ইয়াং লুকিং স্কিন কে না চায়? বয়সের গ্রাফটা উপরের দিকে উঠতে থাকলেও আমরা সবসময় চাই নিজের মধ্যে সেই তারুণ্যদীপ্ত ও সজীবতা ধরে রাখতে। সময়কে তো আটকে রাখা যায় না, সেটা কখনোই সম্ভব না! অনেকের তো দেখা যায় যে সময়ের আগেই স্কিনে বয়সের ছাপ চলে আসে। বয়স যা-ই হোক না কেন, বাইরে থেকে যেন দেখতে লাগে তরুণ, এটাই তো আমাদের চাওয়া। কি, ঠিক বললাম তো? কিন্তু বয়স বাড়লেও ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখা কি এতটাই ইজি? সহজ কাজ না, কিন্তু স্কিনকেয়ার রুটিনে ও লাইফস্টাইলে চেঞ্জ আনলে এটা একেবারে অসম্ভবও না! কিন্তু আগে আমাদের জানতে হবে এই প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস এর জন্য কোন কারণগুলো দায়ী। যারা নিজের ত্বক নিয়ে সচেতন এবং ত্বকের তারুণ্য ও সতেজতা ধরে রাখতে চান, তাদের জন্যই আজকের ফিচার।
বয়স কম থাকলে ত্বকের ইলাস্টিসিটি বেশি থাকে, যার জন্য ত্বকে সহজে বলিরেখা পড়ে না। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথেই দেখা যায় ত্বকে রিংকেলস পড়ে যাচ্ছে, ফাইন লাইনস দেখা দিচ্ছে। এর কারণ হলো, বয়স বাড়ার সাথে ত্বকের ডার্মিসের পুরুত্ব কমতে থাকে। এই ডার্মিসের পুরুত্ব কমে যাওয়ার কারণে ত্বকের ইলাস্টিসিটি কমে যায় এবং বলিরেখা দেখা যায়। আরও অনেক কারণেই স্কিনে এজিং সাইনস ভিজিবল হয়।
কিছু কারণ যা আনে প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস
এজিং প্রসেস স্বাভাবিক ব্যাপার হলেও আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বেশ কিছু অভ্যাসের কারণে সময়ের অনেক আগেই ফেইসে রিংকেলস ও ফাইন লাইনস দেখা দেয়। চলুন জেনে নেই কারণগুলো।
ইউভি রে
সূর্যের ইউভি রে আমাদের ত্বকের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। এটি ত্বকের কোলাজেন ও ইলাস্টিন প্রোটিন ভেঙে দেয়, যা এজিং প্রসেসকে ত্বরান্বিত করে। এমনকি স্কিন ক্যান্সারের জন্যও অনেক সময় এই রশ্মিকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়।
জেনেটিক্যাল
আপনার আমার সবার শরীরের কোষের মধ্যেই জিন (gene) আছে, এই জিনগুলো আমাদের জৈবিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। কত দ্রুত স্কিনে এজিং সাইনস চলে আসবে সেটাও নির্ধারিত হয়।
ক্র্যাশ ডায়েট
হেলদি ডায়েট আমাদের ত্বকের মসৃণতা ও উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করে৷ ডায়েটে চিনি ও কার্ব অতিরিক্ত পরিমাণে থাকলে এবং ফাস্টফুড বা আনহাইজেনিক ফুড বেশি পরিমাণে খেলে স্কিনে এর নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট পড়বেই। ক্র্যাশ ডায়েটের ফলে আমাদের শরীরে পুষ্টির ঘাটতি থেকে যায়, যা এনে দেয় প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস।
স্ট্রেস
স্ট্রেস শারীরিকভাবে আমাদেরকে প্রভাবিত করে, যেটা চট করে আমরা বুঝতে পারি না! স্ট্রেসের কারণে শরীরে যে হরমোন লেভেলের আপ ডাউন হয়, সেটা প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস এর অন্যতম একটি কারণ।
নিয়মিত ত্বকের যত্ন না নেওয়া
হেলদি ও ইয়াংগার লুকিং স্কিন পাওয়ার জন্য নিয়মিত ত্বকের যত্ন নেওয়া অনেক বেশি জরুরি৷ যারা সানস্ক্রিন প্রোপারলি অ্যাপ্লাই করেন না, ঠিকভাবে স্কিন ময়েশ্চারাইজড রাখেন না; তাদের কিন্তু ফেইসে তাড়াতাড়ি এজিং সাইনস চলে আসে।
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব
আমরা যখন ঘুমাই, তখন আমাদের শরীর একটি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। এসময় ত্বকে নতুন কোষ পুনর্গঠিত হয়। দিনশেষে স্কিনকেও তো রেস্ট দিতে হবে, তাই না? ঘুম কম হলে সেটা আপনার ত্বকের জন্য একেবারে ভালো নয়!
তাপমাত্রার পরিবর্তন
খুব গরম বা ঠান্ডা তাপমাত্রা দু’টোই ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। কারণ এতে ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়, যার অনিবার্য ফলাফল হলো বলিরেখা ও শুষ্কতা! যারা সারাদিন এসিতে থাকেন, তারা যদি স্কিনকে প্রোপারলি হাইড্রেটেড ও ময়েশ্চারাইজড না রাখেন, সেক্ষেত্রে আপনার স্কিন কিন্তু এফেক্টেড হবে।
বয়স বাড়লেও ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখার উপায়
বয়স বাড়বেই, কিন্তু সেটার ইফেক্ট যেন ফেইসে তাড়াতাড়ি না পড়ে সেটার জন্যই আমাদের সচেতন থাকতে হবে। আমাদের ছোটো ছোটো কিছু পদক্ষেপ ত্বককে অনেকদিন পর্যন্ত রাখতে পারে সজীব ও সুন্দর! এবার বরং দেখে আসা যাক কী কী উপায়ে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখা যায়-
১) প্রোপারলি স্কিনকেয়ার করুন
দিনশেষে দূষণ, মেকআপ, ময়লা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে ডাবল ক্লেনজিং মেথড ফলো করুন। এরপর হাইড্রেটিং টোনার ব্যবহার করতে হবে। অ্যান্টি এজিংয়ের জন্য রেটিনল সিরাম বেশ পপুলার। তবে রেটিনল ইউজ করতে চাইলে আগে বেসিক স্কিনকেয়ার রুটিন মেনটেইন করতে হবে এবং একদম লো পার্সেন্টেজ দিয়ে শুরু করতে হবে। আপনার স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী সিরাম চুজ করুন। ডিহাইড্রেটেড স্কিন হলে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড বেশ ভালো অপশন। সিরামের পর স্কিন টাইপ অনুযায়ী ভালোমানের ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করুন। দিনের বেলা সানস্ক্রিন মাস্ট। নাইট টাইম স্কিন কেয়ারে নাইট ক্রিম, আই ক্রিম এগুলো ইনক্লুড করা যেতে পারে।
২) কার্ব ও সুগার এড়িয়ে চলুন
বেশি পরিমাণে চিনি ও কার্ব জাতীয় খাবার আপনার শরীর ও ত্বক দু’টোর জন্যই খারাপ! একটা বয়সে এসে খাদ্যতালিকাতে লাগাম টানতে হবে। চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার কমিয়ে ফ্রেশ ফ্রুট, বাদাম, সবজি, মাছ, চিকেন এগুলো ডায়েটে রাখুন। হেলদি ফ্যাট, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, জিংক, ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার অ্যান্টি এজিংয়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
৩) স্ট্রেস ফ্রি থাকুন
স্ট্রেস ফ্রি লাইফস্টাইল মেনটেইন করার ট্রাই করুন। সময়মতো ঘুমাতে হবে। রাত জেগে কাজ করা বা মুভি দেখার অভ্যাস থাকলে বদলে ফেলুন। স্ট্রেস ফ্রি থাকতে ইয়োগা বা মেডিটেশন করতে পারেন, শখের কাজগুলো করতে পারেন। আপনার স্ক্রিন টাইম কমিয়ে আনুন যতটা সম্ভব।
৪) পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন
পানি আমাদের শরীরের ৭০ ভাগ গাঠনিক উপাদান, তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ সেটা কি আর আলাদা করে বলার প্রয়োজন আছে? দৈনিক অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করুন। ত্বককে হাইড্রেটেড ও হেলদি রাখতে পানির বিকল্প নেই। তবে প্যাকেটজাত জুস, এনার্জি ড্রিংকস, সফট ড্রিংকস এগুলো ক্ষতিকর। ডাবের পানি, ঘরে বানানো শরবত, ডিটক্স ড্রিংকস এগুলো আপনার জন্য বেস্ট অপশন।
আমরা কেউই চাই না যে বয়স বাড়ুক, কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম বদলানোর কোনো উপায় তো নেই! যদি একটু সচেতন হই, তাহলে ইয়াং লুকিং স্কিন কিন্তু আমরা পেতেই পারি। ৪০ বছরেও স্কিন দেখাবে ৩০ এর মতো, এটাই আমাদের চাওয়া। তাহলে নিজেই পদক্ষেপ নিন আজ থেকে। অনলাইনে অথেনটিক স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, ইস্টার্ন মল্লিকা, বসুন্ধরা সিটি, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), সীমান্ত সম্ভার, চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ