রূপচর্চায় বিভিন্ন ধরনের তেল ব্যবহৃত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। তবে বিভিন্ন তেলের ঘনত্ব ও কমেডোজেনিক রেট আলাদা। চুলের যত্নে বিভিন্ন অয়েল নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা গেলেও ত্বকের যত্নে কোন তেল ইউজ করা যাবে, সেটা নিয়ে কনফিউশন থেকেই যায়। আজ এমনই একটি অয়েল সম্পর্কে জানাবো যা ত্বক ও চুলের যত্নে কাজ করে ম্যাজিকের মতো। স্কিন ক্যাফে কোল্ড প্রেসড জোজোবা অয়েল আমার খুবই পছন্দের প্রোডাক্ট।
স্কিন ক্যাফে জোজোবা অয়েল ১০০% পিওর ও কোল্ড প্রেসড হওয়ায় জোজোবা অয়েলের সমস্ত গুণাগুণ এর মধ্যে রয়েছে। জোজোবা অয়েল (উচ্চারণ হোহোবা অয়েল) একটি মাল্টিপারপাস প্রোডাক্ট যেটা দিয়ে একইসাথে ফেইস, বডি ও হেয়ার কেয়ার করা যেতে পারে। জোজোবা অয়েল অন্য সব প্ল্যান্ট অয়েলের তুলনায় বেশি স্টেবল হয়, তাই এই তেলের প্রাকৃতিক গুণাগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে দীর্ঘ সময় ধরে। মূলত ক্যালিফোর্নিয়া, অ্যারিজোনা ও মেক্সিকোতে এই গাছ জন্মে। এই গাছে এক ধরনের তেলবীজ বা বাদাম উৎপন্ন হয়, যা থেকে জোজোবা তেল নিষ্কাশন করা হয়। সেলফ কেয়ারে কীভাবে এটি আমি ব্যবহার করি, সেটাই আজ জানাবো।
কোল্ড প্রেসড জোজোবা অয়েল কীভাবে ব্যবহার করি?
অয়েল ক্লেনজার হিসেবে
হাতের কাছে অয়েল ক্লেনজার নেই? তাহলে ট্রাই করতে পারেন জোজোবা অয়েল। এটি খুব সহজেই মেকআপ ও সানস্ক্রিন রিমুভ করে। তাই ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনে ফেইস ওয়াশের আগে অয়েল ক্লেনজার হিসেবে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে আরো বেনিফিট পাবেন! ক্লেনজিং এর সময় স্কিনের ময়েশ্চার ব্যারিয়ার ড্যামেজ হবে না এবং ফেইস ধোয়ার পর স্কিন টান টান লাগবে না। বরং স্কিন ফ্রেশ ও সফট হবে।
ন্যাচারাল ময়েশ্চারাইজার হিসেবে
জোজোবা অয়েল নন কমেডোজেনিক হওয়ায় এটি ফেইস ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করা যায় নিশ্চিন্তে। এতে আছে অ্যাসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড যা নিয়মিত ব্যবহারে স্কিনের গ্লো ফিরিয়ে আনে। অয়েলি স্কিনে ব্যবহার করলে সিবাম প্রোডাকশন কন্ট্রোল হয় এবং ড্রাই স্কিনে নিয়মিত ব্যবহার করলে ময়েশ্চার রিস্টোর হয়। জোজোবা অয়েল স্কিনের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে, ফলে ফাইন লাইনস আর রিংকেলস কমে আসে। এটি হাইপোঅ্যালার্জিক তাই স্কিনে কোনো ইরিটেশন হয় না। নন কমেডোজেনিক হওয়াতে পোরস ক্লগ করে না!
জোজোবা অয়েলের গঠন অনেকটা আমাদের ত্বকের সিবামের মতো, তাই একনে প্রন স্কিনেও অয়েল প্রোডাকশন ব্যালেন্স করে একনে কন্ট্রোল করতে সাহায্য করে। তাই একনে প্রন স্কিন হলেও জোজোবা অয়েল ব্যবহার করা যায় নিশ্চিন্তে।
বডি ময়েশ্চারাইজেশনে
ফেইসের সাথে সাথে বডি ময়েশ্চারাইজার হিসেবে জোজোবা অয়েল বেশ ভালো কাজ করে। এই তেলটি লাইটওয়েট ও ফাস্ট অ্যাবসর্বিং। তাই অ্যাপ্লাই করার পর চিটচিটে ভাব থাকে না, বরং স্কিন থাকে সফট আর গ্লোয়ি। আপনার রেগুলার বডি লোশনের সাথে মিক্স করেও অ্যাপ্লাই করতে পারেন।
বডি স্ক্রাবের সাথে
বডি স্ক্রাবিং হচ্ছে বডি কেয়ারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাপ্তাহিক স্টেপ যেটা মিস করা ঠিক না। জোজোবা অয়েল দিয়ে আমরা খুব সহজেই কিন্তু ঘরে বসে DIY বডি স্ক্রাব বানিয়ে ফেলতে পারি। তার জন্যে একটি বাটিতে জোজোবা অয়েল নিয়ে তাতে পরিমাণমতো কফি আর একটু মধু মিশিয়ে নিতে হবে। জোজোবা অয়েল ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েশনের সময় আমাদের স্কিন ব্যারিয়ার ঠিক রাখতে হেল্প করবে। বিশেষ করে যাদের কনুই, হাঁটু, পায়ের পাতা বেশ রাফ ও ড্রাই; তারা এই বডি স্ক্রাব ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
হেয়ার অয়েল ট্রিটমেন্টে
এবার আসি চুলের যত্নে জোজোবা অয়েলের ব্যবহার নিয়ে। জোজোবা অয়েল দিয়ে স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করলে ড্যানড্রাফ দূর হয় এবং চুলের রুক্ষ-শুষ্ক ভাব কমে আসে। চুল হয়ে ওঠে স্মুথ আর সিল্কি। জোজোবা অয়েল নিয়মিত ব্যবহার করলে তা হেয়ার গ্রোথেও হেল্প করবে। চাইলে নারকেল তেলের সাথে মিক্স করেও চুল আর স্ক্যাল্পে অ্যাপ্লাই করতে পারেন।
হেয়ার মাস্ক হিসেবে
চুলের যত্নে শুধু অয়েল ট্রিটমেন্টেই জোজোবা অয়েলের ব্যবহার শেষ নয়। জোজোবা অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে বিভিন্ন হেয়ার মাস্কেও। চুলের লেন্থ বুঝে জোজোবা অয়েল নিন, এতে মিক্স করুন একটি ডিম আর ২ চামচ মধু। ব্যস, তৈরি হয়ে যাবে অসাধারণ একটি হেয়ার গ্রোথ মাস্ক যা কমপ্লিটলি হোমমেইড ও ন্যাচারাল। সপ্তাহে একদিন এই মাস্ক চুলে ও স্ক্যাল্পে ব্যবহার করে দেখুন। আপনি নিজেই ডিফারেন্সটা বুঝতে পারবেন।
লিপ অয়েল হিসেবে
এই তেল কিন্তু লিপ অয়েল হিসেবেও দারুণ কাজ করে। ওভারনাইট ব্যবহারে ঠোঁটের রুক্ষ-শুষ্ক ভাব চলে যায়। সেই সাথে ঠোঁটে গ্লসি ফিনিশিংও দিবে প্রতিবার ব্যবহারে। যাদের ঠোঁট বেশ ড্রাই ও ডার্ক, তারা লিপ কেয়ারে অ্যাড করুন এই জোজোবা অয়েল।
অন্যান্য ব্যবহার
ড্রাই স্কিনে শেভিং করলে ইনগ্ৰোন হেয়ার, রেজর বাম্পসের মতো নানা রকম স্কিন সমস্যা দেখা দিতে পারে, এমনকি স্কিন কেটে যাওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়। তাই জোজোবা অয়েলের মতো লাইটওয়েট অয়েল ব্যবহার করে নিলে শেভিং এর সময় আর কোনো চিন্তা নেই। এছাড়াও বিভিন্ন ফেইস মাস্কের সাথে, মেনিকিওর-পেডিকিওরের সময় এই তেল ব্যবহার করতে পারেন।
খেয়াল রাখুন কিছু বিষয়ে
১) চুলে ব্যবহারের আগে সামান্য গরম করে নিতে পারেন (ওভেনে বা গরম পানি ভর্তি বোলে রেখে)।
২) স্ক্যাল্পে সার্কুলার মোশনে হালকা হাতে ম্যাসাজ করুন। ঘন্টাখানিক রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৩) ফেইসে, বডিতে বা চুলে অতিরিক্ত পরিমাণে তেল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। সরাসরি একদম ড্রাই স্কিনে তেল ব্যবহার না করে হালকা ভেজা ত্বকে জোজোবা অয়েল ব্যবহার করুন।
৪) সকালে সানস্ক্রিনের সাথে তেলের ব্যবহার না করাই ভালো। এতে সানস্ক্রিন রিমুভ হয়ে যাওয়ার চান্স থাকে।
কোল্ড প্রেসড জোজোবা অয়েল দিয়ে একইসাথে ত্বক ও চুলের যত্ন নেওয়া যায় খুব সহজে। তাহলে দেখলেন তো, স্কিন ক্যাফে জোজোবা অয়েল কিন্তু মাস্ট হ্যাভ। ফেইসে অ্যাপ্লাই করলেও হেভি ফিল হয় না, পোরস ক্লগড করে না। তাই এই তেল আমার মোস্ট ফেবারিট। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ৪টি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) ও সীমান্ত সম্ভার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ