অনেকদিন পর আবার প্রোডাক্ট রিভিউ লিখতে বসলাম। আজকের রিভিউ টা ল্যাকমে সিসি ক্রিমের। ইন্ডিয়ান মার্কেটে যখন সবাই বিবি ক্রিম নিয়ে ব্যাস্ত তখন ল্যাকমে তাদের সিসি ক্রিম দিয়ে সবাইকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। জানি অনেকেই হয়ত এর মাঝেই এটা একবার ব্যবহার করে ফেলেছেন, কিন্তু যারা এখনও এটা কেনার চিন্তা করছেন তাদের জন্য আজকের রিভিউ। জেনে নিন এটা আপনার জন্য আসলে কেমন হতে পারে। রিভিউ শুরু করার আগে আসুন জেনে নেই সিসি ক্রিম কী?
সিসি ক্রিম কী?
Cc cream শব্দটির মানে হচ্ছে color correction cream। এর প্রধান কাজ uneven skin tone দূর করা তার সাথে সাথে সাধারণ স্কিন কেয়ার ক্রিমের মত ত্বককে নরিশমেনট দেয়া। এর কাভারেজ হয় খুবই হালকা বা sheer যার কারণে এটা ব্যবহার করলে খুব ন্যাচারাল লুক তৈরি হয়।
কিন্তু ল্যাকমে তাদের সিসি ক্রিমের নামের পূর্ণ রুপ দিয়েছে complexion care cream। যা সিসি ক্রিমের সাধারণ অর্থ থেকে ভিন্ন। আর স্কিন কেয়ারের ব্যাপারে এখানে খুব বেশি কিছু বলা নেই। নাম থেকেই বোঝা যায় তাদের প্রোডাক্ট অন্যান্য সিসি ক্রিম থেকে আলাদা হবার একটা সুযোগ রয়েছে। দেখে নেই সেটা ভালো অর্থে, নাকি খারাপ অর্থে?
প্যাকেজিং-
প্যাকেজিং এর প্রশ্নে আমি এটাকে দশে দশ দেব। এত ক্ল্যাসি প্যাকেজিং ড্রাগ স্টোর ব্র্যান্ড এর ক্ষেত্রে খুব কমই দেখা যায়। বাইরের গোলাপি কার্ড বোর্ড কেসিং আর সোনালি টিউব ড্রেসিং টেবিলের উপরে সাজিয়ে রাখতে আমার খুবই ভালো লাগে। অনেকটা হাই এন্ড ব্র্যান্ডের মত এটার আউটার লুক।
উপাদান ও ব্যবহার-
ল্যাকমে বলেছে পরিষ্কার ত্বকে আঙ্গুল দিয়ে ব্লেন্ড করে দিতে। আমার মতে, এটাই সবচেয়ে ভালো উপায়। কারণ এতা এত পাতলা যে ব্রাশ বা স্পঞ্জ পুরোটাই শুষে নিতে পারে।
ল্যাকমে দাবি করে তাদের এই সিসি ক্রিম নিচের ছয়টি কাজ ইনস্ট্যান্টলি করে, এটা-
-সুরক্ষা দেয়
-আর্দ্রতা দেয়
-উজ্জ্বলতা দেয়
-স্কিন টোন ঠিক করে
-দাগছোপ লুকায়
-ফ্রেসনেস যোগায়
আমার অভিজ্ঞতাঃ
এটার টেক্সচার খুবই সুন্দর, খুব তরল না আবার খুব ক্রিমিও না। এটা আঙ্গুলের সাহায্যে ব্লেনড করা খুবই সহজ। ব্লেনড করার সাথে সাথে এটা স্কিনে একটা সফট ম্যাট ফিনিশ দেয় যেটা আমার খুবই পছন্দ। এর কাছ থেকে খুব বেশি কাভারেজ আশা করবেন না। এটা খুবই লাইট কাভারেজ দেবে। যেখানে দরকার সেখানে লেয়ার করা যেতে পারে তবে মিডিয়ামের বেশি কাভারেজ পাওয়া যাবে না। ব্রণের দাগ বা চোখের নিচের কালো দাগ লুকাতে পারবে না। কিন্তু এটা স্কিন টোনের অসামাঞ্জস্যতা দূর করবে।
যদিও এটা শুরুতে ম্যাট ফিনিশ দেয় কিন্তু আমার তৈলাক্ত ত্বকে ২-৩ ঘণ্টা পরই শাইনি ভাব দেখা যায়। তৈলাক্ত ভাব দূরে রাখার জন্য আমাকে সারা দিনে দুই থেকে তিন বার ব্লটিং পেপার আর পাউডার ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু আশা করি শীত কালে বা গরম কিছুটা কমলে এটা আরও ভালো কাজ করবে। কিন্তু শুষ্ক ত্বকের অধিকারী দের এর নিচে একটা ময়েশচারাইজার ব্যবহার করতে হবে নয়ত মুখের শুষ্ক এলাকা গুলোকে এই সিসি ক্রিম লুকানোর বদলে হাইলাইট করে ফেলবে, বিশেষ করে শীত কালে। এই সিসি ক্রিম ব্যবহারের ফলে আমার কোন র্যাশ বা ব্রণ হয়নি।
আমার ত্বকে এটা প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা বহাল ছিল। এটার মধ্যে গলে যাবার কোন প্রবণতা নেই। আর আমি আমার ত্বকে এটাকে অক্সিডাইজ করতে দেখি নি। কিন্তু বলাই বাহুল্য, এই বিষয়গুলো একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম।
শেডস-
ল্যাকমে সিসি ক্রিম দুইটা শেডে পাওয়া যায়। বেইজ (ফেয়ার স্কিন টোনের জন্য) আর ব্রোঞ্জ (মিডিয়াম স্কিন টোনের জন্য)। যেটা এই প্রোডাক্ট এর সবচেয়ে বড় সেটব্যাক। কারণ দুটা শেডের মধ্যে তফাৎ অনেক বেশি আর সাধারণ বাঙালি স্কিন টোন এই দুই শেডের মাঝামাঝি কিছু একটা। সেক্ষেত্রে দুই শেডের ক্রিম মিলিয়ে নিজের শেড তৈরি করে নেয়া ছাড়া আর উপায় নেই।
নিচে ছবির সাহায্যে আমি ল্যাকমে সিসি ক্রিমের ট্ক্সেচার, শেড আর কাভারেজ সম্পর্কে ধারণা দেবার চেষ্টা করছি-
দুই শেডের মধ্যে তফাৎ টা খেয়াল করুন
মেশানোর আগে (দেখুন এটা কত পাতলা )
মেশানোর পরে (হালকা কাভারেজ, ত্বকের দাগ ছোপ ঢাকছে না)
এই প্রোডাক্টের যে দিক গুলো আমার পছন্দ হয়েছেঃ
–এর হালকা ভাব, ত্বকের উপর চেপে বসে থাকে না। নরমাল ময়েশচারাইজার এর মতই।
-আঙ্গুল দিয়ে সহজেই মিশিয়ে দেয়া যায়।
-হালকা ন্যাচারাল ফিনিশ। লাইট কাভারেজ।
-গলে যায় না, কেকি বা প্যাচি লাগে না।
-spf 20 সান প্রটেকশন, সাধারণ ব্যবহারের জন্য বেস ভালো।
-টিউব থেকে একবারে অনেক খানি বেরিয়ে আসে না, সাশ্রয়ী।
-সুন্দর প্যাকেজিং।
এই প্রোডাক্টের যে দিক গুলো আমার পছন্দ হয়নিঃ
-এর শেডস। আমি নিশ্চিত, মাঝামাঝি আরও একটি এবং আরেকটু গাঢ় একটা শেড থাকলে এটা আরও কনভেনিইয়েনট হত।
-তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা টাচ আপ ছাড়া ব্যবহার করতে পারবেন না। এর উপর ম্যাটিফায়িং কম্প্যাক্ট ব্যবহার করতে হবে।
-এটার কোন স্কিন কেয়ার গুণাবলি নেই, সুতরাং সিসি ক্রিমের মত কোন কাজই এটা করবে না। সিসি ক্রিম শুধুই একটা ক্যাচি টাইটেল। অবশ্য আমাদের দেশে যে সব বিবি আর সিসি ক্রিম পাওয়া যায় সবগুলোই টিনটেড ময়েশচারাইজার থেকে বেশি কিছু না। আমি কোন ভাবেই এদের বিবি বা সিসি ক্রিম বলব না।
যাদের জন্য রেকমেনডেডঃ
সাধারন আর শুষ্ক ত্বকের অধিকারীরা চোখ বুজে ট্রাই করতে পারেন। তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা ভালো পাউডার ব্যবহার করলে নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। আপনার মুখে যদি দাগ ছোপ বেশি থাকে তবে সিসি ক্রিম আপনার জন্য নয়। যারা হালকা কাভারেজ ভালোবাসেন অথবা যারা অফিস বা ইউনিভার্সিটি তে যাবার জন্য নন মেক-আপ মেকাপ লুক চান তাদের জন্য সিসি ক্রিম পারফেক্ট।
আশা করি এই প্রোডাক্ট টি সম্পর্কে আপনাদের কিছুটা ধারণা দিতে পেরেছি। কিন্তু বলে রাখতে চাই আমার ত্বকে এক ধরনের ফল দিল বলে আপনিও একই ফল কিন্তু নাও পেতে পারেন। আর প্রোডাক্ট ব্যবহারের আগে উপাদান তালিকা ভালো ভাবে দেখে নিন, কোন উপাদানে আপনার অ্যালার্জি আছে কিনা। আর হ্যাঁ, product description না পরে কখনও কিছু কিনে ফেলবেন না যেন।
লিখেছেনঃ মীম তাবাসসুম
ছবিঃ বিউটিআনলিশডউইথদিপ্তীমা.কম