বাজারে হয়ত অনেকেরই চোখে পড়েছে বীটরুট নামক লাল রঙের এই খাদ্য উপাদানটি। সাধারণত সালাদের সাথে খাওয়া হয় এটি। এটি এমন কোনো দুর্লভ বস্তু নয়। আজকাল গ্রামেগঞ্জে, শহর বাজারে অহরহ দেখা যায়। ভিটামিন এ, সি এবং কে ছাড়াও এতে ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, কপার, সালফার, সিলিকা এবং ক্লোরিনের মত খনিজ পদার্থ রয়েছে। এই পুষ্টি উপাদানগুলো রক্তের লাল লোহিত কণিকা উৎপন্ন করে, রক্ত উন্নত করে সেই সঙ্গে হিমোগ্লোবিন মাত্রা বৃদ্ধি করে। বীট রস নাইট্রেট এর উৎকৃষ্ট উৎস। এতে সামান্য পরিমাণে ডি অ্যামিনো অ্যাসিড এবং আলফা অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে। রোমানরা জ্বর এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য এই বীট রুটের রস ব্যবহার করত। কথা না বাড়িয়ে চলুন দেখে আসি এর বিভিন্ন গুণ।
[picture]
স্বাস্থ্যের জন্য বীট রুট:
গবেষণায় পাওয়া গেছে বীটের ভেতর বিটানিন নামক উপাদান আছে যা ক্যান্সার বিরোধী। এটি স্কিন এবং লিভারের টিউমারের চিকিৎসায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। ধূমপায়ীদের খাদ্য তালিকায় বীটের রস রাখা উচিত। কেননা এটি ক্যান্সার গঠনের এজেন্ট শরীর থেকে নির্গমনে সহায়তা করে।
বীটরুটে বেটালিন রয়েছে যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রদাহ বিরোধী এবং ফাঙ্গিসাইডাল। এই উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফেনলিক কম্পাউনড সেল এবং ডি এন এ এর ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে।
বীট রসে থাকা ফলিক অ্যাসিড গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কেননা এটি অনাগত শিশুর বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি হওয়াতে বাঁধা দেয়। এমনকি শিশুর ত্বকে একটি গোলাপি আভা এনে দেয়। এটা শিশুর টিস্যুর বৃদ্ধি ও স্পাইনাল কর্ড সঠিক বিকাশে সহায়ক।
বীটরুট lutein এবং zeaxanthin মত ক্যারটিনয়েডের ভালো উৎস। এই দুটি যৌগ চোখের স্বাস্থ্য বিশেষ করে রেটিনার জন্য খুবই উপকারী। কাঁচা বীট রস পান সহজে ক্যারটিনয়েড শোষণ করতে সাহায্য করে। তাই এটি কাঁচা খান, যখন রান্না করা হয় তখন এই ক্যারটিনয়েড সহজে ধ্বংস হয়ে যায়।
ত্বক ও চুলের যত্নে বীটরুট:
বীটরুট ছোট ছোট পিস করুন তারপর রোদে শুকিয়ে নিন। তারপর মিহি করে গুঁড়া করুন। আপনার ঠোঁটের প্যাক তৈরি করতে ১ চা চামচ এই বীটরুট গুঁড়া, গোলাপ জলের সাথে মেশান। পুরো মিশ্রণটি ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। এই প্রক্রিয়া অবিলম্বে আপনার ঠোঁট নরম গোলাপি রঙের আভা এনে দিবে।
বীটরুটে পাওয়া লাইকোপেন ত্বকের ইলাস্টিসিটি বজায় রাখে এবং ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে।
বীট রুটকে রক্ত পরিষ্কারক হিসেবেও আখ্যায়িত করা যায়। যদি নিয়ম করে প্রতিদিন বীটের রস পান করা যায় তবে ব্রণ থেকে পরিত্রান পাওয়া যেতে পারে। যেহেতু এগুলো রক্ত অপরিষ্কার হলে দেখা দেয়।
এটি অ্যান্টি –অক্সিডেণ্টের অনেক বড় উৎস। তাই বীটরুট দেহের ফ্রি রেডিকেল দূর করে দ্রুত বয়সের ছাপ পড়া থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করে।
বীটের রস আপনার ত্বকে গোলাপি আভা ছড়িয়ে দিতে পারে। ১ টেবিল চামচ গাজরের রসের সাথে ১ টেবিল চামচ বীটের রস মেশান। তারপর পুরো মুখে কটন বল দিয়ে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
মুলতানি মাটির সাথেও প্যাক বানিয়ে লাগাতে পারেন। এতে মুখের যাবতীয় কালো দাগ দূর হবে।
বীটের রস ফসফরাস, প্রোটিন, পটাসিয়ামের মত আরও অনেক ভিটামিন এবং মিনেরালস এ ভরপুর। যা স্কাল্পের রক্ত প্রবাহে ভূমিকা পালন করে। তাই স্কাল্প থেকে মরা কোষ দূর হয় অর্থাৎ খুশকি দূর হয়।
চুল গজাতেও এর ভূমিকা অতুলনীয়। বীটের রস মাথার তালুতে লাগালে স্কাল্পের অতিরিক্ত তেল দূর হয়, ফলে নতুন চুল গজাতে দেখা যায়।
এটি চুলের গোঁড়া মজবুত করে এবং স্কাল্পের ডেড পোরগুলোর মুখ খুলে যায় ফলে আরও বেশি বেশি ভিটামিনস স্কাল্পের গভীরে পৌঁছে যায়।
যদিও আধুনিক যুগে কোন কিছুই দুর্লভ নয় আর এখন তো শীতের মৌসুম তাই বাজারে সহজেই মিলে যাবে এই বীটরুট। বীটে আছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড এবং ম্যাঙ্গানিজ। এমনকি এর সবুজ পাতাও পুষ্টির উৎস।
লিখেছেন- রোজেন
ছবি- মার্গটমেডিসন.ব্লগস্পট.কম