আমরা প্রতিদিন নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ক্যারিয়ারের জন্য অনেক কাজ করি। খুবই স্বাভাবিক। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে সময় কাটানোর পর পরবর্তী দিনের জন্য প্রস্তুত হওয়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আমরা প্রতিদিন কি ধরণের কাজ করছি, কতটুকু করছি, কিভাবে করছি তার উপর সাফল্য নির্ভর করে। আজ যতটুকু কাজ করেছেন, সেটা ভেবে যদি পরবর্তী দিনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন তাহলে আপনার কর্মদক্ষতা আরো বৃদ্ধি পাবে, আপনি হবেন আরো সফল।
আর পরিকল্পনার জন্য কিছু বিষয় মেনে চলা প্রয়োজন। এর জন্য আপনি আপনার অফিস সময় শেষে বিকেল বা সন্ধ্যাটুকু কাজে লাগাতে পারেন। এতে যেমন নিজেকে ফ্রেশ অনুভব করবেন, তেমনি নতুন দিনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেয়ার পর্যাপ্ত সময় পাবেন।
১. প্রতি সন্ধ্যায় পরিকল্পনার জন্য সময় নিন।
কোন কাজে সাফল্যের জন্য অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে পরিকল্পনামাফিক কাজ করা। কারণ আপনি যেটা পরিকল্পনা করবেন, সেটা আপনার কাজের ধরণকে নির্দিষ্ট করে দেবে। ফলে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে, বা ভুল পদ্ধতিতে কাজ করে সময় নষ্ট করার ঝুঁকি থাকে না। তাই প্রতিদিন সন্ধ্যায় আপনি আপনার কাজ সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে বসতে পারেন।
বিশ্লেষণের শুরুটা হতে পারে আপনার আজকের কাজ দিয়ে। আজকে সারাদিনে কি কি কাজ করেছেন, কি ধরণের পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন, কোন ভুল হয়েছে কি না, কিভাবে করলে ভালো হত এগুলো চিন্তা করুন। একসময় যখন আজকের কাজের ফলাফল হাতে পেয়ে যাবেন, তখন আগামীকাল কি করবেন সেটা নিয়ে ভাবুন। আগামীকাল কি কি করতে হবে সেটা নিয়ে একটা পরিকল্পনার ছক দাঁড়া করান। তারপর চোখ বন্ধ করে মস্তিষ্ক শান্ত করুন, আগামীকালের জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করুন।
২. সামাজিক যোগাযোগ বাড়ান।
একটি সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য আপনার আশেপাশের মানুষের সাথে মেশাটা অত্যন্ত জরুরী। তাই সপ্তাহ শেষে ছুটির দিনে সামাজিক অনুষ্ঠান গুলোতে অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করুন। সবার সাথে মিশুন, মতামত ব্যক্ত করুন। কাজ নিয়ে আলোচনা করুন।
৩. নিজের জ্ঞানের পরিধি বাড়ান।
সামাজিক অনুষ্ঠান গুলো এক ধরণের শিক্ষালয় হতে পারে আপনার জন্য। ধরুন কাজের কোন বিষয়ে আপনি আটকে গেছেন, বা কি করতে হবে জানেন না। সেটা অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। তারা কি করেছে সেটা জানুন, পরামর্শ নিন। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষমতা বাড়বে।
এছাড়াও ছুটির দিন গুলোতে শিক্ষণীয় স্থানগুলো পরিদর্শন করতে পারেন। যেমন, জাদুঘর। এছাড়াও সামাজিক সচেতনতা মূলক ইভেন্টে অংশ নিতে পারেন। এতে আপনার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার পরিধি দুটোই বাড়বে।
৪. বেশি বেশি বই পড়ুন।
বই এর চাইতে নিঃস্বার্থ বন্ধু আর কেউ হতে পারে না। আপনার বই পড়ার অভ্যাস আপনার দক্ষতাকে বৃদ্ধি করবে। তাই সময় বের করুন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অন্তত ৩০ মিনিট হলেও বই পড়ুন। বই পড়লে আপনার ভেতরে ক্লান্তি, অবসাদ, টেনশন, মানসিক চাপ দূর হবে। ঘুম ভালো হবে, পরের দিনের জন্য ফ্রেশ একটা শুরু করতে পারবেন।
৫. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
অনেক কর্মমুখী মানুষই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেন না, কিংবা নিতে পারেন না। কারণ তারা বেশি কাজ করে তাদের কাজের লক্ষ্যকে সফল করতে চান। নিজের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে কর্মক্ষেত্রকে সামনে এগিয়ে নিতে চান। এটি অবশ্যই একটি ভালো দিক।
কিন্তু পর্যাপ্ত না ঘুমালে বা বিশ্রাম না নিলে শারীরিক অবসাদ ও ক্লান্তি আপনার কর্মদক্ষতা কমিয়ে দেবে। তাই প্রতিদিন সাড়ে সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। রাতে কম জেগে বেশির ভাগ সময় ঘুমিয়ে পার করুন। এতে শরীরে শক্তি সঞ্চিত থাকবে, যা আপনি পরের দিনের জন্য কাজে লাগাতে পারবেন।
এই বিষয়গুলো মেনে চলুন, দেখবেন আপনার কর্মদক্ষতা, আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গেছে। আপনি ভুল না করেই অনেক কাজ শেষ করে ফেলতে পারবেন। এতে নিজের প্রতি যেমন বিশ্বাস বাড়বে, তেমনি আপনার কাজের ক্ষেত্রও আপনাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে।
লিখেছেন – ফরহাদ রাকিব।
তথ্যসূত্র – entrepreneur.com
ছবি – এস্টেলিয়া