চোখের নিচের বিরক্তিকর ডার্ক সার্কেল নিয়ে আমরা সবাই কম বেশি চিন্তিত থাকি, তাই না? নিয়মিত ঘুম না হওয়া, টিভি বা কম্পিউটার স্ক্রিনের খুব কাছ থেকে দেখা, মানসিক চাপ, ডিপ্রেশন আরও কত কারণেই না আমাদের চোখের নিচে কালি পড়ে যায়। আর এটা এমনি এক সমস্যা যা একবার দেখা দিলে পরে আয়নার সামনে যতবার যাবেন কপাল চাপড়ানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। কারণ চোখের নিচের কালি দেখা দেয় খুব দ্রুত, কিন্তু বাবাজি আর যাবার নাম নেন না। এই বিরক্তিকর সমস্যার সমাধানে অনেক অনেক অ্যান্টি-ডার্ক সার্কেল ক্রিম, সিরাম বিক্রি করা হয় বাজারে । যার সাথে থাকে চটকদার সব আশার বানী আর বিশাল একটি প্রাইজ ট্যাগ। আর যারা এই মরীচিকায় আকৃষ্ট হন তারা খুব অল্প দিনেই বুঝে যান, ‘যত গর্জে, তত বর্ষে না।’ তার সাথে আছে কেমিক্যালের ভয়। অনেকের চোখ এত স্পর্শকাতর হয় যে অনিরাপদ কেমিক্যাল চোখের প্রচুর ক্ষতি করে ফেলে।
কিন্তু উপায় কি একেবারেই নেই চিরদিনের মত ডার্ক সার্কেলের হাত থেকে মুক্তি পাবার?
আছে, আর তাও একেবারেই আপনার হাতের মুঠোয়। আজ আপনাদের জানাবো ঘরে বসে কীভাবে আপনি পারফেক্ট অ্যান্টি-ডার্ক সার্কেল আর অ্যান্টি-রিঙ্কল আই সিরাম আর আই জেল তৈরি করতে পারবেন।
অ্যান্টি-ডার্ক সার্কেল আই সিরাম তৈরির উপায়
উপকরণঃ
১. একটি ছোট খালি হয়ে যাওয়া ওষুধের শিশি। (পরিষ্কার করে ধুয়ে শুকিয়ে নিন, ড্রপার থাকলে ভালো হয়।)
২. এক চা চামচ বিশুদ্ধ কাঠ বাদাম তেল।
বাদাম ব্যবহারে উপকারিতাঃ চোখের নিচের কালি দূর করতে বাদাম তেলের কার্যকারিতা ভীষণভাবে প্রমাণিত। এর ভিটামিন ই চোখের কোণের ভাঁজ দূরে রাখে আর চোখের তারুণ্য দীর্ঘদিন বজায় রাখে। বাজারে ওয়েল’স ব্র্যান্ডের আমন্ড অয়েল পেয়ে যাবেন। এছাড়াও আছে ডাবর রোগান বাদাম শিরিন; এটাও ত্বকের জন্য খুবই ভালো। এটা খাওয়াও যায়, সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে এটা খুবই বিশুদ্ধ। ডাবর বাদাম তেল ফার্মেসিতে পেতে পারেন।
৩. আধা চা চামচ বিশুদ্ধ নারকেল তেল।
নারকেল তেল ব্যবহারে উপকারিতাঃ এটাও চোখের কোণের রিঙ্কেল প্রতিরোধে কাজ করে আর চোখের নিচের স্পর্শকাতর ত্বক মসৃণ আর আর্দ্র রাখে। কিন্তু যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা চাইলে নারকেল তেল নাও দিতে পারেন। বাজারে পাওয়া যায় এমন যে কোন ব্র্যান্ডের নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।
৪. একটি ইভিনিং প্রিমরোজ অয়েল (evening primrose oil) ক্যাপসুল।
ইভিনিং প্রিমরোজ অয়েল ব্যবহারে উপকারিতাঃ বড় ফার্মেসিতে ইভিনিং প্রিমরোজ অয়েল ক্যাপসুল পেয়ে যাবেন। ইভিনিং প্রিমরোজ অয়েল সাধারণত ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে টপিকাল ব্যবহারের জন্য চিকিৎসক প্রেস্ক্রাইব করে থাকেন। এটা ত্বকের সমস্যায় খাওয়াও যায় আবার লাগানোও যায়। এটা চোখের নিচের কালি আর রিঙ্কল দূর করে। আনইভেন স্কিন টোন দূর করে আর রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।
৫. একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল অথবা আধা চা চামচ ভিটামিন ই অয়েল।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারে উপকারিতাঃ ভিটামিন ই অয়েল স্কিনে অ্যাপ্লাই করা হলে তা ত্বকের যেকোনো পিগমেনটেসন দূর করে। এটা ত্বকের ইলাস্টিসিটি বাড়ায় এবং ম্যাচিওর স্কিনের দাগ ছোপ এবং রিঙ্কেল দূরে রাখতে সাহায্য করে।
প্রনালিঃ
- বোতলের মধ্যে বাদাম তেল আর নারকেল তেল ঢালুন।
- এবার প্রিমরোজ অয়েল ক্যাপসুল আর ভিটামিন ই ক্যাপসুলের ভেতরের কন্টেন্ট তেলের সাথে মেশান।
- বোতলের মুখ বন্ধ করে ভালো ভাবে ঝাঁকিয়ে মিশিয়ে ফেলুন। ব্যাস, তৈরি হয়ে গেল আপনার আই সিরাম। এই আই সিরাম আপনি ফ্রিজে না রেখেও ব্যবহার করতে পারেন। তবে ফ্রিজে রাখলে কৌটায় করে রাখবেন বোতলে নয় কারণ নারকেল তেল জমে গিয়ে আপনার সিরাম বোতল থেকে বের করা মুশকিল করে দেবে।
অ্যান্টি-ডার্ক সার্কেল আই জেল তৈরির উপায়
আই জেল তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীদের জন্য বেশি ভালো হবে। কারণ এতে আই সিরামের তেল তেলে ভাবটা থাকবে না।
উপকরণ
১. একটি খালি হয়ে যাওয়া ছোট কৌটা। ভালো ভাবে পরিষ্কার করে নেবেন।
২. দুই চা চামচ অ্যালভেরা জেল। তাজা পাতা থেকে চামচ দিয়ে বের করে নেবেন।
অ্যালভেরা জেল ব্যবহারে উপকারিতাঃ অ্যালভেরা জেল ত্বকের অবাঞ্ছিত দাগ দূর করার জন্য প্রসিদ্ধ। এছাড়াও এটা আপনার চোখের নিচের নরম সেনসিটিভ ত্বকে আর্দ্রতা যোগাবে আর প্রোটেকশন দেবে। অ্যালভেরা সহজেই বাজারে বা বিভিন্ন সুপার শপে পেয়ে যাবেন।
৩. আধা চা চামচ বিশুদ্ধ কাঠ বাদাম তেল বা almond oil
৪. একটি ইভিনিং প্রিমরোজ অয়েল (evening primrose oil) ক্যাপসুল।
৫. একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল অথবা আধা চা চামচ ভিটামিন ই অয়েল।
প্রনালিঃ
- কৌটায় অ্যালভেরা জেল নিন এবার এতে বাদাম তেল ঢালুন।
- এবার প্রিমরোজ অয়েল ক্যাপসুল আর ভিটামিন ই ক্যাপসুলের ভেতরের কন্টেন্ট জেলের সাথে মেশান।
- এবার ভালোভাবে চামচ দিয়ে সবকিছু একত্রে মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল আই জেল। মনে রাখবেন আই জেল কিন্তু একবারে ১-২ সপ্তাহের বেশি ব্যবহার করতে পারবেন না। নষ্ট হয়ে যাবে। অল্প করে তৈরি করুন, শেষ হয়ে গেলে আবার তৈরি করুন।
ব্যবহারঃ
প্রতিদিন রাতে শোবার আগে একফোঁটা আই সিরাম বা একটু জেল আপনার চোখের নিচের ও উপরের পাতায় ডট করে লাগিয়ে নিন। এবার অনামিকার আঙ্গুল দিয়ে চেপে চেপে পুরো চোখের চারপাশে লাগিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। সাবধান সিরাম লাগানোর সময় জোরে ম্যাসাজ করবেন না যেন, এতে পরে চোখে রিঙ্কল পড়ার সম্ভবনা বাড়বে। ফ্রিজে রাখা ঠাণ্ডা সিরাম বা জেল ব্যবহার করে আপনি আরামও পাবেন। দেখবেন নিয়মিত ব্যবহারে চোখের নিচের কালো ভাব আস্তে আস্তে কমে যাবে, তাও দামি ক্ষতিকর কেমিক্যালে ভরা বাজারের ক্রিমের চেয়ে অনেক কম সময়ে আর নিরাপদে।
ছবিঃ লিভস্ট্রং.কম