কথিত আছে, ‘ইট ব্রেকফাস্ট লাইক অ্যা কিং’। অর্থাৎ সকালের নাস্তাটা খাওয়া উচিত রাজার মতো, দুপুরের খাবার রাজপুত্রের মতো আর রাতের খাবারটা গরীবের মতো। পুষ্টিবিদরাও সকালের নাস্তাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। কিন্তু ওজন কমানোর জন্য অনেকেই সকালের নাস্তা স্কিপ করেন। কিন্তু এটা করা একদমই উচিত নয়! সকালে নাস্তা স্কিপ করলে পরবর্তীতে ক্ষুধা বেশি লাগে এবং বেশি পরিমাণে খাবার খাওয়া হয়ে যায়। তাই সকালের নাস্তা বাদ দেয়া যাবে না এবং অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য হেলদি ব্রেকফাস্ট যেমন জরুরি, তেমনই এটি সারাদিন আপনাকে এনার্জিটিক রাখবে। ব্রেকফাস্টকে কীভাবে হেলদি করা যায়, তার কিছু আইডিয়া নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের ফিচারটি। আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক, কোন কোন খাবারগুলো থাকলে ব্রেকফাস্টকে হেলদি বলা যায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য হেলদি ব্রেকফাস্ট
সুস্থ থাকার জন্য হেলদি ব্রেকফাস্টের তুলনা নেই। এজন্য সকালে কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত? চলুন জেনে নেয়া যাক।
ডিম
একটি ডিমে ৬ গ্রাম প্রোটিন এবং ৭২ গ্রাম ক্যালরি থাকে। প্রোটিন দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডিম অন্য যেকোনো ব্রেকফাস্ট এর চেয়ে দীর্ঘসময় ক্ষুধা লাগা থেকে বিরত রাখে। সকালের খাবার তালিকায় ব্রেডের সাথে ২টি ডিম রাখতে পারেন। সিদ্ধ বা ভাজি যে কোনোভাবেই খেতে পারেন। সেই সাথে রাখুন পছন্দের সবজি (সেদ্ধ অথবা ভাজি)। ব্যস হয়ে গেলো হেলদি ও ডেলিসিয়াস ব্রেকফাস্ট।
টকদই
ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন থেকে প্রকাশিত এক রিপোর্টে ওজন হ্রাস করে এমন কিছু খাবারের নাম প্রকাশ করা হয়। এগুলোর মধ্যে টকদই অন্যতম একটি খাবার। এটি প্রোটিনের অন্যতম উৎস, যা শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। এক কাপ টকদই এর সাথে কিছু ফল ও চিয়া সিডস মিশিয়ে তৈরি করে ফেলুন দারুণ স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্ট।
ওটস
অনেকেই ওজন কমানোর জন্য সকালের নাস্তায় ওটস রাখে। ওটস কি আসলেই ওজন হ্রাস করে? হ্যাঁ! এটি দুইভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে। এক – এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা আপনাকে দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধা লাগা থেকে বিরত রাখবে। দুই – ওটমিল হলো স্লো রিলিজ কার্বোহাইড্রেট। যেকোনো ব্যায়াম করার তিন ঘন্টা পূর্বে যদি আপনি ওটমিল দিয়ে ব্রেকফাস্ট করেন, এটি আপনার ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করবে। স্লো রিলিজ কার্বোহাইড্রেট, ব্লাড সুগারকে বৃদ্ধি করে না যেমনটি অন্য কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার করে থাকে। বিশেষ করে, ওটসে বিটা গ্লুকান রয়েছে, এই ফাইবার শরীরের ইমিউন ফাংশন ইমপ্রুভ করা থেকে শুরু করে হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এক কাপ ওটসের সাথে ১ বা ১/২ কাপ স্ট্রবেরি, এক টেবিল চামচ ফ্লেক্সসিড, কিছু কাঠবাদাম ও টকদই বা দুধ মিশিয়ে নিন। ব্যস! হয়ে গেলো হাই ফাইবার যুক্ত টেস্টি সকালের নাস্তা।
কলা
উচ্চ ফাইবার ও লো ক্যালরির কলা যেকোনো সুগারি ব্রেকফাস্টের তুলনায় অনেক বেশি হেলদি। একটি মাঝারি সাইজের কলায় ১০০ গ্রাম ক্যালরি, ৩ গ্রাম ফাইবার রয়েছে। ফাইবার দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে এবং কার্বস খাওয়া থেকে বিরত রাখে। টকদই অথবা ওটমিলের সাথে কলা খেতে পারেন। অথবা কলার স্মুদিও হতে পারে সকালে নাস্তার পার্টনার।
পিনাট বাটার
প্রোটিন ও ফাইবারের অন্যতম উৎস হলো বাদাম। পিনাট বাটারে আছে স্বাস্থ্যকর চর্বি, ফাইবার ও প্রোটিন, যা ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করে। যদিও বাদামকে হাই ক্যালরি ও ফ্যাটের অন্যতম উৎস বলা হয়। কিন্তু পিনাট বাটার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ২ টেবিল চামচ পিনাট বাটারে ২০০ ক্যালরি, ৭ গ্রাম প্রোটিন এবং ২ গ্রাম ফাইবার রয়েছে, যা আপনার পেট দীর্ঘক্ষণ ভরিয়ে রাখবে। ব্রাউন ব্রেডের সাথে পিনাট বাটার হতে পারে স্বাস্থ্যকর নাস্তা।
চিয়া সিডস
ছোট কিন্তু পাওয়ারফুল এই উপাদানটি আপনার ব্রেকফাস্টের একটি অংশ হতে পারে। হাই ফাইবার সমৃদ্ধ চিয়া সিডস পানি শুষে নেয় এবং এটি পেটের ভেতর যেয়ে প্রসারিত হয়, যা আপনাকে দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধা লাগা থেকে বিরত রাখবে। আমাদের পাকস্থলীতে ঘেরলিন নামক একটি হরমোন রিলিজ হয়, যেটি মস্তিষ্কে ক্ষুধা লাগার বার্তা পাঠায়। তখন মস্তিষ্ক আমাদের খাবার খেতে বলে। চিয়া সিডস এই হরমোন রিলিজের মাত্রা কমিয়ে দেয়, যার কারণে ক্ষুধা কম লাগে। এছাড়া এতে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হার্টের সুস্থতার জন্য বেশ উপকারী এবং হার্ট অ্যাটাক সহ আরও বেশ কিছু রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।
কফি
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে এক কাপ কফি ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ কফিতে রয়েছে ক্যাফেইন, যা মেটাবলিজম বুস্ট করে এবং ফ্যাট বার্ন করে থাকে। এক জরিপে দেখা গেছে, ক্যাফেইন মেটাবলিজম ১৩% বৃদ্ধি করে এবং ফ্যাট বার্ন করে। ৫৮,১৫৭ মানুষের উপর গবেষণা করে দেখা গেছে, প্রতিদিন যারা কফি পান করে (অবশ্যই চিনি ছাড়া কফি) তাদের ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। চিনিযুক্ত কফি কখনোই আদর্শ ব্রেকফাস্ট হতে পারে না। তাই যেকোনো হেলদি ব্রেকফাস্টের সাথে চিনি ছাড়া এক কাপ কফি পান করতে পারেন।
ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য ডায়েট কন্ট্রোল করা অবশ্যই জরুরি, তবে সেজন্য ব্রেকফাস্ট স্কিপ করা মোটেও ভালো নয়। পরিমাণে কম খান, তবু হেলদি খাবার খান। সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
ছবিঃ সাটারস্টক