আজকালকার দিনে কোনোকিছু পুরনো হয়ে গেলেই চট করে ফেলে দেই আমরা। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই দেখবেন পুরনো জিনিস রিসাইকেল করে এমন সব জিনিস তৈরি করা যায় যা দিয়ে অনেকগুলো কাজে খুব সুবিধা হয়। যেমন- মেকআপ করতে গেলে আমাদের অনেক ধরনের ব্রাশের প্রয়োজন হয়। এত এত ব্রাশ কেনাও যেমন খরচের ব্যাপার, তেমনই সবসময় এত ব্রাশ খুঁজে রাখা, কোথাও যেতে হলে সাথে নেয়াও ঝামেলার। তাই আজকে বলবো পুরনো শেষ হয়ে যাওয়া মাশকারা ব্রাশ ফেলে না দিয়ে সেটা দিয়ে কী কী কাজ করতে পারবেন তা নিয়ে। চলুন তাহলে জেনে নেই পুরনো মাশকারা ওয়ান্ড এর চমৎকার সব ব্যবহার সম্পর্কে।
পুরনো মাশকারা ওয়ান্ড পরিষ্কার করবেন কীভাবে?
শুরুতেই বলে নেই, পুরনো মাশকারা ওয়ান্ড ব্যবহার করতে চাইলে সেটাকে আগে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। চাইলে শুধু মাশকারা ওয়ান্ড বা স্পুলি নয়, প্রয়োজন হলে এর সাথের বোতলটাও ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে সেটাকেও একইভাবে পরিষ্কার করে নিবেন।
ওয়ান্ড ভালোভাবে টিস্যু দিয়ে মুছে নিয়ে গরম পানিতে ৫/৬ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এরপরে পুরনো টুথব্রাশ দিয়ে লেগে থাকা পুরনো মাশকারা ভালোভাবে পরিষ্কার করে আবারো গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এবার কয়েক ফোঁটা হ্যান্ড রাব এতে ঢেলে দিয়ে পুরোপুরি জীবাণুমুক্ত করে নিন। শুকিয়ে গেলেই আপনার পুরনো হয়ে যাওয়া মাশকারা ওয়ান্ডটি পুরোপুরি প্রস্তুত নতুন করে ব্যবহারের জন্য।
যে যে কাজে ব্যবহার করা যায়
মাশকারা শেষ হয়ে গেলে সেটি সাধারণত ফেলেই দেয়া হয়। শেষ হয়ে যাওয়ার পরও যে এটি দারুণ কাজে লাগতে পারে সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। চলুন তাহলে পুরনো মাশকারা ওয়ান্ড এর ব্যবহার সম্পর্কে আজ জেনে নেয়া যাক।
লিপস এক্সফোলিয়েট করতে
লিপস এক্সফোলিয়েট করতে মাশকারা ওয়ান্ড এর জুড়ি নেই। শুনতে অদ্ভুত লাগছে? অদ্ভুত লাগলেও এটা সত্যি। লিপস এক্সফোলিয়েট করতে আমরা পুরনো টুথব্রাশ বা কাপড় ব্যবহার করি। এর চেয়ে মাশকারা স্পুলি অনেক ভালো কাজে দেয়। ওয়ান্ডে ভ্যাসলিন বা অলিভ অয়েল চিনির মিশ্রণ লাগিয়ে সার্কুলার মোশনে রাব করলে এর সফট ব্রিসলসের সাহায্যে ডেড সেলস উঠে লিপস হয়ে উঠবে সফট।
আই ব্রো ব্রাশ করতে
মেকআপ শেষ করার পর এলোমেলো আই ব্রো কে সুন্দর শেইপ দিতে একটা পুরনো মাশকারা ওয়ান্ড দারুণ কাজে লাগে। চাইলে এটি দিয়ে শুধু ব্রো শেইপ করে নিতে পারেন। প্রয়োজন হলে সামান্য ভ্যাসলিন অথবা ব্রো জেল লাগিয়ে ব্রাশ করতে পারেন, এতে করে ব্রো শেইপ সহজে নষ্ট হয় না। আবার ব্রো অনেক হালকা হলে ডার্ক কোনো ব্রো পাউডার অথবা ডার্ক ব্রাউন কালারের আই শ্যাডো ও কালো আই শ্যাডো মিক্স করে ব্রো ফিল করে নিবেন প্রথমে। এরপরে এই রিসাইকেল মাশকারা ওয়ান্ড দিয়ে ভালোভাবে ব্রাশ করে নিলে ব্রো অনেক বেশি ন্যাচারাল লাগে দেখতে।
চুল ঠিক করতে
সুপার স্লিক একটা হেয়ার স্টাইল করতে চাইলে মাশকারা ওয়ান্ড চমৎকার একটা জিনিস। খুব পরিপাটি করে খোঁপা বা পনিটেইল করার সময় যেসব চুল ক্লিপে বা রাবার ব্যান্ডে আটকায় না সেগুলোকে ঠিক করতে চাইলে, মাশকারা ওয়ান্ডে খুব সামান্য পরিমাণে ভ্যাসলিন বা জেল লাগিয়ে নিয়ে চুলগুলোকে পরিপাটি নেয়া যায়, যেটা বড় হেয়ার ব্রাশ বা প্যাডেল ব্রাশ দিয়ে করা যায় না।
কিউটিকল ভালো রাখতে
রাফ কিউটিকল হলে দেখতে খুব খারাপ লাগে। আবার সবসময় পার্লারে গিয়ে ম্যানিকিওর করাও সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে বাসায় বসে এই পুরনো মাশকারা ওয়ান্ড দিয়েই কিন্তু এই সমস্যা সমাধান করা যায়। এজন্য লাগবে কিউটিকল রিমুভিং ক্রিম, না থাকলে অসুবিধা নেই অলিভ অয়েল ব্যবহার করবেন, সময় একটু বেশি লাগবে এই যা। কিউটিকল রিমুভিং ক্রিম লাগিয়ে নিয়ে ১০ মিনিটের মতো অপেক্ষা করুন। এরপরে ওয়ান্ড দিয়ে কিছুক্ষণ ঘষে নিলে আস্তে আস্তে উঠে যাবে।
আইল্যাশ হাইড্রেট করতে
অনেকের আইল্যাশ পাতলা হতে পারে, সেক্ষেত্রে তাদের বলা হয় আইল্যাশে ক্যাস্টর অয়েল এবং আমন্ড অয়েলের মিশ্রণ লাগাতে। হাত দিয়ে এই কাজটা করা বেশ ঝামেলার এবং কঠিন। সেক্ষেত্রে এই মাশকারা ব্রাশটি তেলে ডুবিয়ে নিয়ে আইল্যাশে লাগাতে হবে। প্রতিদিন রাতে মেকআপ ক্লিন করে এই কাজটি করলে দুই সপ্তাহের মধ্যেই উল্লেখজনক ফলাফল দেখতে পাবেন।
বোনাস টিপস
কোথাও যাওয়ার সময় পারফিউমের বড় বোতল ক্যারি করা কিছুটা হ্যাসেল হতে পারে। এই হ্যাসেল এড়াতে পুরনো মাশকারা ব্রাশ ও বোতল দুইই ব্যবহার করতে পারেন। পুরনো মাশকারার বোতলে সামান্য পরিমাণে পারফিউম ঢেলে নিয়ে রাখতে পারেন এবং ট্রাভেল করার সময় ব্যবহার করতে পারেন। ব্যবহারের সময় ঐ মাশকারা ওয়ান্ডটাই হাতে বা ঘাড়ে লাগিয়ে নিলেই হয়ে যায়।
এই ছিল আমাদের আজকের আলোচনা। তাহলে নেক্সট যে মাশকারার বোতলটা শেষ হয়ে যাবে, সেটা চট করেই ফেলে না দিয়ে পরিষ্কার করে নিন, তারপর দেখুন কতগুলো খুঁটিনাটি কাজে এই ওয়ান্ডটি কাজে লাগছে। অনলাইনে কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, ইস্টার্ন মল্লিকা, বসুন্ধরা সিটি, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), সীমান্ত সম্ভার, চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক