পাকস্থলীর ক্যান্সার এর লক্ষণ কী এবং কাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি থাকে?

পাকস্থলীর ক্যান্সার এর লক্ষণ কী এবং কাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি থাকে?

stomach

পাকস্থলীর ক্যান্সার (বা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার) এখন বেশ পরিচিত একটি রোগ। এক্ষেত্রে ক্যান্সার সেলস পাকস্থলীতে বা এর আস্তরণের কোষে (আবরণী কলায়) গ্রো করে। বিশ্বব্যাপী এই ক্যান্সারেই তুলনামূলকভাবে বেশি মানুষকে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। শুরুর দিকে তেমন কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে, যে কারণে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্তকরণ বা রোগ নির্ণয় চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। খুব দ্রুত ক্যান্সার কোষ ছড়িয়ে যায় এবং পরবর্তীতে ভয়াবহ রূপ নেয়। আজ আমরা জানবো পাকস্থলীর ক্যান্সার নিয়ে খুঁটিনাটি তথ্য।

স্টোমাক ক্যান্সার এর ধরন

পাকস্থলীর যেকোনো অংশে ক্যান্সার হতে পারে। হজম হওয়া খাবার বহনকারী টিউবের যে অংশ পাকস্থলীর সাথে সংযুক্ত হয়, সেই সংযোগ স্থলকে গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল জাংশন বলা হয়। গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল জাংশনে ক্যান্সার হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্যান্সার পাকস্থলীর প্রধান অংশে দেখা দেয়, যাকে পাকস্থলীর বডি বলা হয়। পাকস্থলীর ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি হয় পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপ অঞ্চলে। নারীদের তুলনায় পুরুষদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ। Adenocarcinoma, Gastrointestinal stromal tumors (GIST), Carcinoid tumors, Lymphoma ইত্যাদি ধরনের হতে পারে এই ক্যান্সার।

স্টোমাক ক্যান্সার এর ধরন

কী কী লক্ষণ দেখে সতর্ক হবেন?

প্রাথমিক পর্যায়ে স্টোমাক কার্সিনোমার তেমন কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। তবে, প্রাথমিকভাবে বদহজম ও পেটের উপরের অংশে ব্যথা থাকতে পারে। ক্যান্সারের অগ্রগতির সাথে সাথে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়-

  • পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি
  • একটানা অ্যাসিডিটির সমস্যা বা বদহজম
  • বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া
  • ক্ষুধামন্দা ভাব এবং দ্রুত ওজন কমে যাওয়া
  • খাবার গিলতে অসুবিধা হওয়া এবং খাওয়ার পরে দ্রুত পেট ফুলে যাওয়া
  • সব সময় ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভূত হওয়া
  • স্টুলের সাথে রক্ত যাওয়া বা কালচে মল
  • রক্ত বমি করা

পাকস্থলীর ক্যান্সার কেন হয়?

এই ক্যান্সারের সঠিক কারণ অজানা, তবে বেশ কিছু ঝুঁকির কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-

১) হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরির সংক্রমণ

হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি

হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণকে এই ক্যান্সারের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই ব্যাকটেরিয়ার কারণে ইনফ্ল্যামেশন দেখা দেয়। এই ব্যাকটেরিয়ার কোনো কোনো বিশেষ টাইপের ক্ষেত্রে পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।

২) অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

লবণযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া, পাশাপাশি ফল ও শাকসবজি কম খেলে স্টোমাক ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘমেয়াদী তামাক, ধূমপান, অ্যালকোহল থেকেও কিন্তু এই ক্যান্সার হওয়ার চান্স থাকে।

৩) পারিবারিক ইতিহাস

পরিবারে কারো পাকস্থলীর ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে এমন ব্যক্তিদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

৪) বয়স ও লিঙ্গ

বয়স্ক বা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে পাকস্থলীর ক্যান্সার বা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার বেশি দেখা যায়, সাধারণত ৫৫ বছরের বেশি বয়সী হলে। এছাড়াও মহিলাদের তুলনায় পুরুষদেরও এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এর কারণ হচ্ছে, ইস্ট্রোজেন এই ধরনের ক্যান্সার সেলস বৃদ্ধির বিরুদ্ধে নারীদের সুরক্ষা দিতে পারে।

রোগ নির্ণয়

যদি পাকস্থলীর ক্যান্সার সন্দেহ হয়, তাহলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তারপর ক্যান্সারের ধরন, স্টেজ শনাক্ত করার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।

পাকস্থলীর ক্যান্সার

এন্ডোস্কপিঃ এই পরীক্ষায় মুখের মধ্যে দিয়ে ক্যামেরা সহ একটি পাতলা, নমনীয় টিউব ঢোকানো হয় এবং পেটের অভ্যন্তরীণ আস্তরণের কোনো আস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা দেখা হয়।

বায়োপসিঃ প্রয়োজন মনে হলে এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পাকস্থলীর নির্দিষ্ট জায়গা থেকে টিস্যুর সামান্য নমুনা নেওয়া হয় এবং ক্যান্সার কোষ আছে কিনা তা নির্ণয় করার জন্য মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়।

ইমেজিং পরীক্ষাঃ ক্যান্সার বিস্তারের মাত্রা নির্ধারণ করতে এবং অন্যান্য অঙ্গে সম্ভাব্য মেটাস্ট্যাসিস (অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়েছে কিনা) শনাক্ত করতে এমআরআই, পেট (PET) সিটি স্ক্যানের মতো পরীক্ষাগুলো করা যেতে পারে।

চিকিৎসা

এর চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যান্সারের স্টেজ, কোথায় ক্যান্সার সেলস আছে, রোগীর সামগ্রিক শারীরিক অবস্থা- এগুলোর উপর।

১) সার্জারি

এই রোগের সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা হলো টিউমার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করা। ক্যান্সারের স্টেজ ও অবস্থানের উপর নির্ভর করে আংশিক গ্যাস্ট্রেক্টমি (পাকস্থলীর একটি অংশ অপসারণ) বা সম্পূর্ণ গ্যাস্ট্রেক্টমি (পুরো পাকস্থলি অপসারণ) করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে অন্ত্রের একটি অংশ নিয়ে খাদ্যনালীর সাথে জুড়ে দেওয়া হয়।

২) কেমোথেরাপি

কেমোথেরাপি

কেমোথেরাপিতে ক্যান্সার কোষগুলো মেরে ফেলার জন্য এবং এগুলোর বৃদ্ধি দমন করতে পাওয়ারফুল মেডিসিন ব্যবহার করা হয়। এটি অস্ত্রোপচারের আগে নিওঅ্যাডজুভেন্ট কিংবা অস্ত্রোপচারের পরে অ্যাডজুভেন্ট থেরাপি হিসেবে অথবা অ্যাডভান্সড বা মেটাস্ট্যাটিক ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসাবে দেওয়া যেতে পারে।

৩) রেডিয়েশন থেরাপি

এই চিকিৎসায় ক্যান্সার কোষকে লক্ষ্য করে হাই বীম রে ব্যবহার করা হয়। এটি সার্জারির আগে ও পরে বা কেমোথেরাপির সংমিশ্রণে ব্যবহার করা যেতে পারে।

৪) টার্গেট থেরাপি

কিছু ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্যান্সার কোষকে দমন করে এমন স্পেসিফিক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ওষুধগুলো ক্যান্সার কোষের নির্দিষ্ট অণুর সাথে বিক্রিয়া করে সেই কোষ ধ্বংসের কাজ করে থাকে, ক্যান্সার যেন ছড়িয়ে না যায় সেটাও নিশ্চিত করে।

ক্যান্সার চিকিৎসা

ঝুঁকি কমাতে যা যা করতে পারেন

  • বিভিন্ন রঙিন ফলমূল, ফ্রেশ শাক-সবজি, কম তেল মসলাযুক্ত খাবার রাখুন ডায়েট চার্টে
  • নোনতা ও আধাসেদ্ধ খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিন
  • সিগারেট, অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে থাকুন
  • পরিবারের অন্য কারো পাকস্থলী ক্যান্সার এর হিস্ট্রি থাকলে প্রতিবছর ক্যান্সার স্ক্রিনিং করুন
  • প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ পেলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা হলে এই ধরনের ক্যান্সার চিকিৎসার সাফল্যের হার বেশি। এই রোগ পুরোপুরিভাবে প্রতিরোধ করা না গেলেও এর ঝুঁকির কারণগুলো জানা থাকলে আমরা সচেতন হতে পারি। আজ পাকস্থলীর ক্যান্সার বিষয়ে খুঁটিনাটি তথ্য জানা হলো। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

SHOP AT SHAJGOJ

     

    ছবি- সাটারস্টক

    3 I like it
    2 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort