চিন্তা করছিলাম নেক্সট প্রোডাক্ট রিভিউটা কী নিয়ে লিখব। তারপর মনে করলাম যেহেতু ঈদের সিজন এখনও তাজা আর সামনে আরও অনেক সেলিব্রেশনের অকেশন আসছে (ঈদ উল আযহা, বিয়ের সিজন ইত্যাদি) এই সময়ে আমার মেকআপের বেস্ট ফ্রেন্ডকে নিয়েই না হয় এবারের রিভিউটা লিখি। আপনারা যারা রেগুলার সাজগোজে আমার লেখা প্রোডাক্ট রিভিউ পড়েন তারা নিশ্চয়ই জানেন আমার ত্বক অয়েলি! আর অয়েলি ত্বকে মেকআপ করার মেইন সমস্যা কী? মেকআপ গলে যাওয়া, কালো হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
[picture]
আর এসবের হাত থেকে বাঁচতে মেকআপের আগে প্রাইমার আর মেকআপ শেষ করে সেটিং স্প্রে ব্যবহার না করলে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সুপার গ্লু দিয়েও আমার মেকআপ মুখের সাথে লাগিয়ে রাখা যায় না। তা গলবেই গলবে। সেটিং স্প্রে ব্যবহারে অনেক্ষণ পর্যন্ত আমার মেকআপ গলে না আর কালোও হয় না। আর ব্লাশ, হাইলাইটার, আইশ্যাডো সারাদিন নিজের জায়গায় থাকে। তাই, আমি গরমের দিনেও মোটামুটি কনফিডেনট থাকি যে সবকিছু গলে চেহারা ভূতের মত হয়ে যাচ্ছে না! (if you know what I mean!) আর আজ পর্যন্ত আমি অনেক ব্র্যান্ডের মেকআপ সেটিং স্প্রে ব্যবহার করেছি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে mac , NYX,urban decay, e.l.f ইত্যাদি। আজকে অবশ্য শুধু এর মধ্যে সবচেয়ে সাশ্রয়ী ব্র্যান্ড e.l.f এর সেটিং স্প্রে নিয়েই লিখব।
দামঃ
আমি কিনেছি ৮০০ টাকায় (২.০২ oz/৬০ মিলি স্প্রে বোতল)। কোন অনলাইন পেজেই এর থেকে বেশি দাম চাইবে না। আর e.l.f মিষ্ট অ্যান্ড সেট বাজারের সবচেয়ে কমদামী সেটিং স্প্রের একটি। মোটামুটি সবার সাধ্যের মধ্যে। এই সেটিং স্প্রে ব্যবহারের আগে আমি ম্যাকের বিখ্যাত সেটিং স্প্রে mac fix+ অনেকদিন ব্যবহার করেছি। যার দাম পড়তো প্রায় ২৫০০ টাকার মত! অবাক হচ্ছেন? আচ্ছা বলুন তো, e.l.f মিষ্ট অ্যান্ড সেট ম্যাক থেকে ভালো না খারাপ? দামের তারতম্য দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কেন প্রশ্নটা করছি। রিভিউর শেষ পর্যন্ত যান। আমি বলে দেব আমার কাছে কোনটা বেটার লেগেছে।
কোথায় পাবেন?
আমি বেশ কয়েকবার স্যাফায়ার থেকে হোম ডেলিভারিতে আনিয়ে নিয়েছি। আপনারা চাইলে স্যাফায়ার পেজ অথবা আপনাদের বিশ্বস্ত যেকোনো পেজ থেকে নিতে পারেন। আবার চাইলে স্যাফায়ারে গিয়েও কিনতে পারেন।
প্যাকেজিংঃ
কালো কার্ডবোর্ডের বক্সে কালো স্প্রে বোতল। স্প্রের উপরে স্বচ্ছ একটি কাভার আছে এর গায়ে লেখা আছে এতে এলোভেরা কিউকাম্বার আর গ্রিন টি এক্সট্রাকট এবং ভিটামিন এ, সি আর ই আছে।
আমার অভিজ্ঞতাঃ
মেকাপে যারা নতুন তারা অনেকেই হয়ত চিন্তা করছেন-‘ মেকআপ সেটিং স্প্রে আবার কেন লাগবে?’ তাদের জন্য সংক্ষেপে বলি সেটিং স্প্রে কী করে। আপনারা সবাই জানেন ভালো ব্র্যান্ডের দামী মেকআপ যেমন ফাউনডেশন, ব্লাশ, হাইলাইটার, আইশ্যাডো তা যাই হোক না কেন, অনেক ভালো রঙ দেয়, অনেক্ষণ টেকে, সহজে গলে না ইত্যাদি। তাই না? কিন্তু আমরা যারা স্টুডেন্ট বা বাজেটে শপিং করি তাদের পক্ষে কি হাজার হাজার টাকা খরচ করে সব হাই এন্ড প্রোডাক্ট কেনা সম্ভব? না সম্ভব না। তাই আমি করি কী, সব ড্রাগষ্টোর প্রোডাক্ট ব্যবহার করি আর তার উপরে ভালো পারফরম্যান্সের সেটিং স্প্রে আর নিচে প্রাইমার দেই। ব্যাস একশ টাকার নিউ মার্কেটের আই শ্যাডো আর তিন হাজার টাকার লরিয়ালের আইশ্যাডোর মধ্যে আর কোন তফাৎ নেই। এই টিপ টা মনে রাখবেন। ভালো মেকআপ মানে একগাদা টাকা খরচ করে মেকআপ বক্স ভর্তি করা নয়। বাজেটে থাকুন। বুঝে শুনে প্রাইমার আর সেটিং স্প্রে ব্যবহার করুন। ১০-১২ হাজার টাকার মেকআপের আর দরকার পড়বে না। e.l.f সেটিং স্প্রে কীভাবে মেকআপের রঙ দীর্ঘক্ষণ ঠিক রাখে তা আপনাদের দেখানর জন্য অনেক তামাশা করে নিচের ছবি গুলো তুলেছি। নিজের চোখেই পার্থক্যটা দেখে নিন!
উপরের ছবি আই শ্যাডো দেয়ার প্রায় ৬ ঘণ্টা পরে তোলা হয়েছে।
সেটিং স্প্রে সহ আর ছাড়া মেবেলিন কলসাল কাজল। এটাও আগের ছবির মত প্রায় সারাদিন পরে তোলা।
আমি সাধারাণত পুরো মেকআপ কমপ্লিট করে স্প্রে বোতল মুখ থেকে প্রায় ১ ফুট দূরে রেখে মুখে ২-৩ বার স্প্রে করি। কিছুক্ষণ পরে স্প্রে শুকিয়ে যায় আর সব মেকআপ সারা দিনের জন্য লক হয়ে যায়। অনেক সেটিং স্প্রে দেখেছি শুকানোর পর মুখে শক্ত ফিল্মের মত হয়ে যায়। এই স্প্রেতে এটা হয় না। শুকানর কিছুক্ষণ পর বোঝাই যায়না যে মুখে এক্সট্রা কিছু দেয়া হয়েছে। সারাদিনে টাচ আপের দরকার পড়ে না। শুধু আমি যদি খুব গরম কোন জায়গায় থাকি অথবা খুব হেভি মেকআপ করি ত্বকে ৩-৪ ঘণ্টা পরে আমার টি জোনে একটু পাউডার লাগাতে হয় বা ব্লট করতে হয়, কারণ আমার স্কিন খুব অয়েলি। আমি সিওর যাদের স্কিন নরমাল বা ড্রাই তাদের টাচ আপের কোন দরকার হবে না।
এখন এক কথায় বলে দেই। আমি আজকে পর্যন্ত ম্যাকের ফিক্স+ সেটিং স্প্রে আর e.l.f সেটিং স্প্রের মধ্যে পারফরম্যান্সে কোন পার্থক্য দেখি নি। খুবই আনন্দের ব্যাপার এটা, যে এই ৮০০ টাকার সেটিং স্প্রে ২৫০০ টাকার ফিক্স+ এর মতই মেকআপ সেট আর লক করতে পারে। আর খুবই দুঃখের ব্যাপার এই যে আমি আগে যখন e.l.f সেটিং স্প্রের কথা জানতাম না তখন ফিক্স+ কিনে অনেক টাকা নষ্ট করেছি। আমি বলব না টাকা জলে গেছে! কিন্তু ২৫০০ টাকা! আমি স্টুডেন্ট মানুষ আর শপিং করি বাজেটে। আমার এখনও এটা চিন্তা করে কষ্ট হয়।
সব মিলিয়ে আমি বলব আপনি যদি আমার মত মেকআপের পিছনে খরচ কমাতে ইচ্ছুক হন অথবা গরমে মেকআপ গলে যাওয়া, কালো হয়ে যাওয়া এসব সমস্যার প্রতিকার চান তবে বাজারে e.l.f মিষ্ট অ্যান্ড সেট থেকে ভালো আর কোন প্রোডাক্ট পাবেন না। পার্সোনাল এক্সপেরিএন্স থেকে বলছি ৩-৪ হাজার টাকা দিয়ে ভালো রঙের আই শ্যাডো সেট না কিনে একটা ভালো সেটিং স্প্রে কিনলে গাউসিয়ার ২০ টাকার আইশ্যাডোও ৩ হাজারের সেটের মতই কালার দেবে।
এই প্রোডাক্টের যে সব দিক আমার ভালো লেগেছে-
- আমি এই সেটিং স্প্রের প্রতি বায়াসড। এটা না থাকলে আমাকে আজও হয়ত হাজার হাজার টাকা মেকআপের পিছনে খরচ করতে হতো। বুঝতেও পারতাম না যে কত লস করছি!
- মেকআপ দীর্ঘক্ষণ নিজের জায়গায় লক করে রাখে। সরে যেতে বা গলে যেতে দেয় না।
- খুবি সাশ্রয়ী! (২৫০০ টাকার ম্যাক আর এটার পারফরম্যান্স একই!)
- যাদের প্যানকেক বা হেভি কাভারেজ মেকআপ ফেটে যায় বা কেকি হয়ে যায় তারা মুখে ২-৩ টা স্প্রে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে যেতে পারবেন।
এই প্রোডাক্টের যে সব দিকটা আমার ভালো লাগেনি-
- যদিও খুবি সাশ্রয়ী একটা প্রোডাক্ট হওয়ায় e.l.f মিষ্ট অ্যান্ড সেট আমার খুব পছন্দের মেকআপ প্রোডাক্টের মধ্যে একটা তবুও এটার একটা জিনিস আমাকে অনেকদিন পেইন দিয়েছে। সেটা হচ্ছে এটার স্প্রে নজেল। ম্যাকের স্প্রে বোতল ১ পাম্পেই সারা মুখ সমান ভাবে কাভার করত। আর আমি সেভাবেই ব্যবহার করে অভ্যস্ত ছিলাম। কিন্তু এই স্প্রে নজেল যদি আপনি মুখের খুব কাছে ধরে স্প্রে করেন তাহলে এক জায়গায় অনেক খানি প্রোডাক্ট পড়ে যাবে। আমাকে অনেক প্র্যাকটিস করে ঠিক ভাবে স্প্রে করা শিখতে হয়েছে। খুব খেয়াল করে মুখের ১-১.৫ ফিট দূর থেকে স্প্রে করবেন।
আমার রেটিং:
১০/১০ ! বাড়িয়ে বলছি না। আমার অনেক টাকা বাঁচিয়ে দেয়ার জন্য ১০/১০ e.l.f মেকআপ মিষ্ট অ্যান্ড সেটের প্রাপ্য।
লিখেছেনঃ মীম তাবাসসুম
ছবিঃ দ্যমেকাপপাউচইলেভেন.ব্লগস্পট.কম