কথায় আছে নারী, সুন্দর শাড়িতে কারণ শাড়ি তার সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে বহুগুণ। এইকথাটা একদমই সত্যি। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আজকের আধুনিক নারীর পোশাকের অনেক পরিবর্তন ঘটেছে কিন্তু আজকের আধুনিক নারীও কিন্তু শাড়িকে ভুলে যায়নি। তাই আজও স্পেশাল দিনগুলোতে আজকের আধুনিকার প্রথম পছন্দ কিন্তু শাড়ি।
[picture]
আজকের আলোচনা তাই শাড়িকে নিয়েই। অনেকেরই ধারণা আছে হালকা রঙের পোশাক পরলে নাকি নিজেকে বয়স্ক দেখায়। তাই আমরা অনেকেই আছি যারা লাইট কালারগুলোকে অবহেলা করে যাই। লাইট কালারগুলোর একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এদের শুদ্ধতা যা পরলে নিজেকে অনেক শুদ্ধ ও সুন্দর লাগে। কিন্ত সঠিকভাবে যদি এই রঙের শাড়ি পরা না যায় তাহলে কিন্তু ভালো লাগার পরিবর্তে বিপরীত হতে পারে অর্থাৎ তাতে নিজেকে অনেকটা বয়স্ক দেখাতে পারে।
যদি শাড়ি খুব হালকা রঙের হয় তবে পছন্দের তালিকাতে কিছু শাড়ি আছে যেগুলো প্রত্যেকের কাছে থাকাটা মাস্ট। সেগুলো হল ঢাকাই জামদানী, কেরালা কটন, তাঁত, হ্যান্ডলুম শাড়ি, শিফন শাড়ি, পিওর সিল্ক।
জেনে নেওয়া যাক ঠিক কীভাবে হালকা রঙের শাড়িতে নিজেকে সুন্দরভাবে সাজানো যায় যাতে নিজেকে বয়স্ক না দেখায় আর উৎসবের দিনে আপনি হয়ে ওঠেন অনন্যা ও সকলের মধ্যমনি।
গাঢ় রঙের ব্লাউজঃ
যদি হালকা রঙের শাড়ি পরেন তাহলে ব্লাউজের রঙটা গাঢ় হতে হবে। শাড়ির রঙ যদি সাদা হয় তাহলে লাল, ডার্ক নীল, পার্পল, কালো, ম্যাজেন্টা বা যেকোনো ডার্ক রঙের ব্লাউজ পরা যেতে পারে। যদি শাড়ি হয় হালকা রঙের আর তাতে কোন কাজ না থাকে তাহলে তার সাথে যেকোনো ডিজাইনার ব্লাউজ পরলে যেকোনো সাধারণ শাড়ি হয়ে উঠবে অসাধারণ। ডিজাইনার ব্লাউজ না থাকলে বেছে নিতে পারেন ব্রকেট বা চান্দেরি ব্লাউজ।
ব্লাউজের ধরন বা কাটিংঃ
হালকা রঙের শাড়ি পরলে ব্লাউজের রঙ যেমন নজরে রাখার বিষয় ঠিক তেমনি কাটিং এর দিকেও নজর রাখাটা জরুরি। ব্লাউজ হতে পারে ফুল হাতার বা থ্রি কোয়ার্টার। আর যদি পছন্দ হয় ছোট হাত তাহলে সেটা হাত কাটা বা তার থেকে একটু বড়ও হতে পারে। এক্ষেত্রে নেটের হাতও বানানো যেতে পারে। ব্লাউজকে সাজিয়ে নেওয়া যেতে পারে নিজের পছন্দ মতন। ব্লাউজের হাতায় লাগিয়ে নিতে পারেন পছন্দের মত জড়ি। এক্ষেত্রে ব্লাউজের পিঠটা একটু ডিপ হতে পারে আর সেখানে লাগিয়ে নিন পছন্দের মত লাটকান। আগে লাটকান শুধুমাত্র ঘাগরাতেই লাগানো হত কিন্তু এটা আপনি শাড়ির সাথে পরার জন্য নিজের ব্লাউজে লাগিয়ে নিতে পারেন।
মনে রাখতে হবে খুব সাধারণ শাড়ি হলেও শুধু ব্লাউজ দিয়েই কিন্তু আপনার সাজকে অপূর্ব করে তুলতে পারেন। খুব ভালো লাগবে যদি ব্লাউজটা সাধারণ ঝুলের থেকে একটু বড় হয় অর্থাৎ ব্লাউজের ঝুল হতে পারে কোমর অবধি বা কোমর থেকে একটু উপরে। যদি এই ধরনের ব্লাউজ পরা যায় তাহলে আপনাকে সবার থেকে আলাদা দেখাবে ও আপনি কিন্তু ভিড়ে সবার নজর নিশ্চয়ই কেড়ে নেবেন।
গয়নাঃ
শাড়ির রঙ যদি হয় হালকা আর তাতে কোন কাজ না থাকে বা খুব সামান্য কাজ থাকে তাহলে গয়না কিন্তু হতে হবে বেশ ভারী। এক্ষেত্রে আপনি বেছে নিতে পারেন স্টোনের অরনামেন্টস বা নতুন ধরনের কিছু যেমন অক্সিডাইজড গয়না বা টেম্পল গয়না। তবে মনে রাখতে হবে যে যদি শাড়িতে অনেক কাজ থাকে তাহলে ভারী গয়না না পরাই ভালো। কানে যদি ভারী এবং বড় দুল পরা হয় তাহলে গলায় কিছু না পরলেই ভালো লাগবে। শাড়িতে যদি কোন বিশেষ রঙের প্রাধান্য থাকে তাহলে সেই রঙের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কোন অরনামেন্টস পরলে বেশ ভালো লাগবে। মনে রাখতে হবে হালকা রঙের শাড়ি পরলে গয়না একটু কালারফুল হলে ভালো হয়। এক্ষেত্রে গয়নার ডিজাইন হওয়া উচিত একটু মডার্ন। সাবেকী শাড়ি আর মডার্ন গয়না হল এখনকার নতুন ট্রেন্ড।
মেকাপঃ
বেস মেকআপ খুব বেশি ডার্ক হবেনা। লিপস্টিক ডার্ক হলে বেশ ভালো লাগবে। ওয়ার্ম রেড, গোলাপি এই রঙ দুটো সব থেকে ভালো লাগবে হালকা রঙের শাড়ির সাথে। নেইল পালিশের রঙ আর লিপ্সটিকের রঙ এক হলে ভালো মানাবে।
আনুষঙ্গিক জিনিসঃ
এই ধরনের শাড়ির সাথে কন্ট্রাস্ট কালারের ছোট ব্যাগ বা বটুয়া সব থেকে ভালো মানাবে। চান্দেরি বটুয়া সব থেকে ভালো মানাবে হালকা রঙের শাড়ির সাথে। সাথে পরে নিতে পারেন একটা মানানসই ব্রোচ।
জুতাঃ
আপনি পরে নিতে পারেন হালকা কোনো পার্টি সু। স্টিলেটো পরে যদি আপনি আরাম বোধ করেন তাহলে সেটাও পরতে পারেন।
মনে রাখতে হবে এইভাবে আপনার সাজটা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের এক অপরূপ মেলবন্ধন করবে যার ফলে আপনাকে আরও অনেক বেশি আধুনিকা লাগবে। এই ধরনের সাজ সব থেকে ভালো লাগবে ট্র্যাডিশনাল শাড়ি যেমন ঢাকাই জামদানী, কেরালা কটন, তাঁত, হ্যান্ডলুম শাড়ি, শিফন শাড়ি, পিওর সিল্ক ইত্যাদির সাথে।
এই কয়েকটা ছোট ছোট বিষয় নজরে রেখে এবার আপনি নিশ্চিন্তে পার্টির জন্য রেডি হতে পারবেন এবং বলাই বাহুল্য যে এভাবে আপনি সবার থেকে আলাদা লাগবেন। এই সাজ শুধু অনুষ্ঠানই না অফিস পার্টি, অফিস ইত্যাদি জায়গায় পরে যেতে পারেন।
লিখেছেনঃ নন্দিনী পোদ্দার
ছবিঃ নন্দিনী পোদ্দার