আমরা আমাদের রোজকার জীবনে যতগুলো রোগের নাম আজকাল শুনি তার মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। ডায়াবেটিস এখন আর চল্লিশোর্ধ মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ত্রিশোর্ধ বয়সের নারী পুরুষ থেকে শুরু করে গর্ভবতী নারী, কিশোর- কিশোরী এমনকি বাচ্চারা পর্যন্ত ডায়াবেটিসের শিকার হচ্ছে। কারণটা কখনো বংশগত আবার কখনো অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। ডায়াবেটিস রোগটি নানারকম হতে পারে। একে মূলত চারভাগে ভাগ করা হয়েছে।
টাইপ ১ ডায়াবেটিসঃ
টাইপ ১ ডায়াবেটিস এক ধরনের ক্রনিক ডায়াবেটিস। এই ধরণের ডায়াবেটিসকে ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিসও বলা হয়ে থাকে। প্যানক্রিয়াস থেকে যখন খুব কম পরিমাণ ইনসুলিন উৎপন্ন হয় তখন এই ধরনের ডায়াবেটিস দেখা যায়।
লক্ষণঃ
যদিও সঠিক পরীক্ষা ছাড়া ডায়াবেটিসের প্রকার বোঝা যায় না। তবে টাইপ ১ ডায়াবেটিসের কিছু সাধারণ লক্ষণ আছে। সেগুলো হল-
-প্রচুর পানি পিপাসা পায়।
-ঘন ঘন ক্লান্তি লাগে।
-খিদে পাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যায়।
-মহিলাদের মেনস্ট্রুয়েশন সাইকেলে অনিয়ম দেখা যায়।
-তলপেটে ব্যথা করে।
-বারবার প্রসাবের বেগ আসে।
প্রয়োজনীয় ডায়াগোনোসিসঃ
এই ডায়াবেটিস সম্পর্কে নিশ্চিত হবার জন্য মূলত তিন ধরনের টেস্ট করাতে হয়। সেগুলো হল ইউরিন অ্যানালিসিস (শরীরে অ্যালবুমিন, গ্লুকোজ, কিটন বডি আছে কিনা বুঝা যাবে), ফাস্টিং ব্লাড গ্লুকোজ, এইচবিএওয়ানসি (গ্লাইকো সিলেটেড হিমোগ্লোবিন) টেস্ট।
চিকিৎসাঃ
ডাক্তারের পরামর্শ যেকোনো উন্নত চিকিৎসা যেমন প্যানক্রিয়াস ট্রান্সপ্লান্ট করানো যায়। এছাড়া নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে। সেই সাথে ডাক্তারের কথা অনুযায়ী ডায়েট মডিফিকেশন করতে হবে এবং লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনতে হবে।
টাইপ ২ ডায়াবেটিসঃ
যখন শরীরে উৎপন্ন ইনসুলিন ঠিকমত কাজ করে না তখন টাইপ ২ ডায়াবেটিস দেখা দেয়।
লক্ষণঃ
-ওজন বেড়ে যায়।
-হার্টের সমস্যা দেখা দেয়।
-সব সময় শরীর খারাপ লাগে।
-সব সময় ক্ষিদে পায়।
-দেখতে অসুবিধা হয়।
প্রয়োজনীয় ডায়াগোনোসিসঃ
এক্ষেত্রেও একই টেস্ট করাতে হবে যেগুলো হল ইউরিন অ্যানালিসিস ( শরীরে অ্যালবুমিন, গ্লুকোজ, কিটন বডি আছে কিনা বুঝা যাবে), ফাস্টিং ব্লাড গ্লুকোজ, এইচবিএওয়ানসি (গ্লাইকো সিলেটেড হিমোগ্লোবিন) টেস্ট।
চিকিৎসাঃ
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। সেই সাথে নিয়মিত ব্যায়ামের একটি রুটিন মেনে চলুন। নিজেকে যতটা সম্ভব স্ট্রেসমুক্ত রাখুন।
জেস্টেশনাল ডায়াবেটিসঃ
গর্ভধারণের সময় যে ডায়াবেটিস হয় তাকেই জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস বলে। এসময় শরীর আগের মত রক্তকে ব্যবহার করতে পারে না। ফলে এই সময় ব্লাড সুগারের পরিমাণ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেড়ে যায়।
লক্ষণঃ
-পানি পিপাসা অনেক বেড়ে যায়।
-দেখতে সমস্যা হয়।
-অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যায়।
-স্কিন, ব্লাডার, ভ্যাজাইনাতে ইনফেকশন হতে পারে।
প্রয়োজনীয় ডায়াগনোসিসঃ
প্রেগনেন্সির ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট এসময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট। এছাড়া প্রেগনেন্সির শুরু থেকে নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা লক্ষ্য রাখতে হবে।
চিকিৎসাঃ
প্রথমত ডাক্তারের পরামর্শ মত ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খেতে হবে। সেই সাথে ডাক্তার অনুমতি দিলে কিছু হালকা ব্যায়াম যেমন হালকা পায়ে হাটা যেতে পারে। এছাড়াও যথাসম্ভব কম ক্যালরিযুক্ত খাবার খেতে হবে।
জুভেনাইল ডায়াবেটিসঃ
সাধারণত বাচ্চাদের মধ্যে এই ডায়াবেটিস দেখা যায়। এক্ষেত্রে সাধারণত যেসব কোষ ইনসুলিন তৈ্রি করে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
লক্ষণঃ
-পানি পিপাসা পাওয়া।
-দেখতে কষ্ট হওয়া।
-ছোটদের ক্ষেত্রে বিছানাতেই প্রস্রাব করে দেয়া।
-বমি পাওয়া।
-ক্ষিদে খুব বেশি বেড়ে যাওয়া।
প্রয়োজনীয় ডায়াগোনোসিসঃ
ব্লাড গ্লুকোজ লেভেল নিয়মিত চেক করান। সেই সাথে বাচ্চার বিভিন্ন অ্যাকটিভিটি মনিটর করতে হবে।
চিকিৎসাঃ
প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ইনসুলিন ইনজেক্ট করাতে পারেন। নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ডায়েট চার্ট মেনে চলাও দরকার।
লিখেছেনঃ সাদিয়া রিফাত ইসলাম
ছবিঃ ন্যাচারালনিউজ.কম