আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন নিজেকে আকর্ষনীও দেখাতে গিয়ে আপনাকে সমস্যার মুখে পড়তে হতে পারে? না বুঝে যে কোনও ধরনের বিউটি ট্রিটমেন্ট বা বিউটি পার্লারের চক্কর কাটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে । বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মহিলারা বিউটি সেলুনে বিভিন্ন ধরনের ট্রিটমেন্টের আশ্রয় নেন কিন্তু তারা এটা দেখতে ভুলে যান যে বিউটি পার্লারে যে প্রোডাক্টগুলি ব্যবহৃত হয় সেগুলি ঠিক কিনা । সেখানে সঠিক উপায়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রাখা হয় কিনা । চলুন এক নজরে দেখে আসি আমাদের কী কী বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিতে হবে।
– শরীরের অতিরিক্ত লোম থেকে মুক্তি ও সুন্দর ত্বকের জন্য ওয়াক্সিং সঠিক কিন্তু এর প্রতি আপনার অবহেলা স্কিন ইনফেকশনের কারণ হতে পারে। কারণ ওয়াক্সিংয়ের জন্য ব্যবহৃত ওয়াক্সের কোয়ালিটির উপর সাধারণত কেউই নজর দেন না । এতে সবচেয়ে জরুরি হল পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেওয়া । ওয়াক্সিংয়ের সময় ডিসপোজাল স্ট্রিপ্স ব্যবহার করা উচিত৷ কাপড়ের স্ট্রিপ্স একেবারেই নয় । অনেক সময় একসঙ্গে অনেক কাস্টমারের ওয়াক্সিং করা হয় এবং একই ওয়াক্স স্ট্রিপ্সের ব্যবহার করা হয়, যা সরাসরি ইনফেকশনের কারণ । তাই এরপর থেকে ওয়াক্সিংয়ের সময় খেয়াল রাখবেন যাতে নতুন ওয়াক্স ও স্ট্রিপ্স ব্যবহার করা হয় । ওয়াক্স করার সময় যে টুল ব্যবহার করা হয় তাও যেন স্টেরিলাইজড হয় । অন্য কারও ত্বকে ব্যবহৃত ওয়াক্স বা টুল ব্যবহারের ফলে ইনফেকশন হতে পারে ।
– আজকাল চুলে কালার করার ফ্যাশন তুঙ্গে ৷ মেয়েরা হেয়ার স্ট্রিপ্স কালারিং বা হেয়ার ব্লিচ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে । কিন্তু কালারিং বা ব্লিচ পুরো চুলেই হোক বা সামান্য কিছু অংশেই হোক ক্ষতির পরিমাণ একই থাকে ৷ হেয়ার ডাই বা কালারে বিভিন্ন রকমের কেমিক্যাল থাকে । যেমন, পিপিডি, অ্যামোনিয়া, সালফেট, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড এগুলি সবই স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর । এতে অ্যাস্থমা বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে ৷ বেশ কিছু হেয়ার ডাই ও ব্লিচে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, অ্যামোনিয়াম সালফেট থাকে যা ত্বকেও ক্ষতি করতে পারে। এছাড়াও বারবার বা কম সময়ের ব্যবধানে চুলে ট্রিটমেন্ট করলে চুলের আগা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং চুল পড়ার সমস্যা বেড়ে যায় ।
– হেয়ার স্ট্রেটনিং এখন খুবই সাধারণ ব্যাপার । তাই চুল স্ট্রেট করার জন্য বাজারে প্রচুর স্ট্রেটনিং আয়রন পাওয়া যায় । কিন্তু এই ধরনের হেয়ার ট্রিটমেন্ট চুলের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর৷ বাড়িতে হোক বা পার্লারে চুল স্ট্রেট করার জন্য কেমিক্যাল, স্ট্রেটনার ও ড্রায়ার ব্যবহার করা হয় ৷ এগুলি সবই চুলের আর্দ্রতা কমিয়ে চুলকে রুক্ষ করে দেয়৷ ফলে চুল দুর্বল হয়ে পড়ে ও খুব সহজেই পড়ে যায় । যে কোনও ধরনের স্ট্রেটনিং মাত্র কিছু সময়ের জন্যই হয় এবং একে বার বার করার প্রয়োজন পড়ে৷ ফলে চুলে বার বার কেমিক্যাল ব্যকরতে হয় যা চুলের ব্যাপক ক্ষতি করে ।
– হাত-পা সুন্দর রাখার জন্য পেডিকিওর-ম্যানিকিওর করা জরুরি। কিন্তু এই ধরনের ট্রিটমেন্টের জন্য সবচেয়ে বেশি বিউটি টুলসের প্রয়োজন হয়। এই টুলস থেকেই হাজারো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে। এই সরঞ্জামগুলি সবই আপনার ত্বকের সংস্পর্শে আসে। তাই এগুলি যদি স্টেরেলাইজ না থাকে তবে এগুলি থেকে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে । পেডিকিওর করার সময় গরম পানি ও সাবানের ব্যবহার করা হয়ে থাকে, এতেও হাজারো ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে ।কারণ সমস্ত ব্যাকটেরিয়া মারার জন্য পানিকে ভালোকরে গরম করা প্রয়োজন । এছাড়াও অনেক সময় সাবানের কোয়ালিটিও খারাপ হতে পারে ।
আপনি নিশ্চয়ইকখনও চাইবেন না নিজেকে সুন্দরী দেখাতে গিয়ে শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা ভোগ করতে৷ তাই বিউটির সঙ্গে নিজের স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিন । যেকোনও বিউটি ট্রিটমেন্টের আগে সেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নিন সঙ্গে পরিচ্ছন্নতার খেয়াল রাখুন ।
লিখেছেনঃ রোজেন
ছবিঃ ডিজাইননেক্সট.কম