ভালো আছেন সবাই? আশা করি আছেন। এদিকেও সব ভালো।
আমি ঠিক করেছি একে একে বাংলাদেশের সবচেয়ে পপুলার আর সহজলভ্য স্কিন এবং হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট গুলোর রিভিউ( আমি আজ পর্যন্ত যেগুলো ব্যবহার করেছি আর কি) একে একে আপনাদের সাথে শেয়ার করব। সেই ধারাবাহিকতায় আজকের এই রিভিউ, ইউনিলিভার বাংলাদেশের জনপ্রিয় প্রোডাক্ট পণ্ডস হোয়াইট বিউটি পিঙ্কিস হোয়াইট গ্লো লাইটনিং ফেসিয়াল ফোম নামের ফেস ওয়াস নিয়ে। আপনারা কি চিন্তা করেছেন আমরা প্রতিদিন ইউনিলিভারের কত গুলো প্রোডাক্ট ব্যবহার করি?? আমি দেশি এবং available প্রোডাক্টের রিভিউ লেখা শুরু করে ব্যাপারটা লক্ষ্য করলাম! আমি শিওর পাঠকদের যে কারও স্কিন কেয়ার ক্লসেট থেকে ৮০-৯০% ইউনিলিভার প্রোডাক্ট বের করা যাবে। অ্যামেজিং, তাই না?
[picture]
আচ্ছা, রিভিউতে ফিরে যাই। আমি জানি অনেক পাঠকই এই পণ্ডস হোয়াইট বিউটি ফেসিয়াল ফোম রেগুলার ব্যবহার করেন। আমিও করেছি। অ্যাকচুয়ালি যখন হোয়াইট বিউটি রেঞ্জ প্রথম বাংলাদেশের বাজারে আসে তখন থেকেই। পণ্ডস বলে এই হোয়াইট বিউটি রেঞ্জ আমাদের উপমহাদেশের নারীদের ত্বক যা কিনা রোজ রোজ রোদ, ধুলা, পলিউশনের সাথে যুদ্ধ করে তার কথা মাথায় রেখে স্পেশালি ফরমুলেট করা হয়েছে।
প্রোডাক্ট ক্লেইমঃ
এই ফেস ওয়াশ ত্বকের গভীর থেকে বর্জ্য, তেলতেলে ভাব আর পলিউশন দূর করে যা ত্বককে করে ডাল আর প্রাণহীন। আর আপনার সামনে উন্মোচিত করে ডাল লেয়ারের নিচে লুকিয়ে থাকা গ্লোয়িং আর স্পার্কলিং ত্বক। এর ভিটামিন বি৩ কমপ্লেক্স (যা ত্বকের নিচের লেয়ার গুলয় কাজ করার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে) আপনাকে নিয়মিত ব্যবহারে দেয় উজ্জ্বল আর দাগহীন ত্বক।
কোথায় পাবেন?
খুবই সহজলভ্য এই ফেসিয়াল ফোম আপনারা দেশের যেকোনো প্রান্তের যেকোনো কসমেটিক শপে পেয়ে যাবেন।
উপাদানঃ
আমার অভিজ্ঞতাঃ
এবারে আসি মূল কথায়, আগেই বলেছি আমি দীর্ঘদিন পণ্ডস হোয়াইট বিউটি ফেসিয়াল ফোম ইউজ করেছি। আপনারা অনেকেও হয়ত করেছেন। আমার ত্বক তৈলাক্ত এবং হাল্কা ব্রনের সমস্যা আছে। আমি যখন এটা প্রথম ব্যবহার করা শুরু করি তখন শীত কাল প্রায় শেষ হয়ে আসছিল। সাধারনত আমি এই সময়টাতেই নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করি। এতে ত্বকে কোন অতিরিক্ত সমস্যার ভয় থাকে না। পণ্ডস বলে এই ফেস ওয়াশ সব ত্বকের অধিকারীরা ব্যবহার করতে পারবে। আমি বলব আমার কি ধারনা আমার অয়েলি স্কিনে এই ফেস ওয়াশ ব্যবহার করার পর।
এই প্রোডাক্ট সাদা আর পিঙ্কের কম্বিনেশনের ফ্লিপ ক্যাপ টিউবে আসে। প্যাকেজিং নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই। ফ্লিপ ক্যাপটাও বেশ শক্ত, দীর্ঘদিন পরও কোন ক্ষতি হয় না। ভিতরের প্রোডাক্ট খুবি হাল্কা পিঙ্ক tint এর সাদা রঙের ক্রিম বেস। যা বেশ ঘন। আপনি যদি direct এই প্রোডাক্ট মুখে লাগিয়ে ঘষাঘষি শুরু করেন তাহলে কখনও ফোমের দেখা পাবেন না। বরং ঘষায় স্কিনের ক্ষতি হবে আর প্রোডাক্ট পানির সাথে মিশে ওয়েস্ট হবে। আর সহজে ধুয়ে ফেলতেও পারবেন না। ত্বকের সাথে সেঁটে থাকবে।
এই ফেসিয়াল ফোম বাবহারের সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে খুব অল্প, মানে এক মটর দানা পরিমান ফেস ওয়াশ বের করে একটু পানি মিসিয়ে দুই হাত ঘষে হাতে ফেনা তৈরি করে নেয়া। এতে খুব কম সময়ে অনেক ফেনা তৈরি হয়। এবার এই ফেনা মুখে লাগিয়ে হালকা ম্যাসাজ করে স্কিন পরিস্কার করে ফেলা। ধোয়ার সাথে সাথে একদম পরিস্কার ভাবে সব ফোম ত্বকের ময়লা, তেল সহ বেরিয়ে যাবে।
এই ফেস ওয়াশের যে দিক আমাকে অবাক করেছে সেটাহচ্ছে এটা পরিমানে কত অল্প লাগে সেটা। আমি আমার লাইফে এত লং লাসটিং প্রোডাক্ট খুব অল্প ব্যবহার করেছি। এটা যেন শেষ হতেই চায় না।অবশ্য একেকজন একেক ভাবে প্রোডাক্ট ইউজ করে। কিন্তু আমি বলব দাম, পরিমান আর পারফরমান্সে সে উইনার!
এই ফেসিয়াল ফোম খুব ভালো ভাবে ত্বকের ধুলা ময়লা দূর করে। আমি আমার তৈলাক্ত ত্বকে এটা ব্যবহার করার পর কোন র্যাস বা ব্রন উঠতে দেখি নি। এটা শীত কালে আমার ত্বকে খুব ভালো স্যুট করেছিল। কিন্তু যখন অনেক গরম পরে গেল তখন ফেস ওয়াশ ব্যবহারের ৩-৪ ঘন্টা পর মুখ তেলতেলে হয়ে যেতে শুরু করল। অবশ্য আমার কোন সমস্যা নেই কারন, এটাত আর তৈলাক্ত ত্বকের জন্য স্পেশাল কোন ফেস ওয়াশ নয়। আমার এক্সপেকটেশন এত বেশি না। আমি মনে করি সব সিজনে এটা তৈলাক্ত, নরমাল আর কম্বিনেশন স্কিনের জন্য বেস্ট ফেস ওয়াশ হবে। ড্রাই স্কিনকে এই ফেস ওয়াশ সব সিজনে যথেষ্ট আদ্রতা দিতে পারবে না।
এটা দিয়ে মুখ ধোবার সাথে সাথে ত্বকে একটা হালকা গ্লো আসে, ফেস প্যাক লাগানর পর যেমন হয়। এই গ্লো বেশ কিছুক্ষণ থাকে। ত্বক আবার ময়লা হয়ে গেলে গ্লো চলে যায়। এজন্য আমি বলব যেহেতু ডিপ ক্লিঞ্জিংএর জন্যই এই গ্লো আসে তাই বাইরের ধুলা ময়লা থেকে এসে এই ফেস ওয়াশ ব্যবহার করলে পার্থক্যটাচোখের সামনে দেখতে পারবেন। এই ফেস ওয়াশ ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেলতেলে ভাব দূরে রাখলেও ত্বক রূক্ষ করে না। আর দীর্ঘদিনের ব্যবহারে এই ফেস ওয়াশ ত্বকের আনইভেন স্কিন টোন ঠিক করতে কিছুটা সাহায্য করে। কিন্তু আপনি যদি মনে করেন একদম ফর্সা হয়ে যাবেন তবে জানিয়ে দিচ্ছি তেমন কিছু হয় না। আর হওয়া উচিতও না। ফেস ওয়াশের ত্বক ফর্সা করে দেবার ক্ষমতা থাকার কথা না।
সব মিলিয়ে এই ফেস ওয়াশের ত্বক পরিস্কার করার ক্ষমতা আর আমার তৈলাক্ত সেন্সিটিভ ত্বকে এটা বাবহারের পর কোন ধরনের reaction দেখা না দেয়ায় আমি বলতে পারি যে, এটা এই প্রাইজ রেঞ্জে বাজারে থাকা অন্যতম বেস্ট ফেস ওয়াশ। আপনার ত্বক যেমনি হোক না কেন এটা ব্যবহারে ত্বকের কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু মনে রাখবেন, এটা কিন্তু আপনাকে পিঙ্কিশ হোয়াইট করে ফেলবে না। সুতরাং, সেই আশা করবেন না।
পণ্ডস বলে, এই প্রোডাক্ট পুরো হোয়াইট বিউটি রেঞ্জের সাথে ব্যবহার করলে আরো ভালো ফল পাওয়া যাবে। সেটাও করে দেখতে পারেন। এই রেঞ্জের অন্যান্য প্রোডাক্ট ব্যবহার করার এক্সপেরিয়েন্স আমার খারাপ নয়।
এই প্রোডাক্টের যে দিক গুলো আমার ভাল লেগেছেঃ
– দামের তুলনায় পরিমান অনেক ভালো, আর অনেক দিন ব্যবহার করা যায়।
– গভীর থেকে ত্বকের ধুলা ময়লা পরিস্কার করতে পারে।
– প্রচুর ফেনা বা ফোম হয়, যেমন নাম তেমন কাজ।
– মুখ ধোবার সাথে সাথে স্কিনে গ্লো দেয়।
– আমার তৈলাক্ত ত্বক থেকে তেল চিটচিটে ভাব ৩-৪ ঘণ্টা দূরে রাখতে পারে।
– নরমাল, কম্বিনেশন আর অয়েলি স্কিনের জন্য বেস্ট।
– দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করলে ত্বকের ট্যান একটু কমে আসে।
এই প্রোডাক্টের যে দিক গুলো আমার ভাল লাগেনিঃ
– ড্রাই স্কিনে যথেষ্ট আদ্রতা দেবে কিনা তা নিয়ে আমি শিওর না।
– প্যাকেজিং এ লেখা সরাসরি মুখে লাগিয়ে ধোয়ার কথা, কিন্তু এভাবে ব্যবহার করলে প্রোডাক্ট ভালভাবে কাজ করে না (অন্তত আমার ক্ষেত্রে করেনি)।
আমার রেটিংঃ
যেহেতু ‘সাজগোজে’ আজকাল সবার জন্য অনেক অনেক প্রোডাক্ট রিভিউ পাবলিশ করা হচ্ছে, তাই প্রোডাক্ট রেটিং শুরু করে দেই কেমন? এতে আপনাদের বুঝতে এবং প্রোডাক্ট কম্পেয়ার করতে সুবিধা হবে।
তো, পণ্ডস হোয়াইট বিউটি ফেসিয়াল ফোমের জন্য আমার রেটিং-
৮/১০ ( দশে আট) , এই দামে এরকম পারফরম্যান্সের প্রোডাক্ট সবার হাতের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য। ড্রাই স্কিন আর ব্যবহার বিধি নিয়ে আমি confused বলে ২ মার্ক কেটে নিলাম।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই প্রোডাক্ট এতই long lasting যে আমি শেষে bored হয়ে অন্য ফেস ওয়াশ ব্যবহার করা শুরু করেছিলাম। কিন্তু আবারো এটা কিনতে বা ব্যবহার করতে আমার কোন সমস্যা নেই।
লিখেছেনঃ মীম তাবাসসুম।