হৃদরোগ এই মুহুর্তে সারা পৃথিবীব্যাপী একটি ভয়াবহ রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৩০ বছরের পর থেকেই সাধারণত হৃদরোগের ঝুঁকি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। অনেকেই ধারণা করে থাকেন, পুরুষরা নারীদের চাইতে বেশি হৃদরোগে ভোগেন তাই নারীদের ঝুঁকি কম। হ্যাঁ এটা ঠিক যে নারীদের চাইতে পুরুষদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি কিন্তু তাই বলে নারীরা যে নিরাপদ এটা ভাবার কোন কারণই নেই! একজন পুরুষ এর যে সময়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে, ঠিক একই সময়ে একজন নারীরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সুতরাং আপনি যদি হৃদরোগ এড়াতে চান, তাহলে হৃদরোগের লক্ষণসমূহ জেনে রাখা জরুরি। এর কারণ হৃদরোগের অন্যতম সাধারণ একটি নাম হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক এবং এটি যে কোন সময় আপনাকে আক্রমণ করতে পারে। একটি মেজর হার্ট অ্যাটাক একজন মানুষকে প্যারালাইজড এমনকি মৃত্যুর পথে পর্যন্ত ঠেলে দিতে পারে।
সুতরাং যখনই আপনার বয়স ৩০ পার হবে, তখন থেকেই নিজের হৃদপিন্ডের আলাদা যত্ন নেয়া শুরু করুন। তার পাশাপাশি হঠাৎ হৃদরোগ এড়াতে কিছু জিনিস জানা প্রয়োজন।
হৃদরোগের লক্ষণসমূহ কি?
১. বুকে ব্যাথা
হৃদরোগের অন্যতম সাধারণ একটি লক্ষণ হচ্ছে বুকে ব্যাথা। যখন আপনার হৃদপিন্ডের পেশিগুলোতে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের সরবরাহ হয় না তখন বুকে ব্যাথা হতে পারে। অক্সিজেনের অভাব হলে ভিকটিম রক্তচাপ, বুকে ব্যাথা, জ্বালাপোড়া অনুভব করতে পারেন। এতে বমিও হতে পারে। এছাড়া ব্যাথা আস্তে আস্তে চোয়াল, বাম হাত, বাম কাঁধ এবং শরীরের সম্পূর্ণ বামপাশের অংশে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় এসিডিটির কারণেও বুকে ব্যাথা হতে পারে। তাই এই দুটোর মধ্যে পার্থক্য জানার জন্য পাঁজরে হাত দিয়ে চাপ দিন। যদি ব্যাথা প্রশমিত হয়, তাহলে সেটা এসিডিটির কারণে হয়েছে। কিন্তু যদি ব্যাথা না কমে বরং আরো বাড়ে, তাহলে সেটা অবশ্যই অবশ্যই হৃদরোগের লক্ষণ!
২. হঠাৎ নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা
শ্বাসকষ্ট নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই হতে পারে। তবে নারীরা এই ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টে বেশি ভুগে থাকেন। তাই যদি কখনো হঠাৎ করে শ্বাসকষ্টে ভোগা শুরু করেন, অবশ্যই সেটাকে হালকা ভাবে নেবেন না। কারণ হার্ট অ্যাটাক হলে ফুসফুসে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়, তখন শরীর বেশি অক্সিজেনের জন্য চাপ দিতে থাকে।
৩. অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
প্রতিটি নির্দিষ্ট বয়স সীমার মানুষের মিনিটে হৃদস্পন্দনের সংখ্যা আলাদা। তাই আপনার বয়স হিসেবে হৃদস্পন্দনের সংখ্যা জেনে রাখুন এবং নিয়মিত সেটা পরীক্ষা করুন। যদি কখনো হৃদরোগের কোন লক্ষণ অনুভব করছেন বলে মনে হয়, তাহলে সাথে সাথে হৃদস্পন্দনের সংখ্যা চেক করুন। যদি সেটা অনিয়মিত হয় তাহলে দ্রুত হাসপাতালে যান। কারণ অনিয়মিত হৃদস্পন্দন হার্ট ফেইলিওর, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক জাতীয় হৃদরোগের অন্যতম প্রধান উপসর্গ।
৪. বমি বমি ভাব
হৃদরোগের আরেকটি উপসর্গ হচ্ছে বমি বমি ভাব। যদি কারো হার্ট অ্যাটাক হয়, তাহলে শ্বাসকষ্ট বুকে ব্যাথা এগুলোর সাথে যোগ হবে বমি বমি ভাব। এমনকি বমিও হতে পারে। তাই যদি রোগীর বমি হয়, বা বমি বমি ভাব হয় তাহলে ধরে নিতে হবে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
৫. দূর্বলতা এবং ঘাম
যদি কখনো মনে হয় হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাহলে উপরের লক্ষণগুলো খোঁজার চেষ্টা করুন। সেই সাথে দেখুন আপনার দূর্বল লাগছে কি না। কারণ হৃদরোগের কারণে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়, রক্তচাপ নেমে যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে শরীর ঠান্ডা হয়ে যাবে। হাত পা কাঁপতে থাকবে। সারা শরীরে ঘাম হবে। এই উপসর্গগুলো দেখা মাত্র দেরী না করে হাসপাতালের শরণাপন্ন হোন।
হৃদরোগ নারী পুরুষ সবার জন্যই বেশ ভয়াবহ হতে পারে। তবে ঘাবড়ে না গিয়ে শুরুতেই যদি হৃদরোগের লক্ষণসমূহ শনাক্ত করা যায় তাহলে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিয়ে হৃদরোগের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব। সেই সাথে ডাক্তারের পরামর্শ মত ওষুধ ও খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে হৃদরোগ থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।
তাই হৃদরোগের লক্ষণগুলো জানুন, সাবধান থাকুন, সুস্থ থাকুন!
ছবি- সাটারস্টক, expertbulletin.com