গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা বা মাজা ব্যথা নারীদের একটি পরিচিত সমস্যা। প্রতি চার জনে তিন জন মহিলা এই সমস্যায় ভুগে থাকে। এর প্রধান কারণ ক্রমবর্ধমান জরায়ু এবং প্রেগনেন্সিজনিত হরমোনের পরিবর্তন। আপনার জরায়ু যতই বড় হয় ততই আপনাকে মধ্যাকর্ষনের বিপরীতে এর ভার বহন করতে হচ্ছে, এটি পেটের মাংসপেশীকে দুর্বল করে দেয় এবং পুরো ভারটাই মেরুদণ্ডের উপর চাপ তৈরি করে। এর ফলে গর্ভবতী নারীরা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করলে মাজায় ব্যথা অনুভব করেন। শুধু তাই নয়, এই ক্রমবর্ধমান জরায়ু তার আশে পাশে থাকা নার্ভের উপর প্রেসার দিয়েও মাজা ব্যথার কারণ ঘটায়।
অপরদিকে গর্ভধারণের শুরু থেকেই শরীরের কিছু হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এর মধ্যে প্রজেস্টেরণ এবং রিলাক্সিন হরমোন কোমরের বিভিন্ন জয়েন্ট এবং লিগামেন্টসকে নরম এবং ঢিলা করে দেয়। এতে করে জয়েন্টের ভার বহন ক্ষমতা কমে যায়। ফলে গর্ভবতী নারীরা খুব সহজেই কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হয়।
কাদের গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা সমস্যায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে?
- যারা প্রেগনেন্সিতে আগেই মাজা ব্যথায় ভুগেছেন অথবা পূর্বের প্রেগন্যান্সিতে এ ধরনের সমস্যায় ভুগেছেন।
- গর্ভধারণকালীন অলস সময় কাটানো, যেমন দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা বা শুয়ে থাকা।
- যাদের পেট এবং পিঠের মাংশ পেশী সবল নয়।
- একের অধিক বাচ্চা গর্ভধারণ।
- শরীরের ওজন / BMI বেশি থাকলে।
গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা সমস্যায় কীভাবে প্রতিকার সম্ভব?
এই ব্যথার সম্পূর্ন প্রতিকার অনেকসময় সম্ভব না হলেও আপনার প্রতিদিনের জীবন যাত্রার কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে কিছুটা ব্যথামুক্ত থাকতে পারেন। যেমন,
১) এক্সারসাইজ মেরুদণ্ড এবং কোমরের মাংসপেশীকে সবল করে কোমর ব্যথার প্রতিকারে সাহায্য করে। প্রেগন্যান্সি সহনীয় কিছু এক্সারসাইজ হলো প্রতিদিন কিছুটা সময় হাঁটা, ইয়োগা, সাঁতার কাটা ইত্যাদি।
২) বসে থাকা বা দাঁড়ানোর সময় মেরুদণ্ড বাঁকা করে না রেখে সোজা রাখতে হবে।
৩) বেশি উচু হিল না পড়ে নিচু স্যান্ডেল পরা উচিত যাতে করে শরীরের ভার সমান ভাবে পায়ের পাতার উপর ছড়িয়ে পড়ে।
৪) উষ্ণ গরম পানির ভাপ মাংসপেশীকে রিলাক্স করে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, তবে খেয়াল রাখতে হবে এই উষ্ণতা যাতে চামড়ার জন্য সহনীয় পর্যায়ে থাকে। আনেকের ক্ষেত্রে ঠাণ্ডাও একই ভাবে ব্যথার উপশম করতে পারে।
৫) পিঠের মাংসপেশী ম্যাসাজ করেও ব্যথা থেকে কিছুটা মুক্ত থাকা যায়।
৬) গভীর ঘুম ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে, এক্ষেত্রে ঘুমের সময় আরামদায়ক পজিশনে শুতে হবে। চিত হয়ে না শুয়ে যেকোন একদিকে কাত হয়ে শোয়া বাঞ্ছনীয়। দরকার হলে পেটের নিচে বালিশ রেখে শুতে পারেন।
৭) দীর্ঘক্ষণ একই অবস্থানে না থেকে কিছুক্ষণ পর পর অবস্থানের পরিবর্তন করুন।
৮) এর পরও ব্যথার হাত থেকে রেহাই না পেলে অথবা ব্যথাকে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথানাশক ঔষধ খেতে পারেন।
ব্যথার সাথে কোন কোন উপসর্গ থাকলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে?
- কোমর ব্যথা যদি অনেক বেশি থাকে অথবা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
- ব্যথার সাথে জ্বর, প্রসাবে জ্বালা পোড়া বা তলপেটে ব্যথা থাকলে।
- ব্যথার সাথে শরীরের কোনো অঙ্গ অবশ অনুভব হলে অথবা হঠাৎ করে দুর্বল মনে হলে।
- গর্ভধারণের শেষের দিকে কেউ যদি প্রথমবারের মত এই ধরনের ব্যথা অনুভব করে তবে তা লেবার পেইন কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে। এই ধরনের ব্যথা পেটের সামনে থেকে পিছনে বা পায়ের দিকে ছড়িয়ে যায়, কিছুক্ষণ পর পর আসে ও সময়ের সাথে বাড়তে থাকে।
উপরোক্ত লক্ষণগুলো না থাকলে গর্ভাবস্থায় এই ধরনের ব্যথা নিয়ে দুঃচিন্তার কারণ নেই, যেহেতু এটি গর্ভস্ত বাচ্চার স্বাভাবিক বিকাশ ও প্রসবের জন্য ক্ষতিকর নয়।
লিখেছেনঃ ডাঃ নুসরাত জাহান
সহযোগী আধ্যাপকা (অবস-গাইনি)
ডেলটা মেডিকেল কলেজ,মিরপুর ১,ঢাকা।
Mob:028031379.
ছবিঃ সাটারস্টক