উজ্জ্বল দাগছোপহীন ত্বক পেতে ওট মিল খুবই উপকারী। ওটমিল নিশ্চয়ই সবাই চেনেন। এর মেদ আর কোলেস্টেরল কম করার ক্ষমতার কারণে ওটমিল ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আমাদের দেশে। ওটমিল আসলে সব ধরনের ত্বকে ব্যবহারের জন্যই খুব ভালো। কিন্তু স্পেশালি যাদের ত্বকে ব্রণ বা র্যাশের সমস্যা আছে, ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত অথবা এতটাই সেনসিটিভ যে ত্বকের সঠিক যত্ন নিতে হিমশিম খেয়ে যান তাদের জন্য ওটমিল সবচেয়ে ভালো কাজ করে। কারণ ওটমিলের সুদিং অ্যাকশন ত্বকের জ্বালাপোড়া (inflammation) কমায়, ত্বকের লালচে ভাব দূর করে আর সাথে সাথে ত্বকের উপরিভাগের অতিরিক্ত তেল শুষে নেয়।
অনেকেই হয়ত জানেন না যে ওটমিল ত্বকের ট্যান আর কালচে দাগছোপ দূর করে উজ্জ্বল দাগছোপহীন ত্বক পেতে সহায়তা করে। এটা নিয়মিত ত্বক পরিচর্যায় ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের কালচে ভাব দূর হয়ে ত্বক আরও উজ্জ্বল হবে। সাথে সাথে স্কিনটোন আরও ফর্সা হতে বাধ্য। এছাড়া যারা মুখ ধুতে খুব ক্ষারযুক্ত সাবান বা ফেইসওয়াশ ব্যবহার করতে পছন্দ করেন না, তারা মুখ ধোয়ার জন্য ওটমিল ব্যবহার করতে পারেন কারণ এটা খুবই ভালোভাবে ত্বকের গভীর পর্যন্ত পরিষ্কার করতে পারে। আর সেইজন্যই আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম ওটমিল দিয়ে তৈরি কিছু ফেইসপ্যাকের রেসিপি যেগুলো আপনারা নিজেরাই ব্যবহার করে দেখতে পারেন ত্বকের জন্য ওটমিল আসলে কতটা কার্যকরী।
উজ্জ্বল দাগছোপহীন ত্বক পেতে ওটমিলের ফেইসপ্যাক
কোথায় পাবেন ওটমিল?
আজকাল ওটমিল সব জায়গায় পাওয়া যায়। যে কোন সুপারশপ বা বড় মুদি দোকানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ওটমিল পেয়ে যাবেন। শুধু খেয়াল রাখবেন অতিরিক্ত উৎসাহে আবার মসলা দেয়া ওটমিলের প্যাক কিনে আনবেন না যেন! ভালোভাবে প্যাকের গায়ের লেখা পরে পিওর ওটমিল কিনবেন।
স্কিন হোয়াইটেনিং ওটমিল ফেইসপ্যাক
কী কী লাগবে –
- ২ টেবিল চামচ ওটমিল
- সাধারণ দুধ ৪ টেবিল চামচ (কাঁচা বা ফুটানো দুটোই ব্যবহার করতে পারেন)
- ৪ টেবিল চামচ লেবুর রস
কী করবেন –
এই ফেইস প্যাকটি তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী সহ সব ধরনের ত্বকের রোদে পোড়া কালো ভাব দূর করার জন্য ব্যবহার করা যাবে। প্রথমে, ওট অল্প একটু পানিতে ফুটিয়ে নিন, তারপর ঠাণ্ডা করুন। আঠালো একটা মিশ্রণ পাবেন। এবার এতে পুরো দুধ আর লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে আপনার মুখ, হাত, পা অথবা শরীরের যেখান থেকে কালো দাগ উঠাতে চান সেখানে ব্যবহার করুন। ২০-২৫ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। খুব অল্প সময়ে কালচে ভাব ত্বক থেকে চলে যাবে।
ওটমিল আর কাঠবাদামের (almond) ফেইসপ্যাক
কী কী লাগবে –
- ২ টেবিল চামচ ওটমিল
- কাঠবাদাম (almond) – ৫টা
- ১ টেবিল চামচ মধু
- ফেইসপ্যাক মিশানোর জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু দুধ বা টকদই
কী করবেন –
এই ফেইস প্যাকটা নরমাল আর ড্রাই স্কিনের জন্য বেশি ভালো হবে। স্পেশালি ত্বকে যদি বলিরেখা বা মেছতার মত এজিং এর সমস্যা থাকে তবে এটা ব্যবহারে চোখে পড়ার মত ফলাফল পাবেন।
এই প্যাক বানানোর জন্য প্রথমে কাঠবাদাম ব্লেন্ডারে গুঁড়ো করে নিন বা মিহি করে পিষে নিন। এবার ওটমিল মিশিয়ে আবারো ব্লেন্ড করুন বা পিষুন। পুরো বালুর মত দেখতে গুঁড়া পাওয়া গেলে থামুন। চাইলে এই মিশ্রণ একবারে বানিয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন এক সপ্তাহের মত। যখন ফেইসপ্যাক বানাতে চাইবেন সাথে শুধু মধু আর দুধ/দই মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে ত্বকে লাগান। ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ত্বক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। রেগুলার ব্যবহারে ত্বকের বলিরেখা কমে যাবে আর কালো দাগও কমবে।
ওটমিল আর গোলাপজলের স্কিন টাইটেনিং ফেইসপ্যাক
কী কী লাগবে –
- ১ চা চামচ বেসন
- ওটমিল ১ চা চামচ
- ১ চা চামচ মধু
- পরিমাণমত গোলাপজল
কী করবেন –
ওট মিল একটু পিষে গুঁড়া করে নিন এর সাথে বেসন মেশান। সমান সমান ভাবে দুটা মিশিয়ে শুকনা পাত্রে রেখে দিতে পারেন পরে ব্যবহার করার জন্য। এই গুঁড়া মিশ্রণের মধ্যে মধু আর গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মুখে বিশ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। সব ত্বকের অধিকারীরা এই প্যাক ব্যবহার করতে পারবেন।
ওটমিল ক্লিন্সিং মিল্ক
কী কী লাগবে –
- ১ কাপ ওটমিল
- ওট ফোটানোর জন্য পরিষ্কার পানি
- একটা প্যান আর ছাঁকুনি
কী করবেন –
এটা আসলে কোন ফেইসপ্যাক নয়। বরং এই লিকুইডকে ক্লিঞ্জিং মিল্ক বলা ভালো বলে তাই বলছি। এটা নিয়মিত ব্যবহার করতে পারলে ত্বকের সব ময়লা গভীর থেকে পরিষ্কার হওয়ার পাশাপাশি ত্বকের কালচে ভাব দূর করে এটা আপনাকে উজ্জ্বল ফর্সা ত্বকও দেবে। সব ধরনের ত্বকে ব্যবহার করতে পারবেন।
কম আঁচে ওট পানিতে ফুটাতে থাকুন যতক্ষণ পর্যন্ত না ওট ঘন হয়ে ওঠে। ঘন হয়ে গেলে চুলা বন্ধ করে দিন। এবার সাবধানে ছাঁকুনি দিয়ে মিশ্রণ থেকে সব লিকুইড আলাদা করে নিন। এবার লিকুইডটা ঠাণ্ডা করুন। এটা খুব ঘন আর একটু আঠালো হবে। ব্যাস, তৈরি হয়ে গেল আপনার ক্লিঞ্জিং মিল্ক।
এটা ফেইস ওয়াশের পরিবর্তে বা মুখ ধোয়ার পরে ব্যবহার করতে পারেন। তুলার বলের সাহায্যে পুরো মুখে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।
ওটমিল আর টমেটোর ফেইসপ্যাক
কী কী লাগবে –
- ২ টেবিল চামচ ওট, পিষে গুঁড়ো করে নিন
- অর্ধেকটা টমেটো
- ২ চা চামচ গোলাপজল
কী করবেন –
টমেটো ভালোভাবে পিউরে করে নিন (টমেটোর পেস্ট)। এবার টমেটো পিউরে আর গোলাপজল ওটের গুঁড়ার সাথে মিশিয়ে পেস্ট বানান। এই পেস্ট মুখে আর গলায় ২০ মিনিট পর্যন্ত লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন।
টমেটো আর ওটের মিশ্রণ আপনার ত্বকের ট্যান খুব ভালোভাবে দূর করবে। সাথে সাথে স্কিন এক্সফলিয়েট করে ডেডসেলস দূর করে ত্বক আরও উজ্জ্বল করে তুলবে।
এই তো জেনে নিলেন উজ্জ্বল দাগছোপহীন ত্বক পেতে ওটমিলের ৫টি ফেইসপ্যাক এর ব্যবহার পদ্ধতি। এখন ত্বকের যত্নে এই ফেইসপ্যাকগুলো ব্যবহার করুন নিয়মিত যা নিশ্চিত করবে উজ্জ্বল দাগছোপহীন ত্বক ।
ছবিঃ সংগৃহীত – সাটারস্টক, বিউটিউসাটারস্টক