সাধারণত সকল রোগের সাথে খাদ্যের সম্পর্ক রয়েছে। তেমনি বাংলাদেশের ১টি অতি পরিচিত অসুখ হল জন্ডিস। খুব সাধারণ একটি সমস্যা মনে হলেও এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। মূলত যকৃতের প্রাথমিক গোলমাল থেকেই জন্ডিস হয়ে থাকে। দেহের বিভিন্ন কাজে যকৃতের ভূমিকা রয়েছে। এই লিভার এর অন্যতম অসুখ হল জন্ডিস। একে ভাইরাল হেপাটাইটিসও বলা হয়। জন্ডিস হলে রক্তে বিলিরুবিন এর মাত্রা বেড়ে যায়। ১০০ মিলিলিটার রক্তে ১.০ মিলিগ্রামের উপরে বিলিরুবিন থাকলে তাকে জন্ডিস হয়েছে বলা যাবে। চলুন জেনে নেই জন্ডিসের লক্ষণ, পথ্য ও জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা নিয়ে বিস্তারিত।
জন্ডিস এর লক্ষণ
জন্ডিস রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় চোখ, মুত্র, গায়ের রঙ হলদে হয়ে যাওয়া, খিদে না লাগা, দুর্বলতা, কাজে অনীহা, পেট খারাপ, মাথা ধরা, জ্বর ইত্যাদি। এই রোগের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা যায় মস্তিস্ক বাদ দিয়ে পুরো শরীর হলুদ হয়ে যায়। চোখের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়। মল এর রঙ মাটির মত হয়ে যায়।
পথ্য
জন্ডিস এর তেমন কোন মেডিসিন নাই। পথ্য দিয়েই একে নিরাময় করা সম্ভব। এ সময় কোন খাবার বাদ দেওয়া হয় না। তবে যে সকল খাবারে রোগী বিরক্ত হয় সে খাবার না দেওয়াই ভালো। এই ধরনের রোগীদের খাদ্য পরামর্শ হল নরমাল ডায়েট। অর্থাৎ কোন খাবার বাদ দেয়ার দরকার নেই। তবে অবশ্যই এর সঙ্গে থাকবে প্রচুর পানি।
জন্ডিসে খাদ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্য হল যকৃতের ক্ষতিগ্রস্থ কোষ কলার পুনরুৎপাদন করা। যকৃতের উপর চাপ কমানো ও যকৃতকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা। উচ্চ জৈবমূল্যের আমিষ, শর্করা, মাঝারি পরিমাণ স্নেহ ও ভিটামিন গ্রহণের উপর গুরত্ব দেওয়া হয়। প্রাথমিক অবস্থায় রোগীর যখন খাবারের অরুচী থাকে তখন তরল ও নরম খাদ্য অল্প অল্প পরিমাণে বার বার দেওয়া উচিত। রোগীর রুচি ও স্বাস্থ্যের উন্নতির সাথে সাথে খাবার নরমাল করতে হবে। বাড়িতে তৈরি কম তেল ও কম মশলার খাবার রোগীর জন্য ভালো। ভাজা পোড়া এ সময় একটু এড়িয়ে চলা উচিত। এমন খাবার খাওয়া উচিত না যা লিভার এর উপর চাপ ফেলে। তাই তেল যুক্ত খাবার গুলো না দেয়ায় ভালো। কারণ অধিক চর্বি লিভারের বিশ্রামে ব্যঘাত ঘটায়।
জন্ডিস রোগীর পরিহারযোগ্য খাবার
ডুবো তেলে ভাজা খাবার, খাসীর মাংস, গ্যাস উৎপাদনকারী সবজি- পেঁয়াজ, ওলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, ফুলকপি, শিম, ডাটা, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, ইতাদি। এছাড়াও তেতুল, কাঁচা লবণ, এলকোহল, মরিচ, সরিষার তেল, ইত্যাদি পরিহার করা উচিত।
জন্ডিস রোগীর ১ দিনের খাদ্য তালিকার ১ টি নমুনা
সকালের নাস্তা
- দুধ+সুজি পাতলা করে- ১ কাপ
- পাকা কলা- ১টি
- পাউরুটি- ২ পিস
- চা- ১ কাপ
দুপুরের খাবার
- মাছ/মোরগ- মসলা কম করে ১ অথবা ২ পিস
- ভাত- ১.৫ কাপ
- সবজি – ১ কাপ
- ডাল– ১/২ কাপ
বিকালের নাস্তা
- দুধ- ১ কাপ
- বিস্কুট- ২টি বা মুড়ি ১/২ কাপ
রাতের খাবার
- রুটি– ৩টি
- মাছ/ মুরগি- মসলা কম করে ১ অথবা ২ পিস
- সবজি- ১ কাপ
- ঘুমানোর আগে সরবত বা অন্য কোন পানীয়।
ছবিঃ সংগৃহীত – সাজগোজ.কম