পেপারক্র্যাফট নিয়ে বাংলাদেশে মাতামাতিটা একটু যেন কমই আছে এখনও। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এই শিল্প অনেকটাই এগিয়ে আছে। তবে তাই বলে বাংলাদেশি শিল্পীরা একেবারেই যে বসে আছেন, তা কিন্তু নয়! কেউ হয়ত অরিগ্যামি নিয়ে মেতেছেন, কেউ বা ব্যস্ত আছেন কুইলিং নিয়ে, আবার কেউ-বা চর্চা করছেন পপ আপ শিল্প! রুমানা শারমিন তাদেরই একজন। ‘দ্য পপ আপ ফ্যাক্টরি’ নামে একটি উদ্যোগ শুরু করেছেন সম্প্রতি, যেখানে পপ আপ কাগজ শিল্প নিয়ে তিনি কাজ করছেন। কার্ড থেকে বই, সব খানেই ব্যবহার করছেন পপ আপ প্রযুক্তি। চলুন তার থেকেই জেনে নিই পপ আপের হাল-চাল।
শুভেচ্ছা। নিজের সম্পর্কে আমাদেরকে একটু বলুন।
সাজগোজকেও শুভেচ্ছা। আমি রুমানা শারমিন, ফেসবুকে ইমা নাইরা। পড়াশোনা করেছি আর্কিটেকচার নিয়ে। আমার নেশা অনেক কিছুই যেমন ঘুরাঘুরি, আড্ডাবাজি, শপিং, আঁকাআঁকি, বই পড়া ইত্যাদি। আপাতত ‘দ্য পপ আপ ফ্যাক্টরি’ নামে একটা প্রকাশনী চালাই।
পপ আপ নিয়ে নিয়ে উৎসাহটা কোথা থেকে এসেছিল? যাত্রা শুরু হল কীভাবে?
ছোটবেলায় কাজিনের বাসায় বিদেশ থেকে আনা কিছু পপ আপ বই দেখেছিলাম, রয়ে গেছিলো হয়ত মনের এক কোনায়। থিসিসের সময় অনেক দীর্ঘ সময় ধরে ক্লাসে কাজ করতাম, তখন রিক্রিয়েশনের জন্য ছোটখাট বিভিন্ন পেপারক্রাফট বানাতাম আর নিজের ওয়ার্কস্টেশন ডেকোরেট করতাম। যেহেতু কাগজ কাটার আর আঠা তখন সব সময়ের সঙ্গী ছিল, বিভিন্ন উপলক্ষ্যেই বন্ধুদের পপ আপ কার্ড বানিয়ে গিফট করেছি। তারপর ভাগ্নির জন্য প্রথম হ্যান্ডমেড পপ আপ বই বানিয়ে সবাইকে অবাক হতে দেখে এই নিয়ে কাজ করার উৎসাহ আসে। প্রথমে নিজে নিজে বিভিন্ন ধরনের মিনিয়েচার স্ট্রাকচার বানিয়ে বানিয়ে প্র্যাক্টিস করেছি অনেক দিন। তারপর স্টোরি বানানো, পাশাপাশি পপ আপ পেপার মেকানিজম আর গ্রাফিক্স বিল্ডিং করেছি, তারপর হাঁটি-হাঁটি-পা-পা করে যাত্রা শুরু হল। অফিসিয়ালি যাত্রা শুরু হয়েছে যেদিন ‘দ্য পপ-আপ ফ্যাক্টরি’ প্রকাশনার লাইসেন্স নিয়ে থ্রিডি পপ আপ বুক এর দুনিয়ায় পা রেখেছে।
[recommended]
কাজের অভিজ্ঞতা কেমন? বাংলাদেশে এই ধরণের সৃজনশীল পেশায় কী কী সমস্যা আছে বলে আপনি মনে করেন?
কমপ্লিট থ্রিডি অ্যানিমেটেড পপ আপ বুক বাংলাদেশে এর আগে তৈরি হয়নি সেভাবে তাই একদম নতুন এই বিষয়টি নিয়ে যখন কাজ করা শুরু করেছিলাম তখন থেকেই সবাই অনেক প্রশংসা করেছে, উৎসাহ দিয়েছে। তবে আমি এটাকে পেশা হিসেবে নেয়ার আগে বেশ সময় নিয়েছি এবং আমি যা করতে চাই তার রোডম্যাপ রেডি করে সেলফ অ্যানালাইসিস করে তারপর শুরু করেছি। সৃজনশীল পেশার ক্ষেত্রে আমি বলব ক্রিয়েটর আর কাস্টমারের যোগাযোগটা বেশ কঠিন। সৃজনশীলতাকে পেশায় পরিণত করার জন্য যেটি খুব জরুরি সেটি হল কীভাবে সৃষ্টির অংশটিকে শিল্পায়ন বা প্রোডাকশন এর দিকে নিয়ে যাওয়া যায়। অর্থাৎ, সঠিকমূল্য নির্ধারণ, কর্মদক্ষতাআর সঠিক ডিস্ট্রিবিউশন আউটলাইনঠিক না থাকলে ব্যবসা হিসেবে দাঁড় করানো বেশ কঠিন হয়ে যায়।
পপ আপ ‘হ্যালো কিটি’ কার্ড
কাগজশিল্পের কেমন সম্ভাবনা আছে এদেশে?
কাগজশিল্প একটি অসীম সম্ভাবনাময় জগত, যার সবটুকু এখনো আমরা আবিষ্কারও করতে পারিনি। সুতরাং এটি অনেক সম্ভবনাময় নিঃসন্দেহে। অনেক কিছু করা সম্ভব। কিন্তু পর্যাপ্ত লজিস্টিক সাপোর্ট পেতে একটু খাটা-খাটনি করতে হয়। সহজ কথায় বলতে গেলে সঠিক যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে সঠিক প্রশিক্ষণ, সবটারই অভাব আছে। এইগুলো কাটিয়ে উঠতে সবচে’ বেশি কাজে দেবে কাজের প্রতি আপনার ভালোবাসা আর বিকল্প বেছে নেয়ার ক্ষমতা।
বর্তমানে কী করছেন? কোন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে কি?
ঠিক এই মুহূর্তে মৃত্তিকা গুণ আপুর একটি গল্প পপ আপ বই হিসেবে তৈরির কাজ চলছে। এই বইমেলাতেই থাকবে আশা আছে।আর সামনে আমার একটি পপ আপ সায়েন্স ফিকশন বই আর পপ আপ স্ক্র্যাপবুক আসবে। আমি প্রথম থেকেই চেয়েছি অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও একটি পূর্ণাঙ্গ পপ আপ ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলতে এবং এখনো এই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। মনে আশা আছে এবং আপনারা সবাই পাশে থাকলে সামনে হয়ত আমার স্বপ্ন সত্যি হয়ে যাবে।
পপ আপ সায়েন্স ফিকশান বই ‘অ্যাডভেঞ্চার বেয়ন্ড গ্যালাক্সি’
নতুনদের জন্য কোন পরামর্শ আছে? কী ধরনের গুণ বা প্লাস পয়েন্ট থাকা জরুরি এ ধরনের কাজে? কীভাবে শুরু করতে পারে তারা?
আমি বলব পেশা হিসেবে নিতে চাইলে প্রথম থেকেই সেভাবে লক্ষ্যে স্থির হয়ে আগাতে হবে। আর অবশ্যই অল্প কিছু বা ছোট কোন নিজস্বতা তৈরি করে নিতে হবে। পেপারক্র্যাফট নিয়ে কাজ করলে গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ ভালোমত জানা খুব ভালো একটি গুণ। আমি মনে করি শুরুর ছয় মাস ট্রায়াল পিরিয়ড থাকলে খুব ভালো হয়। এর মধ্যে অনেক কিছু জানা যায়, যা ভবিষ্যত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কাজে দেয়। আর অনেক ধরনের রেডি টেম্পলেট পাওয়া যায় অনলাইনে, যেগুলো তাৎক্ষণিক কাজের ক্ষেত্রে অনেক ভালো ফলাফল দিলেও আসলে ক্ষতিকর। বরং নিজের টেম্পলেট নিজে তৈরি করতে পারাটাই হতে হবে লক্ষ্য।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। স্বপ্ন সত্যি হোক!
সাজগোজকেও অনেক অনেক শুভ কামনা।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেনঃ নুজহাত ফারহানা