বলুন তো, দিনের বেলার বাইরে বের হওয়ার আগে কোন প্রোডাক্টটি অ্যাপ্লাই না করলেই নয়? ঠিক ধরেছেন, সানস্ক্রিন! আমাদের স্কিনকেয়ার রুটিনের আল্টিমেট গেইম চেঞ্জার হলো সানস্ক্রিন। এটি এমন একটি স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট, যেটি রেগুলার অ্যাপ্লাই না করলে স্কিনে যত ধরনের প্রোডাক্টই ব্যবহার করা হোক না কেন, সেগুলোর প্রোপার বেনিফিট পাওয়া যায় না! কিন্তু এই বেসিক স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টটি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কনফিউশন আমাদের এখনও আছে। সানস্ক্রিনের ধরন নিয়ে অনেকেরই বিভিন্ন প্রশ্ন থাকে। ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন vs কেমিক্যাল সানস্ক্রিন নিয়ে আজকের ফিচার।
সানস্ক্রিনের ধরন
চলুন শুরুতেই জেনে আসা যাক ফিজিক্যাল ও কেমিক্যাল সানস্ক্রিন বলতে কোন ধরনের সানস্ক্রিনকে বোঝানো হয়।
ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন মিনারেল সানস্ক্রিন নামেও পরিচিত। এটি মূলত সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মিকে রিফলেক্ট ও হিটে ট্রান্সফর্ম করার মাধ্যমে আমাদের ত্বককে সুরক্ষিত রাখে। ফিজিক্যাল সানস্ক্রিনের মূল অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট হলো জিংক অক্সাইড ও টাইটেনিয়াম ডাই অক্সাইড। এই দু’টো ইনগ্রেডিয়েন্টই এফডিএ কর্তৃক অনুমোদিত এবং এগুলো ত্বকের জন্য পুরোপুরি নিরাপদ।
অন্যদিকে কেমিক্যাল সানস্ক্রিন হলো এমন এক ধরনের সানস্ক্রিন যেটি সরাসরি আমাদের ত্বকের বাইরের লেয়ারে অ্যাবজর্ব হয়ে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে নিরাপদে রাখে। ইউভি রে কে মূলত হিটে ট্রান্সফর্ম করে অর্থাৎ ইনঅ্যাকটিভ করে দেয়। কেমিক্যাল সানস্ক্রিনের মূল অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো হলো oxybenzone, avobenzon, octinoxate ইত্যাদি। এগুলো অর্গানিক কার্বন বেইজড কম্পাউন্ড। হাইব্রিড সানস্ক্রিনে ফিজিক্যাল ও কেমিক্যাল UV ফিল্টারস এর কম্বিনেশন দেখা যায়। আশা করি এখন থেকে আপনারা সানস্ক্রিন কেনার সময় ইনগ্রেডিয়েন্ট লিস্ট দেখে কোনটি কোন সানস্ক্রিন তা সহজেই বুঝে যাবেন।
ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন vs কেমিক্যাল সানস্ক্রিন
এই সানস্ক্রিনগুলোর পার্থক্য না জানায় অনেকেই বুঝতে পারেন না তাদের স্কিনের জন্য কোনটি বেটার হবে। ফিজিক্যাল ও কেমিক্যাল সানস্ক্রিন সম্পূর্ণ আলাদা দু’টো প্রসেসে আমাদের সান প্রোটেকশন দিয়ে থাকে। কীভাবে? বলছি!
কীভাবে কাজ করে ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন?
যখন আমরা স্কিনে ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করি, তখন এই সানস্ক্রিনে থাকা জিংক অক্সাইড ও টাইটেনিয়াম ডাই অক্সাইড সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির প্রায় ৫% রিফলেক্ট করে দেয় এবং বাকি ৯৫% রশ্মি অ্যাবজর্ব করে হিটে কনভার্ট করে ফেলে। অর্থাৎ ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মিকে রিফলেক্ট করা ও হিটে কনভার্ট করে দেওয়া- এই দু’টো কাজই করে থাকে।
কীভাবে কাজ করে কেমিক্যাল সানস্ক্রিন?
অন্যদিকে যখন আমরা কেমিক্যাল সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করি, তখন এটি আমাদের স্কিনে এপিডার্মাল লেয়ার অর্থাৎ স্কিনের বাইরের লেয়ারে মিশে যায়। তারপর এই সানস্ক্রিনে থাকা কার্বন বেইজড অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো কেমিক্যাল রিয়্যাকশনের মাধ্যমে আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মিকে হিট বা তাপে কনভার্ট করে ফেলে।
এই দু’ ধরনের সানস্ক্রিনের কারণেই মূলত সূর্যের ক্ষতিকর ইউ ভি রে আমাদের স্কিনের ডার্মাল লেয়ার অর্থাৎ ভেতরের লেয়ারে প্রবেশ করতে পারে না। আমাদের স্কিনের ডার্মাল লেয়ারে মেলানোসাইটস নামক সেল থাকে, যা মেলানিন তৈরি করে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ডার্মাল লেয়ারে চলে গেলে কেমিক্যাল মোডিফিকেশনে মেলানিনের পরিমাণ বেড়ে যায়, ফলে আমাদের স্কিনে হাইপারপিগমেন্টেশন ও সানবার্ন দেখা যায়। ফিজিক্যাল ও কেমিক্যাল সানস্ক্রিন এই রশ্মিগুলোকে প্রতিফলিত করে এবং হিটে ট্রান্সফর্ম করে রিলিজ করে দেওয়ার মাধ্যমে এই স্কিন কনসার্নগুলো আগেই রোধ করে। একইসাথে প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনসও প্রিভেন্ট করে।
এই সানস্ক্রিনগুলো কীভাবে কাজ করে তা তো জেনে নিলেন, চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক এই দু’ ধরনের সানস্ক্রিনের সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে।
মিনারেল বা ফিজিক্যাল সানস্ক্রিনের সুবিধা ও অসুবিধা
ফিজিক্যাল সানস্ক্রিনের মূল ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো মিনারেল বেইজড, এই ফর্মুলার কারণে এই সানস্ক্রিন মোটামুটি সব ধরনের স্কিনে স্যুইটেবল। ছোট থেকে বড়, সবাই ব্যবহার করতে পারবেন। এই সানস্ক্রিন সাধারণত নন কমেডোজেনিক হওয়ায় একনে প্রন ও সেনসিটিভ স্কিনে ব্যবহার করা যায় এবং এটি অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন দেয় না। তাছাড়াও ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করার পরপরই আপনারা বাইরে বের হতে পারবেন।
অন্যদিকে ফিজিক্যাল সানস্ক্রিনের মূল সমস্যা হলো এটি অ্যাপ্লাই করলে স্কিনে হোয়াইট কাস্ট দেখা যায়! যাদের ট্যানড বা রিচ স্কিনটোন, তাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি বোঝা যায়। এর টেক্সচার একটু হেভি মনে হতে পারে। তবে সময় নিয়ে ভালোভাবে স্কিনে অ্যাপ্লাই করলে কিছুক্ষণ পর এই হোয়াইট কাস্ট ইফেক্ট অনেকটাই কমে যায়।
কেমিক্যাল সানস্ক্রিনের সুবিধা ও অসুবিধা
এই সানস্ক্রিনের মূল সুবিধা হলো এটির টেক্সচার অনেক লাইট ওয়েট হয় এবং সাধারণত এটি বেশ হাইড্রেটিং ফর্মুলার হয়ে থাকে। তাই এটি আমাদের স্কিনকে হাইড্রেটেড রাখতেও সহায়তা করে। আবার কেমিক্যাল সানস্ক্রিন কোনো হোয়াইট কাস্টও দেয় না। শুধু তাই নয়, এটি ইজিলি স্কিনে ব্লেন্ড হয়ে যায় বলে এটির উপর অন্যান্য প্রোডাক্ট লেয়ারিং করতে অথবা মেকআপ করতে কোনো প্রবলেম হয় না। কেমিক্যাল সানস্ক্রিন সাধারণত ওয়াটার রেজিস্ট্যান্ট হয়ে থাকে। এই কারণে আপনারা যদি দিনের বেলা কোথাও বেড়াতে যেয়ে পুলে নামতে চান কিংবা রোদের তাপে ঘেমে যান, সেক্ষেত্রেও সান প্রোটেকশন পাবেন।
কেমিক্যাল সানস্ক্রিনের মূল অসুবিধা হলো সব স্কিন টাইপে এটি স্যুট করে না। বিশেষ করে সেনসিটিভ স্কিনে এই সানস্ক্রিন অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন দিতে পারে। যাদের রোজেশিয়া, সোরিয়াসিস বা স্কিনে ইনফ্ল্যামেশনের সমস্যা আছে, এই সানস্ক্রিন তাদের ক্ষেত্রে অন্যান্য স্কিন প্রবলেম ট্রিগার করতে পারে। আবার বাইরে বের হওয়ার আগে কেমিক্যাল সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করলে কমপক্ষে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়, যাতে এটি স্কিনে ভালোমতো অ্যাবজর্ব হয়ে যেতে পারে।
কোন সানস্ক্রিন বেছে নিবো?
দু’ ধরনের সানস্ক্রিনই আমাদের ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে নিরাপদ রাখতে সহায়তা করে। তবে নিজের জন্য কোন সানস্ক্রিন বেছে নিবেন সেটি নিয়ে একটু কনফিউশন কিন্তু থেকেই যায়, তাই না? যদি আপনার স্কিন সেনসিটিভ ও একনে প্রন হয়ে থাকে, তাহলে ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন ইউজ করুন৷ প্রেগনেন্সির সময়ও মিনারেল সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যায়। অন্যদিকে যাদের স্কিন টাইপ নরমাল, ড্রাই ও কম্বিনেশন এবং অন্য কোনো সিরিয়াস স্কিন কনসার্ন নেই, তারা কেমিক্যাল সানস্ক্রিন বেছে নিতে পারেন। যারা রেগুলার মেকআপ অ্যাপ্লাই করে বাইরে যান, তাদের জন্যে কেমিক্যাল সানস্ক্রিন পারফেক্ট।
তবে যে সানস্ক্রিনই ব্যবহার করুন না কেন, ২/৩ ঘন্টা পর পর রিঅ্যাপ্লাই করা উচিত। দু’ আঙুল পরিমাণে সানস্ক্রিন ফেইসের জন্য এনাফ। বাংলাদেশের আবহাওয়াতে SPF 30 থেকে SPF 60 উপযুক্ত। সাধারণত SPF 35 ৯৭% ইউভি রে ব্লক করে। SPF 50 প্রায় ৯৮% ইউভি রে ব্লক করতে পারে। তাই আপনার বাজেট, স্কিন টাইপ সবকিছু মিলিয়ে রাইট প্রোডাক্টটি চুজ করতে পারেন।
অথেনটিক মেকআপ আইটেম, স্কিন কেয়ার ও হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টসের হিউজ কালেকশন পেয়ে যাবেন সাজগোজে। তাই ভিজিট করুন সাজগোজের ওয়েবসাইট, অ্যাপ বা ফিজিক্যাল স্টোরে। সাজগোজের কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে ও চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টারে অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকেও কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।
ছবি- সাটারস্টক, সাজগোজ, reddit.com, shopify.com