স্ক্যাল্পের বিল্ড আপ কথাটি বর্তমানে বেশ পরিচিত। অনেকেই এখন এই সমস্যায় ভুগে থাকেন, অনেকে আবার খুশকির সাথে বিল্ড আপকে এক করে ফেলেন। অথচ এ দুইয়ের মাঝে বেশ পার্থক্য আছে। তাই প্রথমেই জানা দরকার বিল্ড আপ কী এবং খুশকির সাথে এর কী কী পার্থক্য আছে। সেই সাথে জানিয়ে দিবো স্ক্যাল্পের বিল্ড আপ রিমুভ করার উপায় সম্পর্কে।
স্ক্যাল্পের বিল্ড আপ কী?
সহজ ভাষায় বলতে গেলে আমাদের স্ক্যাল্প থেকে বের হওয়া তেল, সেবাম, ঘাম এবং বাইরের ধুলোবালি, ময়লা একত্রিত হয়ে স্ক্যাল্পের উপর একটি আস্তরণের সৃষ্টি করে, যেটাকে বলা হয় বিল্ড আপ। এটি হলো ফ্লেকি আস্তরণ। অপরদিকে খুশকি হলো শুষ্ক ত্বক, যা গুড়ি গুড়ি হয় এবং চুল ঝাড়া দিলে ঝরে ঝরে পড়ে। কিন্তু বিল্ড আপ চুল ঝাড়া দিলে ঝরে পড়ে না বরং একটি আস্তরণ হিসেবে স্ক্যাল্পে জমে থাকে।
যদি শ্যাম্পু করার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই পুনরায় স্ক্যাল্প অয়েলি ও ময়লা হয়ে যায়, সেই সাথে স্ক্যাল্প চুলকায় এবং নখ দিয়ে চুলকানোর পর নখের সাথে সাদা সাদা গুড়ি গুড়ি যা কিছুটা তৈলাক্ত অর্থাৎ খুশকির মতো অতটা শুষ্ক নয় এমন উঠে আসে, তবে আপনি বিল্ড আপ এর সমস্যায় ভুগছেন। আর এই বিল্ড আপ থেকে মাথার ত্বককে রেহাই দেওয়া জরুরি নয়তো এটি মাথার ত্বকে মোটা আস্তরণ জমাতেই থাকবে। এর ফলে যে যে সমস্যাগুলো দেখা যাবে তা হলো-
- মাথার ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হবে
- সঠিকভাবে স্ক্যাল্প কখনো পরিষ্কার হবে না যতক্ষণ না বিল্ড আপের আস্তরণটি দূর হবে
- চুল পড়ে যাওয়া এবং রুক্ষ হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিবে
- নতুন চুল কম গজাবে, সেই সাথে চুলের লেন্থ বাড়বে না
বিল্ড আপ রিমুভ করার উপায়
এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দরকার বিল্ড আপ থেকে রেহাই পাওয়া। তাই আজকে এমনই কিছু উপায় আপনাদের সামনে তুলে ধরবো-
১) সঠিকভাবে শ্যাম্পু করা
সঠিকভাবে শ্যাম্পু করা বলতে আবার কী বোঝায় তা ভাবছেন নিশ্চয়ই? এর অর্থ হচ্ছে সঠিক পরিমাণে শ্যাম্পু স্ক্যাল্পে ব্যবহার করে ময়লা পরিষ্কার করা। শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হয় শুধুমাত্র স্ক্যাল্পে, চুলের লেন্থ এ নয়। এছাড়াও অনেকেই যারা বিল্ড আপ এর সমস্যায় ভোগেন, তারা ভাবেন বেশি পরিমাণে শ্যাম্পু ব্যবহার করলে হয়তো চুল বেশি পরিষ্কার হবে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণই একটি ভুল ধারণা। বরং এমনটি করলে স্ক্যাল্প বেশি ড্রাই হয়ে যায়। এর ফলে বিল্ড আপ তো দূর হয়ই না বরং স্ক্যাল্পে আরো অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়, সেই সাথে বিল্ড আপও বাড়তে থাকে।
সুতরাং শুধুমাত্র মাথার ত্বকের জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু পরিমাণের শ্যাম্পু একটি পাত্রে নিয়ে তাতে পানি মিশিয়ে ফেনা করে স্ক্যাল্পে ব্যবহার করতে হবে। পানি মিশ্রিত শ্যাম্পু মাথার সম্পূর্ণ ত্বকে ছড়িয়ে হালকা হাতে ম্যাসাজ করে করে ময়লা দূর করতে হবে। পানি মিশিয়ে ব্যবহার করলে শ্যাম্পু কিছুটা দ্রবীভূত হয় এবং স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করা সহজ হয়। তবে কখনোই পানি দিয়ে শ্যাম্পু মিশিয়ে সল্যুশন বানিয়ে রেখে দেওয়া যাবে না। এতে শ্যাম্পুর ভিতরে থাকা প্রিজারভেটিভ ও অন্যান্য উপাদানের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই শ্যাম্পু করার সময় তৎক্ষণাৎ সল্যুশন বানিয়ে ব্যবহার করা উচিত।
২) স্ক্যাল্পে কন্ডিশনার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা
কন্ডিশনার শুধুমাত্র চুলের লেন্থ এর জন্য, স্ক্যাল্পে বা স্ক্যাল্পের উপরিভাগের চুলে ব্যবহারযোগ্য নয়। অনেকেই আছেন যারা কন্ডিশনার মাথার ত্বকে ব্যবহার করেন। এর ফলে কন্ডিশনারের উপাদান তালিকায় থাকা তেল এবং বিভিন্ন সিলিকন একত্রিত হয়ে মাথার স্ক্যাল্পে বিল্ড আপ এর সৃষ্টি করে। তাই কখনোই কন্ডিশনার মাথার ত্বকে ব্যবহার করা যাবে না, তাই এ ধরনের অভ্যাস থাকলে তা আজকেই বদলে ফেলুন।
৩) সালফেটযুক্ত শ্যাম্পুর ব্যবহার
ইদানীং অনেকেই শ্যাম্পুতে সালফেট থাকলেই তা ক্ষতিকর এমন যুক্তিহীন ভীতির মধ্যে আছেন, যার ফলে অনেকেই সালফেটযুক্ত শ্যাম্পু এড়িয়ে যান। অনেকেই আছেন যারা সালফেটযুক্ত শ্যাম্পু বাদ দিয়ে সালফেট ফ্রী শ্যাম্পুর দিকে ঝুঁকছেন। আর এর ফলেই বিল্ড আপ এ ভুক্তভোগীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। চুলের ময়লা, বিল্ড আপ সঠিকভাবে পরিষ্কার করার জন্য অবশ্যই মাইল্ড শ্যাম্পুর পাশাপাশি সালফেটযুক্ত একটি ক্ল্যারিফাইং শ্যাম্পু রুটিনে রাখা জরুরি।
সালফেট বা ক্ল্যারিফাইং শ্যাম্পু ছাড়া কখনোই স্ক্যাল্পের কঠিন ময়লা বা বিল্ড আপ দূর করা সম্ভব নয়। সালফেট ফ্রি মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ঘাম, হালকা ধুলোবালি যা প্রতিদিন স্ক্যাল্পে জমা হয় তা দূর করা সম্ভব কিন্তু বিল্ড আপ এবং জমে থাকা কঠিন ময়লা দূর করা সম্ভব নয়। তাই অবশ্যই রুটিনে একটি সালফেটযুক্ত শ্যাম্পু রাখতে হবে, যা কিন্তু প্রতিদিন ব্যবহার এর জন্য নয় বরং সপ্তাহে অন্তত এক থেকে দুই দিন ব্যবহার করতে হবে এবং বাকি অন্য দিনগুলোতে শ্যাম্পু করলে মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। এর ফলে খুব সহজেই বিল্ড আপ থেকে মুক্তি লাভ করা যাবে।
৪) ম্যাসাজিং টুলস ব্যবহার
আমাদের স্ক্যাল্প অনেক সময়ই সঠিকভাবে পরিষ্কার করা বা ম্যাসাজ করা সম্ভব হয় না। তার প্রধান কারণ হচ্ছে স্ক্যাল্প চুলের আস্তরণ দিয়ে ঢাকা থাকে। আর এই চুলের আস্তরণের কারণে অনেক সময়ই হাতের আঙুল সঠিকভাবে স্ক্যাল্পে পৌঁছাতে পারে না। তাই বিল্ড আপ এর সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সিলিকনের তৈরি স্ক্যাল্প ম্যাসাজিং ব্রাশ পাওয়া যায়, যা দিয়ে খুব সহজেই স্ক্যাল্পে শ্যাম্পু ব্যবহারের সময় ম্যাসাজ করে পরিষ্কার করা যায়। তবে এ ধরনের ম্যাসাজিং ব্রাশ কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে সিলিকনের ব্রাশগুলো যেন খুব সফট হয়। এছাড়াও এ ব্রাশ দিয়ে খুব জোরে এবং অনেকক্ষণ ধরে ম্যাসাজ করা যাবে না। মাথার ত্বকের উপর শ্যাম্পু লাগানোর পর হালকা হাতে ম্যাসাজ করতে হবে অল্প সময়ের জন্য। তাহলেই বিল্ড আপ বা ময়লাগুলো সঠিকভাবে দূর হয়ে যাবে এবং স্ক্যাল্প সম্পূর্ণ পরিষ্কার হবে।
৫) স্যালিসাইলিক অ্যাসিডযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার
আমাদের ফেইসের স্কিনে যেমন ডেড সেলস হয় তেমনই স্ক্যাল্পেও হয়। অনেক সময় এই ডেড সেলগুলো ধুলোময়লা, ঘামের সাথে যুক্ত হয়ে একটি আস্তরণের সৃষ্টি করে যা সহজে রিমুভ হতে চায় না। যদি এই ধরনের আস্তরণগুলো সালফেটযুক্ত শ্যাম্পু ইউজ করার পরেও না যায়, সেক্ষেত্রে স্যালিসাইলিক অ্যাসিডযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত।ডেড স্কিন সেল স্ক্যাল্পে থিক প্যাচেস ক্রিয়েট করে। স্যালিসাইলিক অ্যাসিড এই ডেড সেলগুলো ডিজলভ করতে কাজ করে। এই অ্যাসিডযুক্ত শ্যাম্পু প্যাচেস ব্রেকডাউন করে এবং স্ক্যাল্প ময়েশ্চারাইজড রাখে। যাদের প্রোডাক্ট বিল্ড আপ বেশি এবং ডেডসেল বেশি তৈরি হয়, তাদের সালফেটযুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে বিল্ড আপ যেতে চায় না। তখন তাদের স্যালিসাইলিক অ্যাসিডযুক্ত শ্যাম্পু হেয়ার কেয়ার রুটিনে অ্যাড করা উচিত।
আশা করা যায় উপরোক্ত বিষয়গুলো সঠিকভাবে মেনে চললে বিল্ড আপের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হবে। অথেনটিক হেয়ার কেয়ার, স্কিন কেয়ার ও মেকআপ প্রোডাক্ট কিনতে পারেন সাজগোজ থেকে। সাজগোজের কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার এ অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।
ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক