‘মেকআপ করার পরই ফেইসে একনে হয়! এতগুলো প্রোডাক্ট কিনলাম সেদিন। তাহলে কি এগুলো আর ব্যবহার করা হবে না? আবার স্কিনকেয়ারও তো করছি। তাও কোনো লাভ হচ্ছে না।’ অনেকেরই কমন একটি কমপ্লেইন থাকে যে রেগুলার স্কিনকেয়ার করা সত্ত্বেও এবং মেকআপ প্রোডাক্ট অ্যাপ্লাই করার পর ফেইসে একনে বা পিম্পল দেখা দিচ্ছে। হয়তো ভাবতে পারেন এই একনের জন্য মেকআপ বা স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টই দায়ী। অথচ আপনি কি জানেন সব সময় প্রোডাক্টের দোষ থাকে না? কিছু কমন স্কিনকেয়ার ও মেকআপ মিসটেকস আছে যেগুলোর কারণেও একনে ব্রেকআউট হতে পারে। আজ আমরা এসব মিসটেকস নিয়েই জানবো।
একনে ব্রেকআউট এর জন্য দায়ী স্কিনকেয়ার ও মেকআপ মিসটেকস
স্কিন প্রিপেয়ার না করা
স্কিনে একনে থাকলে প্রবলেম আরও বাড়তে পারে ভেবে অনেকেই স্কিন প্রিপেয়ার না করেই ডিরেক্ট মেকআপ করেন। বিভিন্ন স্কিন প্রোটেক্টর যেমন- সানস্ক্রিন, ময়েশ্চারাইজার বা অ্যান্টি একনে ক্রিম কিছুই ইউজ করেন না। এটা কিন্তু স্কিনকেয়ার মিসটেকস এর মধ্যে একটি। তাই একনে দ্বারা স্কিন এফেক্টেড হওয়ার আগেই কেয়ারফুল হতে হবে।
ফেইস ক্লিন না করে মেকআপ অ্যাপ্লাই করা
একনে ব্রেকআউট হওয়ার মেজর একটি কারণ হচ্ছে অপরিষ্কার মুখে মেকআপ প্রোডাক্ট অ্যাপ্লাই করা। কারণ স্কিনে ডার্ট ও অয়েল মেকআপের সাথে মিক্সড হয়ে পোরস ক্লগ করে দেয়। সেই সাথে ডার্টে যে ব্যাকটেরিয়া থাকে সেগুলো স্কিনে ট্রান্সফার হয়ে ইনফ্ল্যামেশন ও ইনফেকশন তৈরি করে। এই প্রবলেম যেন না হয় সেজন্য মেকআপ অ্যাপ্লাই করার আগে মাইল্ড ক্লেনজার দিয়ে ফেইস ক্লিন করে নিন। এতে স্কিনের ডার্ট, এক্সেস অয়েল ও ব্যাকটেরিয়া রিমুভ হয়ে ব্রেকআউট হওয়ার চান্স কমে যাবে।
অপরিষ্কার আঙুল দিয়ে মেকআপ করা
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা মেকআপ প্রোডাক্ট আঙুল দিয়ে অ্যাপ্লাই করি। সহজ হয় বলে কাজটি আমরা অনেকেই করি। কিন্তু যদি আপনার আঙুল ক্লিন না থাকে তাহলে এখান থেকেই ব্যাকটেরিয়া ও জার্ম ফেইসে চলে যায় এবং একনে হওয়ার চান্স বেড়ে যায়। তাই আঙুলের বদলে ব্লেন্ডার অথবা বিউটি ব্রাশ দিয়ে মেকআপ ব্লেন্ড করুন। আর মেকআপ টুলগুলো নিয়মিত ক্লিন করতে ভুলবেন না যেন!
অপরিষ্কার মেকআপ টুলস ইউজ করা
আচ্ছা বলুন তো, লাস্ট কবে আপনি আপনার মেকআপ ব্রাশ বা অ্যাপ্লিকেটর ক্লিন করেছিলেন? যদি একদমই মনে করতে না পারেন, তাহলে ধরে নিন এগুলোতে ডার্ট, অয়েল আর ব্যাকটেরিয়া অলরেডি জমে গিয়েছে। আর এগুলো স্কিনের জন্য মোটেও ভালো নয়। যখন অপরিষ্কার এই টুলস দিয়ে আপনি মেকআপ করছেন, তখন পোরস ক্লগ হয়ে যাচ্ছে এবং ব্রেকআউট হওয়ার চান্স বেড়ে যাচ্ছে। সপ্তাহে অন্তত ১ দিন চেষ্টা করুন টুলস ক্লিন করে ফেলতে।
অতিরিক্ত ফাউন্ডেশন ব্যবহার করা
একদিকে একনে প্রবলেম ফেইস করছেন, অন্যদিকে এই প্রবলেম রিমুভ করার জন্য স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট খুঁজছেন। আবার মেকআপ করার সময় এই একনে হাইড করার জন্য ফাউন্ডেশনের হেভি লেয়ারও লাগাচ্ছেন! আদৌ কি এতে কোনো সমাধান মিলবে? একদম না! কারণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত ফাউন্ডেশন ব্যবহার করলে পোরস ক্লগ হয়ে যেতে পারে, ডার্ট ও অয়েল ট্র্যাপ হয়ে একনে ফর্ম করতে পারে।
মেকআপ প্রোডাক্ট শেয়ার করা
আপনি কি প্রায়ই বন্ধুদের সাথে নিজের ব্যবহার করা মেকআপ ব্রাশ ও স্পঞ্জ শেয়ার করেন? অন্য কারও থেকে নেয়া টুলস বা প্রোডাক্ট ইউজ করলে সেগুলোতে অয়েল বা জার্ম লেগে থাকতে পারে, যা স্কিনের জন্য বেশ হার্মফুল। এতে একনে ব্রেকআউট হতে পারে। তাই অন্যের মেকআপ টুলস ব্যবহার করা থেকে এবং নিজেরগুলোও অন্যকে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
এক্সপায়ার্ড মেকআপ প্রোডাক্ট ব্যবহার করা
অনেকদিন ব্যবহার করা না হলে আমরা ধরে নেই মেকআপ প্রোডাক্টের কার্যকারিতা একই রকম থাকে। এই ভেবে সেগুলো ইউজও করি। অথচ এটি করা একদমই উচিত নয়। প্রতিটি প্রোডাক্ট ব্যবহারের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ আছে। যেমন- মাশকারার মেয়াদ থাকে ৩ মাস, আই লাইনার ও আইশ্যাডো ৬-১২ মাসের মধ্যে বদলে ফেলা উচিত, ফাউন্ডেশন ও পাউডার সাধারণত ১২ মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়। তবে সবচেয়ে ভালো হয় প্রোডাক্টে মেনশন করা তারিখ অনুযায়ী ব্যবহার করা। ক্রিম বেইজড প্রোডাক্ট যদি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়, তবে তাতে মাইক্রোঅর্গানিজম গ্রো করে। তখন এগুলো ব্যবহারে স্কিনে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে যায়। এতে একনে ব্রেকআউট হওয়ার চান্স বাড়তে থাকে।
মেকআপ প্রোপারলি ক্লিন না করা
‘বাহির থেকে এসে বেশ ক্লান্ত লাগছে। আজ ফেইস ক্লিন না করেই ঘুমিয়ে যাই!’ এমন আমরা অনেকেই ভাবি, তাই না? ফেইসে একনে ডেভেলপ হওয়ার এটাও কিন্তু একটি কারণ। রাতে ঘুমানোর আগে যদি সানস্ক্রিন বা মেকআপ রিমুভ করার জন্য ফেইস ভালোভাবে ক্লিন করা না হয় তাহলে পোরস ক্লগ হয়ে যায়, এতে সিবাম প্রোডাকশন বেড়ে যায়, দেখা দেয় একনে। অনেকের স্কিন রাফ ও ড্রাই হয়ে যেতে পারে। তাই অবশ্যই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ডাবল ক্লেনজিং করতে হবে। প্রথমে জেন্টল মেকআপ রিমুভার বা মাইসেলার ওয়াটার দিয়ে ফেইস ক্লিন করে নিয়ে পরে স্কিনের জন্য স্যুইটেবল ক্লেনজার দিয়ে ফেইস ধুয়ে নিতে হবে।
মেকআপ রিমুভার কেন ইউজ করা জরুরি?
অনেকেই ভাবতে পারেন, সরাসরি ক্লেনজার দিয়ে ফেইস ক্লিন করে নিলেই তো হয়। আবার রিমুভারের কী দরকার? বলছি, শুনুন! মেকআপ রিমুভার সাধারণত ডিসল্যুশন (দ্রবণ) দ্বারা কাজ করে, অর্থাৎ মেকআপ গলিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। আপনি ফেইসে যে ফাউন্ডেশনটি অ্যাপ্লাই করেছেন সেটি কিন্তু স্কিনের মতো এক ধরনের সারফেস ক্রিয়েট করেছে। এবার এটিকে যখন আপনি কাপড় বা টিস্যু দিয়ে ক্লিন করতে যাবেন তখন এটি তোলা বেশ কঠিন লাগবে এবং স্কিনে ব্যথাও লাগতে পারে। আবার শুধু পানি দিয়ে ধুলে ভালো করে ক্লিন হবে না। তাই এমন কিছু দরকার যেটি সহজেই মেকআপ রিমুভ করবে। আবার রিমুভের পরও কিছু রেসিডিউ ফেইসে থেকে যেতে পারে। সেটা প্রোপারলি ক্লিন করার জন্য ক্লেনজার দিয়ে ফেইস ক্লিন করা হয়। ঠিক একইভাবে ডার্ট, পল্যুশন, সানস্ক্রিন, প্রোডাক্ট রেসিডিউ, মেকআপ ইত্যাদি দূর করে ফেইস প্রোপারলি ক্লিন করার জন্যও দুটি প্রোডাক্টই জরুরি। তাই আপনার স্কিনকেয়ার রুটিনে অবশ্যই একটি মেকআপ রিমুভার ও ক্লেনজার অ্যাড করবেন।
এই তো জানিয়ে দিলাম কমন কিছু স্কিনকেয়ার ও মেকআপ মিসটেকস সম্পর্কে, যেগুলোর কারণে ফেইসে একনে হতে পারে। আশা করি আর্টিকেলটি হেল্পফুল ছিল। অথেনটিক মেকআপ প্রোডাক্ট, হেয়ার ও স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে পারেন সাজগোজ থেকে। সাজগোজের ৬টি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ণ মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) এ অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।
ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক