ছোটবেলা থেকেই ঈশিতার সৃজনশীলকাজে ঝোঁক বেশি ছিল। ছোটবেলায় চাচার সাথে চারুকলায় যেতেন, পরে ওখানে কিছুদিন ছবি আঁকাও শিখলেন। শিখলেন গানও। পড়াশুনা করেছেন ভিকারুন্নিসা নুন স্কুল ও কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে। পরে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ পাস করে এখন ওখানেই এমবিএ করছেন। ইউনিভার্সিটি ড্রামা ক্লাবে ড্রামা করতেন, শিল্পকলাতে দুই বার পারফরমও করেছেন। বিবিএ শেষ করে এশিয়াটিক অ্যাডভারটাইজিং এজেন্সিতে এক বছর চাকরি করেছেন কপি রাইটার হিসেবে।
কথা হচ্ছিল ঈশিতা খানের সাথে। ফেইসবুকে একটি গ্রুপে তার সাথে পরিচয়। একদিন গ্রুপে একটি মেকআপ পেইজের লিংক শেয়ার করে বললেন বিউটি ব্লগিং নাকি শুরু করছেন! কিছুদিন পর আরেকটি পোস্টে জানালেন যে, নিজের বাড়িতেই একটি মেকআপ স্টুডিও শুরু করছেন অচিরেই! শুনে নড়ে-চড়ে বসলাম। বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে বিউটি ব্লগিঙের যে ক্রেইজ চলছিল, সেটা যে এত তাড়াতাড়ি মেকআপ ফ্রিল্যান্সিং এ পা রাখবে, তা ভাবতে পারিনি! ছোটবেলা থেকেই মেকআপের ভক্ত ঈশিতার মা নাকি ছোটবেলায় তার সাজ দেখে বলতেন, ‘যাত্রা দলের নায়িকা’! অথচ এখন সেই শখটি নিয়েই কাজ করছেন প্রফেশনালি!
চলুন, ঈশিতার কাছ থেকে জেনে নিই মেকআপ ফ্রিল্যান্সিঙের আদি-অন্ত।
শুভেচ্ছা ঈশিতা! আপনিতো ফ্রিল্যান্স মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। তো মেকআপ নিয়ে আগ্রহটি তৈরি হল কীভাবে?
শুভেচ্ছা সাজগোজ টিমকে। আসলে মেকআপ নিয়ে কম বেশি সব মেয়েদের আগ্রহ থাকে ছোটবেলা থেকেই। আমিও খুব পছন্দ করতাম মেকআপ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা। মেকআপ করা আমার কাছে স্ট্রেস রিলিফের মত মনে হত। মন খারাপ হলে মেকআপ করতে বসে যেতাম। কলেজ-ইউনিভার্সিটি ওঠার পর সবাই ভালোই প্রশংসা করা শুরু করলো আমার মেকআপের। পার্টিতে যাওয়ার আগে নিজে মেকআপ করে ঢাকার নামকরা এক পার্লার থেকে শাড়ি আর চুল বাঁধতে যেতাম। প্রতিবারে বেশ কয়েকজন জানতে চাইতেন যে কার কাছে সেজেছি। তখন মনে হত যে মেকআপ হয়ত আমি ভালোই করতে পারি। এভাবে আরো উৎসাহ বাড়তে থাকে।
যাত্রা শুরু হল কীভাবে?
যখন ঠিক করলাম মেকআপ ফ্রিল্যান্সিং করব, তখন থেকেই নিজের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ইউটিউবে প্রচুর টিউটোরিয়াল দেখা শুরু করলাম। নিজের জমানো টাকা দিয়ে ইউএস আর ইউকে থেকে ভালো ব্র্যান্ডের কসম্যাটিকস কিনলাম। লাইট লাগানো আয়নার স্টুডিও ভ্যানিটি বানালাম। তারপর ফেইসবুকে প্রচার করতে থাকলাম। কিন্তু শুরুর দিকে খুব কম ক্লায়েন্ট আসত। হয়ত বাসায় এসে মেকআপ করতে হবে বলে তারা ইতস্তত করত। কিন্তু ধীরে ধীরে ক্লায়েন্ট বাড়তে শুরু করল। এ পর্যন্ত যত জনকে সাজিয়েছি, প্রত্যেকেই খুব পছন্দ করেছে। আমি ন্যাচারাল বেইজ দিয়ে মেকআপ করি, তাই যারা পার্লারের ভারী মেকআপ পছন্দ করেন না, তারা আমার কাছে আসছেন। এখনো পর্যন্ত আমার অভিজ্ঞতা খুব ভালো। ব্লগিং করছি বেশ আগের থেকেই। আমি ইংরেজিতে ব্লগ লিখি যেন অন্য দেশের পাঠকরাও পড়তে পারেন। আমার ব্লগিং করার ধরনটি অন্যদের থেকে একটু আলাদা। আমি খুব সংক্ষেপে প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে কথা বলি। আর কসম্যাটিকস ব্যবহার নিয়ে অনেক ছবি পোস্ট করি, যেন পাঠকরা অল্পসময়ে বুঝতে পারেন।
বাংলাদেশে মেকআপ ফ্রিল্যান্সিঙের সম্ভাবনা কেমন বলে আপনার ধারণা? আপনার ফ্রিল্যান্সিং অভিজ্ঞতা কেমন?
কিছুদিন আগেও বাংলাদেশে ব্রাইডাল অথবা পার্টি মেকআপ করতে চাওয়া মানেই ছিল পার্লারে গিয়ে মেকআপ করা। কিন্তু বর্তমানে অনেকেই ফ্রিল্যান্স মেকআপ আর্টিস্টদের কাছে মেকআপ নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে ফেইসবুকের অবদান অনেক। ফ্রিল্যান্স মেকআপ আর্টিস্টরা নিজেদের কাজ ফেইসবুকে তুলে ধরছেন এবং তা দেখে অনেকেই উৎসাহী হচ্ছেন তাদের কাছে মেকআপ করতে। এখন পর্য্ন্ত ফ্রিল্যান্স মেকআপে আমার অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। আমার কাছে মেকআপ করতে আসেন তারাই, যারা ন্যাচারাল মেকআপ চান। অনেকেই আসেন যারা পার্লারের ভারী মেকআপ পছন্দ করেন না অথবা নন-ব্র্যান্ডেড মেকআপে ত্বকে সমস্যা হয়, ,তারা আমার স্টুডিওতে মেকআপ করে সন্তুষ্ট।
নতুনদের জন্য কোন পরামর্শ আছে কি?
আমার নিজেরই মনে হয় এখনও অনেক কিছু শেখা বাকি আছে। আসলে প্রতি দিনই কিছু না কিছু নতুন শিখছি। মেকআপের উপর আমার কোন প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই, কিন্তু প্র্চুর প্যাশন ছিল। তাই ইউটিউবে রাত দিন মেকআপ টিউটোরিয়াল দেখতাম। প্রথমে বন্ধু আর আত্মীয় স্বজনদের মেকআপ করিয়ে হাত পাকিয়েছি। তাদের প্রশংসা আর উৎসাহে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করি। যা ভেবেছিলাম তার থেকে বেশি সাড়া পাচ্ছি। নতুনদের জন্যেও আমার পরামর্শ ওটাই যে, প্রচুর প্যাশন আর চর্চা থাকতে হবে। দেশে প্রশিক্ষণ নেয়ার মত তেমন কোন ইন্সটিট্যুট নেই। তবে কেউ প্রয়োজনবোধে বিদেশি নানা ইন্সটিট্যুট থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। ইন্ডিয়ায় Fat Mu মেকআপ ট্রেইনিং স্কুল থেকে চাইলে ট্রেইনিং নিয়ে আসতে পারেন।
বর্তমানে কী কী কাজ করছেন? ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
বর্তমানে আমার নিজের বাসায় ছোট একটা হোম মেকওভার স্টুডিও আছে ‘আজমি’স মেকওভার স্টুডিও’ নামে। এখানে আমি ব্রাইডাল এবং পার্টি মেকওভার করি। আমার স্টুডিওর মেকআপের সব সামগ্রী USA/Uk-এর নামকরা ব্র্যান্ডের এবং ভবিষ্যতে ইচ্ছা আছে আরো নামিদামি ব্র্যান্ডের মেকআপ সামগ্রী ব্যবহার করার। আমি এই কাজটি করি সম্পূর্ন প্যাশন থেকে। তাই স্টুডিও থেকে ভবিষ্যতে পার্লার দেওয়ার কোন ইচ্ছে নেই। আমার স্টুডিও থেকে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজটিই করে যেতে চাই।
আমার মেকআপ স্টুডিওঃ www.facebook.com/azmi.studio
আমার ব্লগিং ফ্যান পেইজঃ www.facebook.com/azmi.weaver
অনেক ধন্যবাদ ঈশিতা। সাজগোজের পক্ষ থেকে শুভ কামনা রইল আজমির জন্য।
সাজগোজ টিমকেও ধন্যবাদ এবং শুভ কামনা।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেনঃ নুজহাত ফারহানা