প্রাচীনকালে অনেক শতাব্দী ধরেই কোকোয়া বীজ এতোই মূল্যবান ছিল যে এগুলোকে মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করা হতো। মায়ান ও অ্যাজটেকরা বিশ্বাস করতো, কোকোয়া বীজের জাদুকরী শক্তি আছে। কিংবদন্তী রয়েছে, অ্যাজটেক রাজা মন্টেজুমা যখন স্প্যানিশ পর্যটকদের চকোলেট খেতে দেন, তখন তারা এর তিতকুটে স্বাদ একেবারেই পছন্দ করেনি। কিন্তু ১৭ শতাব্দীতে ইউরোপে চকোলেট জনপ্রিয় হতে শুরু করে। তারা বিশ্বাস করতো চকোলেটের ঔষধি ও পুষ্টিকর গুণ রয়েছে। এই বিশ্বাসগুলো কিন্তু সত্যি প্রমাণিত হতে শুরু করেছে!!
ভালো মানের ডার্ক চকোলেটে প্রচুর পুষ্টি আছে। ৭০-৮৫% কোকোয়া সমৃদ্ধ চকোলেটে আছে ফাইবার, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক ও সেলেনিয়াম। দিনে অল্প একটু ডার্ক চকোলেট কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫০% পর্যন্ত হৃদরোগে মৃত্যুর সম্ভাবনা কমিয়ে আনতে পারে। নিয়মিত চকোলেট খেলে তা ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ায়, ফলে ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা কমে যায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ও শারীরিক প্রদাহ রোধে ডার্ক চকোলেট সহায়তা করে।
ডার্ক চকোলেটে প্রচুর পরিমাণে সক্রিয় অরগ্যানিক উপাদান রয়েছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। যেমন- পলিফেনলস, ফ্ল্যাভ্যানলস, ক্যাটেশিন্স ইত্যাদি। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া রোধ করে এবং ক্যান্সার রোধে এর ভূমিকা রয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, পরীক্ষাকৃত অন্যান্য ফলের তুলনায় ডার্ক চকোলেটে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বেশি।
কোকোয়া বীজের ফ্ল্যাভ্যানল মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়ায়, যা মানুষকে আর উদ্দীপিত করে তোলে। ন্যাচার নিউরোসাইন্সের এক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে ৫০ থেকে ৫৯ বয়সী সুস্থ ব্যক্তি যারা তিন মাস উচ্চ-ফ্ল্যাভ্যানলযুক্ত কোকোয়ার পানীয় খেয়েছেন, তারা স্মৃতি পরীক্ষায় ২৫% বেশি ভালো পারফরম্যান্স করেছেন। গড়পড়তায় দেখা গেছে, উচ্চ-ফ্ল্যাভ্যানলযুক্ত কোকোয়া পানকারীরা ঐ স্মৃতি পরীক্ষায় তাদের চেয়ে বিশ-ত্রিশ বছর কম বয়সের ব্যক্তিদের মতো পারফর্ম করেছেন।
বিষণ্ণতার মহৌষধ চকোলেট, এটা আমরা অনেকেই জানি। চকোলেটের ট্রিপ্টফেন উপাদানটি বিষণ্ণতা রোধে কিংবা কমাতে দারুণ কার্যকর। দিনে চল্লিশ গ্রাম ডার্ক চকোলেট ২ সপ্তাহের মধ্যে স্ট্রেস হরমোন কমিয়ে আনতে সক্ষম। চকোলেট ডোপামিন বৃদ্ধি করে যেটি আনন্দের সাথে সম্পর্কিত একটি নিউরোট্রান্সমিটার। এছাড়াও চকোলেটে ফ্যানাইলইথাইলামাইন নামক উপাদান আছে যা “লাভ কেমিক্যাল” হিসেবে পরিচিত।
কীভাবে চিনবেন ভালো মানের চকোলেট?
সঠিক ধরনের চকোলেট বেছে নেয়া গুরুত্বপূর্ণ কেননা চকোলেট প্রসেস করা হয় এবং তাতে এর গুণগত মান কমে যায়। চকোলেট কেনার সময় যা খেয়াল রাখবেন-
১- সবচেয়ে কম মিষ্টি চকোলেটটি কিনবেন।
২- সর্বোচ্চ মাত্রার কোকোয়া সমৃদ্ধ চকোলেট কেনার চেষ্টা করবেন।
৩- সম্ভব হলে অরগ্যানিক কিনা দেখে নেবেন।
৪- চকোলেটের লেবেলে যদি লেখা থাকে “প্রসেসড উইথ অ্যালকালি”, তবে তা পরিহার করুন। প্রসেসড উইথ অ্যালকালি পদ্ধতিতে কোকোয়ার প্রাকৃতিক ফ্ল্যাভ্যানল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টকে ভেঙ্গে ফেলা হয়।
৫- কোকোয়া বাটার ও ননট্রান্স ফ্যাট সমৃদ্ধ চকোলেট কিনুন।
সাবধান, চকোলেটের এতসব উপকারী কথার মানে এই নয় আপনি যত খুশি তত চকোলেট খাবেন। সবকিছুই পরিমিত মাত্রায় থাকা ভালো। সপ্তাহে ভালো মানের অল্প কিছু চকোলেট খেলে স্বাদ ও উপকারিতা দুটোই পাবেন।
লিখেছেনঃ শান্তা সোহেলী ময়না
ছবিঃ ওয়ালপেপারটুডেস.কম