ব্যক্তির নামের প্রভাব নাকি তার চরিত্রে ছাপ ফেলে। তাই, বাবা-মায়েরা সন্তানের নাম রাখার ক্ষেত্রে দেখে-শুনে সবচেয়ে সুন্দর আর সেরা নামটিই রাখতে চান। ব্যবসাকে যদি নিজের সন্তান হিসেবে বিবেচনা করি, তাহলেতো সেক্ষেত্রেও সেরা নামটিই রাখা চাই, নয় কি? ব্যবসার নামটি ব্যবসার চরিত্রে কতখানি প্রভাব ফেলবে, তা বোঝা না গেলেও ভবিষ্যতে যে কিছু প্রভাব রাখবেই, সেটি কিন্তু সবাই-ই আমরা জানি। ভোক্তার মনের ওপরে নামের প্রভাব অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। হাজার হাজার ব্যবসার মধ্যে আপনার ব্যবসাটিকে কিন্তু আপনি নাম দিয়েই আলাদা করবেন, আর নাম দিয়েই পারবেন তাকে প্রতিষ্ঠিত করতে। তাই ব্যবসার নামকরণের আগে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে নজর না দিলেই নয়! দেখে নিই তাহলে বিষয়গুলোকে বিস্তারিতভাবে। ব্যবসার ধরণ বুঝে আপনি শুধু সেগুলোকে ব্যবহার করবেন।
০১। বর্ণনামূলক হওয়া চাইঃ
কিছু কিছু ব্যবসার নামটিই হয় অনেক বিস্তারিত। নাম শুনেই ভোক্তা এক ঝলকে বুঝে নেন ব্যবসার কার্যক্রম, পণ্য ও ধরণ কী হতে পারে। সাধারণত, এই ধরণের নামকরণ ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে খুব কাজে দেয়। যেমনঃ নীলক্ষেত ডট কো. নামেই বোঝা যায় এটি বই বিক্রি বিষয়ক কাজে নিয়োজিত একটি সাইট। যেহেতু নীলক্ষেত জায়গাটির সাথে বই কেনাবেচার খুব নিবিড় একটি সম্পর্ক আছে, তাই অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রেও নীলক্ষেত নামটি ব্যবহার করায় তা ক্রেতার মনে দাগ কেটেছে।
০২। যুগের সাথে তাল মিলানঃ
আপনার ব্যবসা যদি হয় ফ্যাশন কিংবা প্রসাধনজাতীয় পণ্য নিয়ে, তবে চেষ্টা করুন খুব ট্রেন্ডি কোন শব্দকে বেছে নিতে নাম হিসেবে। এক্ষেত্রে আপনাকে খানিকটা দূরদর্শী হতে হবে। আপনাকে বুঝে নিতে হবে ফ্যাশন ও ট্রেন্ডের কোন এলিমেন্টটি লেজেন্ডারি হতে যাচ্ছে। আপনি সেই নামটিই বেছে নিন। কারণ, হাওয়া বদল হয়ে গেলেও নামটি কিন্তু ঠিকই স্বমহিমায় টিকে থাকবে তাহলে। যেমনঃ ‘বাটার অ্যান্ড অরেঞ্জ’ একটি পোশাকের ব্র্যান্ড। নামটি শুনতে খুবই ট্রেন্ডি এবং টার্গেট কাস্টমারদের জন্যও দারুণ আকর্ষণীয়।
০৩। ছোট ও সহজ নাম নির্বাচন করুনঃ
ব্যবসার নাম যত উচ্চারণবান্ধব হবে এবং ছোট হবে, মনে রাখা তত সহজ হবে। আর ক্রেতার মনে থাকা মানেই হল ব্যবসার সাফল্য। যেমনঃ আড়ং। খুব ছোট ও সুন্দর অর্থের একটি নাম। দেশিয় ঐতিহ্য পণ্যের নাম চিন্তা করলে কাস্টমারের মনে খুব চট করেই এ নামটি চলে আসে এর সরল বৈশিষ্ট্যের জন্য।
০৪। অন্যরকম কিছু বেছে নিনঃ
ব্যবসার নাম নির্বাচন করার আগে ভেবে দেখুন এটি শুনতে কতটা অন্যরকম। যত ইউনিক হবে, নাম হিসেবে ততটাই সফল, কারণ তা সবার মনে গেঁথে যায় এবং এক ধরণের আকর্ষণ তৈরি করে। তবে হ্যাঁ, নামটি অবশ্যই যেন ব্যবসার ধরণের সাথে খাপ খায়। যেমনঃ অটবি। হাজার হাজার নামের ভিড়ে ফার্নিচার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সগৌরবে টিকে থাকার পেছনে সুন্দর অথচ আনকমন এই নামটির ভূমিকা কিন্তু কম নয়!
০৫। লম্বা ও দুর্বোধ্য নাম পরিহার করুনঃ
ব্যবসার নাম রাখার ক্ষেত্রে অনর্থক বড়সড় ও দুর্বোধ্য শব্দের নাম এড়িয়ে চলুন। কষ্ট করে আপনার প্রতিষ্ঠানের বা পণ্যের ব্র্যান্ড নাম মনে রাখার দায়িত্ব আপনার কাস্টমারদের নয় সেকথা মাথায় রাখবেন।
০৬। নতুন শব্দ তৈরি করে নিনঃ
নাম রাখার পুরো প্রক্রিয়াটিই অত্যন্ত সৃজনশীল। সেক্ষেত্রে নতুন শব্দ তৈরি করে নিয়ে নাম রাখার বিষয়টি আরও বেশি সৃজনশীল। এক্ষেত্রে, বানান বদলে কিংবা একাধিক শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ জোড়া লাগিয়েও নামটি রাখতে পারেন। এ ধরণের নামকে বলা হয় Coined name. যেমনঃ Compaq.
নাম রাখার ক্ষেত্রে আরও অনেক বিষয়ই আসতে পারে। তবে চুড়ান্ত নামটি রাখার আগে অন্য কেউ সে নামটি রেখে বসে আছে কিনা দেখে নিতে ভুলবেন না যেন!
লিখেছেনঃ নুজহাত ফারহানা
ছবিঃ সাটারস্টক