয়ার ও স্ক্যাল্পের অয়েল ব্যালেন্স হবে। সপ্তাহে ২/৩ বার অয়েল ম্যাসাজ করতে পারেন।

      ২) সঠিক শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার সিলেক্ট করুন। ড্রাই স্ক্যাল্পে ইরিটেশন হলে হার্শ শ্যাম্পু ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। মাইল্ড শ্যাম্পু ইউজ করুন। এতে স্ক্যাল্প হাইড্রেটেড থাকবে। এছাড়া ইচিং প্রবলেম কমানোর জন্য সুদিং ইনগ্রেডিয়েন্টস (অ্যালোভেরা বা ওটস মিল্ক ইত্যাদি) যুক্ত প্রোডাক্টস ইউজ করতে পারেন। সেই সাথে অ্যালকোহল ও প্যারাবেন ফ্রি হেয়ার প্রোডাক্টস ব্যবহার করুন।

      ৩) ঘন ঘন চুল ধোয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ এতে স্ক্যাল্পের ন্যাচারাল অয়েল কমে যায়। ফলে স্ক্যাল্প আরও ড্রাই হয়ে যায়। আর চুলে কখনো সরাসরি গরম পানি ব্যবহার করবেন না। হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে চুল ধোয়া ভালো।

      এক নজরে ড্যানড্রাফ ও ড্রাই স্ক্যাল্পের মধ্যে পার্থক্য

      এতক্ষণ তো আমরা ড্যানড্রাফ ও ড্রাই স্ক্যাল্প নিয়ে বিস্তারিত অনেক কিছু জানলাম। এক নজরে এই দুটো সমস্যার লক্ষণ বোঝার জন্য আমি নিচে একটি চার্ট অ্যাড করে দিচ্ছি-

      ড্যানড্রাফ নাকি ড্রাই স্ক্যাল্প- কীভাবে বুঝবেন?

      এই তো জানিয়ে দিলাম, ড্যানড্রাফ ও ড্রাই স্ক্যাল্পের মধ্যে পার্থক্য এবং সমাধান সম্পর্কে। ড্যানড্রাফ নাকি ড্রাই স্ক্যাল্প এর সমস্যায় ভুগছেন কিনা সেটা এখন খুব সহজেই বুঝতে পারবেন। হেয়ার কেয়ার, স্কিন কেয়ার ও মেকআপ রিলেটেড অথেনটিক বিভিন্ন প্রোডাক্ট কিনতে পারবেন সাজগোজ থেকে। সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) এ অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে  শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।

      SHOP AT SHAJGOJ

         

        ছবিঃ সাজগোজ, Afrocenchix, সাটারস্টক

        9 I like it
        1 I don't like it
        পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

        escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort