“জলে চুন তাজা, তেলে চুল তাজা” এই কথাটা আমরা সকলেই জানি। চুলের যত্নে যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে তেল, এটা নতুন কিছু নয়। হেয়ার কেয়ারে আপনি বিভিন্ন ধরনের তেল ব্যবহার করতে পারেন, যেমন- নারকেল তেল, বাদাম তেল বা আমন্ড অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল, অলিভ অয়েল, তিলের তেল ইত্যাদি। একেক তেলের কার্যকারিতা একেক রকম! ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন তেল ব্যবহার করাটা চুলের জন্য বেশ উপকারী। ইদানিং হেয়ার কেয়ারে আমন্ড অয়েল বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ড্রাই ও ড্যামেজ হেয়ার রিপেয়ারে আমন্ড অয়েলের গুণাগুণ নিয়ে জানবো আজকের ফিচারে।
এই তেলে কী আছে?
আমন্ড বা বাদামকে বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করে তেল বের করা হয়। কোল্ড প্রেসড পদ্ধতিতে তেল নিষ্কাশন করা হলে এর গুণাগুণ একদম অক্ষুণ্ণ থাকে, তাই কোল্ড প্রেসড অয়েলের দামটাও একটু বেশি হয়। প্রাচীনকাল থেকেই বাদাম তেলের ব্যবহার হয়ে আসছে ত্বক ও চুলের যত্নে, কারণ এতে আছে প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ওমেগা-৯ ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন ই। এই গুণাগুণের কারণেই ড্রাই ও ড্যামেজ হেয়ার রিপেয়ারে এই তেল কাজ করে ম্যাজিকের মতো। চলুন জেনে নেই এর হেয়ার কেয়ার বেনিফিটস নিয়ে।
হেয়ার কেয়ার বেনিফিটস
১) চুল সফট ও শাইনি রাখতে
ড্রাই, ফ্রিজি হেয়ারের জন্য বাদাম তেল কিন্তু একদম ব্লেসিং। আমন্ড অয়েল প্রাকৃতিক এমোলিয়েন্ট (emollient) হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ এটি ব্যবহার করলে হেয়ার টেক্সচার স্মুথ হয়ে যায়। আমন্ড অয়েল রেগুলার হেয়ার কেয়ার রুটিনে অ্যাড করলে আপনার চুল হবে সুপার সফট। এতে চুল আঁচড়ানোর সময় জট ছাড়াতে সুবিধা হবে, হেয়ার ব্রেকেজ কমে আসবে এবং যেকোনো হেয়ার স্টাইলিং করাও সহজ হয়ে যাবে।
২) ড্রাই ও ড্যামেজ হেয়ার রিপেয়ারে
বিশেষ কিছু তেল আছে যা ড্রাই ও ড্যামেজ হেয়ার রিপেয়ারে কাজ করে আর খুব দ্রুত চুলে ফিরিয়ে আনে শাইনি লুক। এই বিশেষ তেলের মধ্যে আমন্ড বা বাদাম তেল অন্যতম। বাদাম তেলে আছে লুব্রিকেটিং প্রোপারটিজ এবং আরও কিছু উপাদান যেমন- ওলিক অ্যাসিড, লিনোলিক অ্যাসিড। এগুলো হেয়ার স্টাইলিং এর সময় চুলে ফ্রিকশন হতে দেয় না এবং চুলের শুষ্কতা দূর করে প্রাকৃতিকভাবেই। আমন্ড অয়েলে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, যা ড্রাই ও ড্যামেজ হেয়ার রিপেয়ারের জন্য দারুণ কার্যকরী।
৩) চুল ঘন করতে
আমন্ড অয়েল সরাসরি চুল গজাতে সাহায্য করে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু আমন্ড অয়েল চুলের আগা ফাটা রোধ করে এবং চুলকে হেলদি রাখে। তাই চুল ঝরে পড়া ও ভেঙে যাওয়া কমায় বলে ওভারঅল চুলের গ্রোথকে স্লো করতে পারে না, যে কারণে চুল দ্রুত বাড়ে এবং ঘন হতে থাকে। আমন্ড অয়েলে আছে ন্যাচারাল অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা ফ্রি রেডিক্যালস নিউট্রিলাইজ করে। তাই চুল হয়ে ওঠে হেলদি। তাহলে বুঝতেই পারছেন চুলের গ্রোথ বাড়াতে পরোক্ষভাবে সাহায্য করে আমন্ড অয়েল।
৪) স্ক্যাল্প সুস্থ রাখতে
ফ্লেকি স্ক্যাল্প ও সোরিয়াসিস সারাতে আমন্ড অয়েল কার্যকর ভূমিকা রাখে। এছাড়া আমন্ড অয়েল একজিমা, খুশকি দূর করতেও সাহায্য করে। এই তেল দিয়ে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই চুলের গোড়ায় বা হেয়ার ফলিকলে প্রবেশ করতে পারে বলে চুল হেলদি হয়ে ওঠে ভেতর থেকেই।
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
অয়েল ট্রিটমেন্টে
আমন্ড অয়েল আপনি চুলে সরাসরি ব্যবহার করতে পারেন। চুলের গোড়ায় আঙুলের সাহায্যে ম্যাসাজ করতে পারেন, চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পুরো চুলে তেল লাগাতে পারেন। ড্রাই ও ড্যামেজ হেয়ার রিপেয়ারে সপ্তাহে অন্তত ২দিন চুলে আমন্ড অয়েল অ্যাপ্লাই করুন।
রাতের বেলা চুলের যত্নে
হিট স্টাইলিং করলে বাসায় ফিরে চুলে আমন্ড অয়েল অ্যাপ্লাই করে নিন। এতে চুল ও স্ক্যাল্প পরিপূর্ণ পুষ্টি পাবে, হিট ড্যামেজ অনেকটা রিকোভার হয়ে যাবে। আর হেয়ার স্প্রে ব্যবহারের ফলে চুলে যে জট পাকিয়ে যায়, সেটা ছাড়াতেও সুবিধা হবে।
হেয়ার মাস্ক হিসেবে
ন্যাচারাল হেয়ার মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে দুই টেবিল চামচ আমন্ড অয়েলের সাথে দুই চা চামচ নারকেল তেল ও ডিমের কুসুম মিশিয়ে নিন। এই মাস্ক চুলে লাগিয়ে রাখুন ৪০-৪৫ মিনিট, এরপরে শ্যাম্পু করে ফেলুন। ব্যস, ড্রাই ও ড্যামেজ হেয়ার নিয়ে আর কোনো চিন্তা নেই! এছাড়াও লিভ ইন কন্ডিশনার হিসেবে কয়েক ফোঁটা আমন্ড অয়েল পুরো চুলে লাগিয়ে নিতে পারেন যেকোনো সময়।
সতর্কতা
আমন্ড অয়েল ব্যবহারের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যে বাদাম জাতীয় কোনো কিছুতে আপনার অ্যালার্জি আছে কিনা, থাকলে এই তেল ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করে নিবেন। হিট স্টাইলিং এর সময়ে অনেকে চুলে খুব সামান্য তেল ব্যবহার করে নেয় আগে, এক্ষেত্রে আমন্ড অয়েল ব্যবহার না করাটাই ভালো। কারণ এই তেল দ্রুত গরম হয়ে যায়, তাই স্টাইলিং এর সময় হিটে তেলের তাপমাত্রা বেড়ে স্ক্যাল্প ও হেয়ার ফলিকল দু’য়েরই ক্ষতি হতে পারে। হিট স্টাইলিং এর আগে হিট প্রোটেকটর সিরাম বা স্প্রে ইউজ করুন।
আমার পছন্দের আমন্ড অয়েল
আমার ফেবারিট আমন্ড অয়েল হচ্ছে Skin Cafe Almond Oil (Cold Pressed)। হেয়ার কেয়ার ছাড়াও ত্বকের যত্নে আমি এই তেল ব্যবহার করি। কোল্ড প্রেসড, ১০০% ন্যাচারাল, আনরিফাইন্ড হওয়াতে বাদাম তেলের সব গুণাগুণ এতে একদম ইনট্যাক্ট থাকে। নন-অ্যালার্জিক হওয়াতে ব্যবহার করতে পারেন নিশ্চিন্তে।
ড্রাই ও ড্যামেজ হেয়ার রিপেয়ারে আমন্ড অয়েলের ব্যবহার জেনে নিলেন আজ। যাদের চুল একদম ড্রাই, রাফ ও ফ্রিজি, তারা হেয়ার কেয়ারে ইনক্লুড করুন এই তেল। অনলাইনে অথেনটিক বিউটি প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন।
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক