আমার শৈশব কেটেছে খুব আনন্দে। কারণ বুঝতে শেখার পর থেকে পড়ার বইয়ের অভাব কখনও আমার হয় নি। ক্লাসের বই যে খুব পড়তাম তা নয়, কিন্তু ক্লাসের আর দশজন সহপাঠীর চেয়ে জগত সম্পর্কে দু’টা জিনিস বেশি জানতাম। এ আনন্দ খুব ফেলনা নয়! বরঞ্চ সেই বই পড়তে শেখার বেলা থেকে এখন পর্যন্ত বই পড়ার অভ্যাসটা আমায় নানাভাবে সুবিধা দিয়েই যাচ্ছে! কি রাস্তায় চলতে, কি কোন সমস্যা সমাধানে, কি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়, কি ক্যারিয়ারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে – সমস্ত রকমের জীবনসংগ্রামে বই পড়ে পাওয়া শিক্ষাগুলো আমাকে পথ দেখিয়েই যাচ্ছে। কাজেই ছোটবেলাতেই বই পড়ার অভ্যাস, অর্থাৎ স্কুলের বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য সব বই পড়ার অভ্যাসটা শিশুর মধ্যে তৈরি করে দেয়াটা খুব জরুরী। আমাদের অভিভাবকদের অনেকেরেই ধারণা যে, গল্পের বই পড়ার মানে হচ্ছে স্কুলের পড়া থেকে অমনযোগী হয়ে প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে পড়া! খুবই ভুল একটা ধারণা। একেতো পড়াশোনা কোন প্রতিযোগিতার বিষয়ই নয়, তার ওপর শুধুমাত্র স্কুলের বই আপনার শিশুকে কোনদিনই বাস্তব জীবন সম্পর্কে কোন ধারণা দিবে না! আর বই বলতে শুধু গল্পের বই-ই বা হতে যাবে কেন? বই হতে পারে বিজ্ঞানের, হতে পারে ভ্রমণের, হতে পারে নিরেট আনন্দের কিংবা হতে পারে কারও জীবনী! পুঁথিগত শিক্ষা থেকে তাই জীবনশিক্ষাটা শৈশব থেকেই পেতে থাকাটা এক প্রকারের আশির্বাদ।
কিন্তু আমরা অনেক সময়েই বাচ্চাকে বা কিশোরবয়সি ছেলেটা বা মেয়েটাকে কী বই পড়তে দেব, সেটা ঠিক করতেই হিমশিম খেয়ে যাই। বয়েস অনুযায়ী কোনটা বাচ্চার পড়া উচিত, তার ধারণা হয়ত আমাদের অনেকেরই নেই। সত্যি বলতে কি, বাচ্চার সামনে পড়ার মত যা থাকবে, তা-ই গোগ্রাসে গিলে ফেলতে পারাটা এক ধরনের সফলতা। সত্যি বলছি, বই পড়ে কেউ কখনও নষ্ট হয় না। তারপরেও ঠিক কিভাবে শুরু করবেন বাচ্চার বই পড়ার অভ্যাস জাগিয়ে তোলাটা, তা একটু বলে দিচ্ছি।
০১। পারিবারিকভাবে বাড়িতে বই পড়ার একটি পরিবেশ তৈরি করে রাখুন। এলোমেলো একটা-দু’টো দামি বই বেডরুমে ফেলে না রেখে একটা সংগ্রহ তৈরি করুন নানা পদের বই দিয়ে। বসার ঘর বা সুবিধামত জায়গায় একটা লাইব্রেরি তৈরি করে নিন। ধরন অনুযায়ী বইগুলোকে আলাদা করে লেবেল করেও রাখতে পারেন।
০২। এই কম্পিউটার, স্মার্ট ফোন আর ইন্টারনেটের যুগে শিশুর নেশা যে ঐ স্পিডি জিনিসগুলোর প্রতিই নিক্ষিপ্ত হবে, সেটা বোধ হয় আর বলে দেয়া লাগে না। সেজন্যেই বলছি, শিশুর পড়ার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিন, যে দিনের অমুক সময়টিতে প্রতিদিন একটি করে বই যেন পড়ে। এ কাজে উৎসাহিত করতে আপনার শিশুকে ছোটখাটো পুরষ্কার বা সারপ্রাইজ দেয়ার ব্যাবস্থাও রাখতে পারেন।
০৩। রাতে ঘুমানোর আগে অনেক শিশুই গল্প শোনার বায়না ধরে। সে সময় বানিয়ে গল্প বলতে গিয়ে দিশে না হারিয়ে কোন একটি বই থেকে পড়ে শোনান। আমার এক ভাগ্নে আছে, গল্প শোনার চেয়ে বই দেখে পড়ে অন্যকে শোনাতে সে বেশি পছন্দ করে। এটাও একটা ভালো প্র্যাকটিস। আপনি নিজে গল্প না পড়ে শিশুটিকে দিয়েও পড়াতে পারেন। এতে শুধু যে পড়া হবে, তাই না। উচ্চারণ, শব্দক্ষেপণ ইত্যাদির উন্নয়নও ঘটবে।
০৪। প্রথম প্রথম বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট করতে শিশুর পছন্দের চরিত্রকে নিয়ে লেখা বই বা কমিক কিনে দিতে পারেন। রঙচঙে বই বাচ্চাদের অনেক আকর্ষণ করে। পপ-আপ বইও মনোযোগ আকর্ষণের আরেকটি ভালো জিনিস।
০৫। শিশুরা খুব অনুকরণপ্রিয় হয়। কাজেই আপনি নিজে খুব পড়ুয়া না হলে, অন্তত শিশু আপনাকে খুব একটা পড়াশোনা করতে না দেখলে পড়ার তাগিদ নিজেও অনুভব করবে না। তাই নিজেও নিয়ম করে একটা সময় বই পড়ার জন্য রাখুন। অভ্যাসটা ধীরে ধীরে আপনার শিশুর মধ্যেও এসে যাবে আশা করা যায়।
০৬। পুরষ্কারের কথাতো আগেই বললাম। এবার বলি প্রতিযোগিতার কথা। তবে এই প্রতিযোগিতা কোন অসুস্থ প্রতিযোগিতা নয়। বই পড়ার প্রতিযোগিতার কথা বলছিলাম। আপনার পরিবারে একাধিক শিশু-কিশোর থেকে থাকলে তাদের মধ্যে বই পড়ার প্রতিযোগিতা আয়োজন করুন। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীকে বই দিয়েই পুরস্কৃত করুন। তাছাড়া স্কুলগুলোতে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া কর্মসূচীগুলোতে আপনার বাচ্চাদেরকে অংশ নিতে দিন। কথা দিচ্ছি, খুব অল্প বয়েসেই তারা খুব ধনবান হবে, বৈষয়িক সম্পত্তিতে নয়, বিদ্যে-বুদ্ধিতে!
আর তাছাড়া যেকোনও উপলক্ষ্যতেই কিছু গিফট করতে হলে বইকেই বেছে নিন। ফলাফল না হয় পরেই বুঝলেন!
০৭। নিয়ম করে সারা বছর অনুষ্ঠিত সব ধরনের বই মেলায় সন্তানদেরকে নিয়ে যান। তাদের পছন্দে বই কিনতে দিন। পারলে মেলায় উপস্থিত শিশুতোষ লেখকদের সাথে আলাপও করিয়ে দিন। বিপুল উৎসাহ পাবে।
০৮। পাবলিক লাইব্রেরি, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ইত্যাদি লাইব্রেরিতে আপনার বাসার শিশুকিশোরদের সদস্য বানিয়ে দিন। বই পড়া তাহলে একটা নিয়মের মধ্যেই চলে আসবে। আর শুধু বাংলা সাহিত্য বা অনুবাদ নয়, ইংরেজি সাহিত্যেও খানিক নজর দেবেন। ব্রিটিশ কাউন্সিলের ইয়াং লার্নার্স প্রোগ্রামেও তাই এদেরকে ভর্তি করিয়ে দিতে পারেন। সব ধরনের সাহিত্যের সাথেই পরিচয় থাকাটা জরুরী, তবে তা ছোটবেলা থেকেই শুরু হোক না!
০৯। শিশুর পড়ার উন্নতি হচ্ছে কি না, বা কোন সমস্যা থাকছে কিনা, সেটাও নিয়মিত চেক করুন। অবস্থা বুঝে ব্যাবস্থা নেবেন, তবেই না বিভ্রান্তি দূর হবে।
১০। শিশুর সাথে নিয়মিত সাহিত্য নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনাও করতে পারেন। তার কথা মন দিয়ে শুনেন, তাকে বুঝতে দিন যে, আপনি তার ভাবনাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এতে করে সাহিত্যের প্রতি তার উৎসাহ বাড়বে বৈ কমবে না।
১১। শিশুকে নানা ধরনের বই কিনে দিয়ে, সেগুলো পড়ে তার কী অনুভূতি হচ্ছে সেটা আলোচনার পাশাপাশি তাকে লিখতেও উৎসাহ দিতে পারেন। এতে করে তাদের মধ্যে লেখালেখির অভ্যেসটাও তৈরি হয়ে যাবে। ছড়ার বই কিনে দিয়ে, ছড়া বা কবিতা লিখতে উৎসাহ দিতে পারেন। আমার এক প্রতিবেশি শিশু গানও লিখে!
কোথাও বেড়াতে নিয়ে গেলে ফিরে এসে ডায়েরি লেখার মত করে তাকে ভ্রমণ কাহিনী লিখতেও উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। এতে ভ্রমন-সাহিত্যের প্রতি উৎসাহ বাড়তে পারে। এমনি করে যেকোনও বিষয়ে শিশুর মধ্যে এক ধরনের আগ্রহ তৈরি করে দেয়া খুবই সহজ। শুধু আগ্রহ তৈরি করে দিলেই হবে না, সেগুলোকে গুরুত্বও দিতে হবে আপনাকেই। নাহলে আবার আগ্রহ তৈরি হয়ে হারিয়েও যেতে পারে!
এবারে আসি কোন ধরনের বইগুলো আসলে শিশু-কিশোরদের পড়ার উপযোগী। চলুন একটি তালিকা তৈরি করে ফেলা যাকঃ
একেবারে ছোট বাচ্চাদের বই পড়া শুরু করার জন্য দিতে পারেন ছড়ার বই। এক্ষেত্রে সুকুমার রায়ের সমগ্র শিশুসাহিত্য হতে পারে দারুণ একটা খোরাক। ছড়া থেকে শুরু করে সায়েন্স ফিকশান, কী নেই তাতে? পরিবারে একটা ছোটখাটো পণ্ডিত তৈরি করতে গেলে এই বইয়ের বিকল্প আর কিছুই নেই। এরপর বলা যায় কাজী নজরুল ইসলামের ছড়ার বইগুলোর কথা। শিশুর মধ্যে সৃজনশীলতা তৈরিতে এর বেশি আর কিছু বোধ হয় লাগে না।
এছাড়া লুতফর রহমান রিটনের লেখা বাচ্চাদের জন্য কিছু ছড়ার বই আছে, সেগুলোও বেশ কাজে দেবে, আনন্দতো দেবেই।
এরপর আছে রূপকথার বই। আমাদের দেশে রূপকথার বই হিসেবে ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ বেশ জনপ্রিয়। পাশাপাশি আছে ডিজনিল্যান্ডের রঙ্গিন বইগুলো। যেকোনও বাচ্চার মনে বইয়ের পোকা উসকে দিতে এদের জুড়ি নেই যেন। এছাড়াও বিদেশি যেমন রাশিয়ান, চাইনিজ ইত্যাদি রূপকথার বইও দেয়া যেতে পারে।
এ বয়সে বাচ্চারা রঙচঙে বই খুব ভালোবাসে। সেক্ষেত্রে পপ-আপ বইগুলো খুব আনন্দ দিতে পারে। তাছাড়া কমিক বই দেয়া যেতে পারে, যেমন টিনটিন, অ্যাস্টেরিক্স, চাচা চৌধুরী, হাদা-ভোদা, নন্টে-ফন্টে, বাটুল দ্য গ্রেট ইত্যাদি।
ধীরে ধীরে পড়ে বুঝতে শেখার মত ক্ষমতা যত বাড়বে, তখন থেকে আস্তে আস্তে মুক্তিযুদ্ধের বই পড়তে দিতে হবে, গল্প হলে সহজে বুঝতে পারবে আর ইতিহাস বা প্রবন্ধগুলো ভাবতে শেখাবে। এছাড়া দেশের বা পৃথিবীর ইতিহাস বিষয়ক যেকোনও বই এই বয়েসের জন্য পারফেক্ট! ভূগোলটাও জরুরী সেইসাথে। মুনতাসির মামুনের ঢাকার ইতিহাসবিষয়ক বইগুলোও দিতে পারেন। সেগুলো পড়তে বেশ মজার, মোটেও খটমট নয়।
মুহম্মদ জাফর ইকবালের শিশুতোষ বই, প্রবন্ধ, সায়েন্স ফিকশান চলবে, চলতেই থাকবে। শাহরিয়ার কবিরের বইগুলোও শিশু-কিশোরদের জন্য খুবই উপযোগী। হুমায়ূন আহমেদের কিছু বই আছে শিশু-কিশোর উপযোগী, সেগুলোর মধ্যে সায়েন্স ফিকশান আর ভৌতিকগুলো দারুণ মজার। এছাড়া একটা বয়েসে গিয়ে হিমু, শুভ্র বা মিসির আলিরাও বাচ্চাদেরকে বেশ ভালোই ভর করে!
আইজ্যাক অ্যাজিমভের সায়েন্স ফিকশানগুলো এই বয়সে বাইবেলের মত গুরুত্ব পাওয়া উচিত। বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহ তৈরি করতে এসবের জুড়ি নেই। পাশাপাশি অন্যান্য বিদেশি লেখকদের বই যেমন, এইচ জি ওয়েলস, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, মার্ক টোয়েন, জুল ভার্ন প্রমুখের বই সে অনুবাদ হোক আর মূল, পড়তে হবে।
সেবার প্রকাশনীর বেশ কিছু বই আছে, যেমন তিন গোয়েন্দা বা কুয়াশা সিরিজ (সায়েন্স ফিকশান)। মাসুদ রানা সিরিজও চলতে পারে। এছাড়া নানারকম ওয়েস্টার্ন সিরিজতো আছেই। রহস্যবিষয়ক বইগুলো আসলে বুদ্ধিমত্তা প্রখর হতে সাহায্য করে।
আমি যখন ক্লাস সেভেন-এইটে পড়তাম, তখন আমাকে মাসুদ রানা পড়তে দেয়া হতো না কিছু অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট থাকায়। লুকিয়ে রাখা হত। কিন্তু আমি খুঁজে বের করে ঠিকই পড়ে ফেলতাম। লুকিয়ে রাখার কাজটা বাচ্চাকে দেখিয়ে করা যাবে না। এতে নিষিদ্ধের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায়। তবে সত্যি বলতে গেলে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য লেখা বই কোন কিশোর বা কিশোরী যদি পড়েও ফেলে, তাতে তেমন কোন ক্ষতি হয় না। কারণ এই বয়সে সে সব কিছুই বোঝার ক্ষমতা রাখে। তবে আপনার কাজ হল তাকে সীমারেখাটা কৌশলে বুঝিয়ে দেয়া। সাহিত্য দু’রকম হতে পারে। এক, প্রাপ্ত বয়স্কদের সাহিত্য আর দুই, অশ্লীল সাহিত্য। আপনার সন্তান প্রাপ্ত-বয়স্ক আর অশ্লীল সাহিত্যের গ্যাপ বোঝে কি না, সেটা বুঝে নেয়া এবং তাকে বুঝিয়ে দেয়াটাই আপনার দায়িত্ব!
যাই হোক, গোয়েন্দা-সাহিত্য নিয়ে কথা হচ্ছিল। সত্যজিতের ফেলুদা সিরিজ সন্তানের হাতে এই সময়ে তুলে দিতে ভুলবেন না যেন! একটা অজানা জগত খুঁজে পাবে! সত্যজিতের প্রায় সমস্ত বইতেই সেই অজানা জগতে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা রয়েছে। ‘প্রফেসর শঙ্কু ’ তাঁর সেরকমই এক অনবদ্য সৃষ্টি। সায়েন্স ফিকশানের মধ্য দিয়ে লেখক অদ্ভুত এক কল্পনার জগতে নিয়ে গেছেন এই বইতে।
এরপর থাকছে সৈয়দ মুজতবা আলি কিংবা শিবরাম চক্রবর্তীর মত বাঘা লেখকদের বইগুলো। জ্ঞানের সীমা ছাড়াতেই থাকবে তাঁদের লেখা বইগুলোতে। আর সাথে রম্য ফ্রি!
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্পতো অবশ্যপাঠ্য একটি জিনিস। দর্শন কত অদ্ভুত হতে পারে, রবিঠাকুর পড়া না হলে তা জানা মুশকিলই বটে। ধীরে ধীরে তাঁর উপন্যাস, কাব্যগ্রন্থগুলোও দিতে হবে। আর কাজী নজরুল ইসলামের নাটক, উপন্যাস পড়ার আগে তাঁর আগুন-ঢালা কবিতাগুলো আগে পড়তে দেয়া উচিত। এরপর থাকে শরৎচন্দ্র, তারাশংকর, শীর্ষেন্দু, সমরেশ মজুমদার, সমরেস বসু, বুদ্ধদেব গুহ, বুদ্ধদেব বসু, বিমল কর, হর্ষ দত্ত, শওকত ওসমান, সৈয়দ শামসুল হক প্রমুখ।
কবিতার অভ্যাস আমাদের মাঝে বোধ হয় খানিক কমই আছে। রবিঠাকুর কিংবা নজরুল বাদে তাই জীবনানন্দ, সুকান্ত কিংবা হালের নির্মলেন্দু দিয়েই তবে শুরু করে দিতে পারেন সন্তানের কবিতার ভ্রমণ! বলা তো যায় না, দেখা গেল কবিতার টানে আবৃত্তিকে সে করে ফেলল তার জীবনেরই একটি অংশ!
মারিও পুজো, জে কে রাউলিং, ড্যান ব্রাউনরাও আপনার সন্তানকে দিতে পারে অজানা কোন এক জীবন দর্শন।
আর হ্যাঁ ঠিক এ বয়স থেকেই বিভিন্ন মনীষীর আত্মজীবনী পড়ে শেষ করে ফেলা অত্যাধিক জরুরী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শের-এ-বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, প্রীতিলতা, সূর্যসেনদেরকে জানার বয়স এটাই। মহাত্মা গান্ধী, মাদার তেরেসা, জোয়ান অভ আর্ক প্রমুখরাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তবে সবার আগে স্বদেশের ইতিহাস, গৌরব আর নায়কদেরকে চেনা উচিত অনেকটা মানচিত্রের মতই।
আর মাঝে মাঝে নির্মল আনন্দের জন্য শুধুই জোকসের বইও পড়া যেতে পারে। তাতে সেন্স অভ হিউমার খানিক গতি পায়।
সবশেষে একটি কথা। এককালে স্কুলে যাওয়ার আগে আমরা ‘আদর্শলিপি’ নামক একটি বই পড়তাম। এখনকার বাচ্চাদের সেগুলো পড়ানো হয় কিনা জানি না। নৈতিকতা শেখার বয়েস ছোটবেলাতেই, আপনার সন্তানকে তাই শুরুতেই একটি আদর্শলিপি কিনে দিতে একেবারেই ভুল করবেন না। হ্যাপি রিডিং!
লিখেছেনঃ নুজহাত ফারহানা