‘ধৈর্য ধরুন, সফলতা আসবে”, ‘ধৈর্য, অধ্যাবসায় আর পরিশ্রম, এই তিনটি এক হলে সাফল্যকে আর থামানো যায় না‘ – এমন ধরনের নীতিবাক্য আমরা ছোট থেকেই শুনে আসছি। কিন্তু কিছু কিছু সময়ে ধৈর্য ধারণ করা বেশ কঠিন হয়ে যায়। কেউ কেউ জন্মগতভাবেই ধৈর্যশীল হয়ে থাকে, আবার কারোর কারোর ধৈর্য একদম কম থাকে! অল্পতেই ধৈর্য হারিয়ে যায় আপনারও? জীবনে প্রতিকূলতা আসবে, তাই বলে অধৈর্য হলে চলবে না। চলুন জেনে নেই ধৈর্য বাড়ানোর ৮টি কৌশল যেগুলো আপনার জীবনকে অনেকটাই সহজ করবে।
ধৈর্য বাড়ানোর ৮টি কৌশল
১) ইমোশন কন্ট্রোল করতে শিখুন
জীবনে চলার পথে নানা রকম সমস্যা আসবে, সিচুয়েশন সব সময় তো আপনার কন্ট্রোলে থাকবে না। এরকম পরিস্থিতিতে ধৈর্যহারা হলে কিন্তু চলবে না। ধৈর্য হলো মূলত অপেক্ষা করা। আপনি যদি কোনো কিছু নিয়ে বিরক্ত বা হতাশ হয়ে থাকেন, তাহলে সময় দিন, হাল ছাড়বেন না। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ভেঙে পড়া যাবে না। নিজের ইমোশনকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। নিজের সাথে কথা বলুন, নিজেকে বোঝান। চোখ বন্ধ করে বড় বড় শ্বাস ছাড়ুন। সম্ভব হলে ইয়োগা বা মেডিটেশন করুন, মানসিকভাবে স্বস্তি পাবেন।
২) ভালো শ্রোতা হওয়ার চেষ্টা করুন
আপনি কি আরেকজনের কথা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন? আমরা অনেকেই আরেকজনের কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাই না, নিজেরটা আগে বলতে চাই বা কথার মাঝে ব্যাঘাত ঘটায়। এখানে কিন্তু আপনি ধৈর্যশীলের পরিচয় দিচ্ছেন না! অন্যের কথা শোনার চেষ্টা করুন; বিষয় যা-ই হোক না কেন, সে কী বলছে তা বোঝার চেষ্টা করুন। ভালো শ্রোতা হয়ে উঠুন। ধৈর্য বৃদ্ধি করার আরেকটি সহজ উপায় হলো ভালো শ্রোতা হওয়া।
৩) অল্পতেই ধৈর্য না হারিয়ে মেনে নিতে শিখুন
যে পরিস্থিতি আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না, আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে; সেটি মেনে নিতে পারা একটি বড় গুণ। এই কৌশলটি আপনার ধৈর্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। বিশেষ করে প্রতিদিনের বিভিন্ন ঝামেলা সহজে এড়াতে পারবেন।কোনো অন্যায় মেনে নেওয়ার কথা বলছি না। আপনার স্কিল কাজে লাগিয়ে সিচুয়েশন সামাল দেওয়ার ট্রাই করুন। অধিকাংশ সময় আমরা অধৈর্য হয়ে পড়ি, কারণ আমরা পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন করতে চাই, সবকিছু নিজের মতো করে পেতে চাই। কিছু ক্ষেত্রে আপনাকে কম্প্রোমাইজ করতে হবে। সব পরিস্থিতি আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না, বরং সেগুলো গ্রহণ করতে শিখুন।
৪) ব্রেথিং মেডিটেশন করুন
ব্রেথিং মেডিটেশন আপনাকে দু’ভাবে বেনিফিট দিতে পারে। প্রথমত, আপনার ফোকাস ঠিক রাখবে। আর দ্বিতীয়ত, আপনার স্ট্রেস কমিয়ে আনতে হেল্প করবে। আর এর মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি ধৈর্যশীল হয়ে উঠতে পারেন। কোনোরকম অভিযোগ ছাড়া জীবনের মুহূর্তগুলো উপভোগ করুন।
৫) নোট রাখুন বা ডায়েরি লিখুন
লিস্ট বা নোট রাখার অভ্যাস বেশ কাজে দেয়, কেননা এটি আপনাকে কাজে ফোকাস বাড়াতে হেল্প করবে। আপনাকে আরো স্থির করে তুলবে। প্ল্যানিং করে ফেলুন আগেই। আপনি নিয়মিত ডায়েরি লিখতে পারেন, যেখানে সারাদিনে কাজের কথা থাকতে পারে, আবার ছোট গল্প লিখতে পারেন। এগুলো আপনার ধৈর্য বাড়াতে সাহায্য করবে।
৬) সহানুভূতিশীল হোন
কোনো বিষয় নিয়ে অধৈর্য না হয়ে নিজেই আরেকবার ভাবুন। অন্যদের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগে নিজে একবার চিন্তা করুন তার জায়গায় আপনি থাকলে কী করতেন। এভাবে ভাবলে কিন্তু অনেক সময় জটিল সমস্যারও সমাধান হয়ে যায় খুব সহজে। মনে রাখবেন, সহানুভূতিশীলতা বড় একটি গুণ। তাই সহানুভূতিশীল হোন, এতে ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন।
৭) একসাথে একের অধিক কাজ করা থেকে বিরত থাকুন
আপনি যখন একসাথে অনেকগুলো টাস্ক নিয়ে বিজি থাকবেন, তখনই অধৈর্য হয়ে পড়বেন। একের অধিক কাজে মনোযোগ দিলে আপনি কোনো কাজই ঠিকভাবে শেষ করতে পারবেন না। অন্য কাজের চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়বেন! তাই একসাথে একের অধিক কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। একটি কাজ শেষ হলে আরেকটি কাজে মনোযোগ দিন।
৮) টাইম ম্যানেজমেন্টে মনোযোগী হোন
মানুষ সবচেয়ে বেশি অধৈর্য হয়ে পড়ে যখন কাজ অনেক বেশি পরিমাণে জমা হয়, কিন্তু হাতে সময় কম থাকে। এটি মূলত হয় টাইম ম্যানেজমেন্ট ঠিকভাবে করতে না পারলে। তাই আপনাকে এই বিষয়ে পারদর্শী হতে হবে। তাহলে ধৈর্য ধরে রাখা সম্ভব। প্রায়োরিটি অনুযায়ী কাজ ভাগ করে নিন, কোনো কাজ অযথা ফেলে রাখবেন না, সময় একবার চলে গেলে সেটা তো আর ফিরে পাওয়া সম্ভব না। তাই সময়কে প্রোপারলি ইউটিলাইজ করুন।
আমরা সবাই ধৈর্যশীল হওয়ার কথা বলি, কিন্তু অধৈর্যের কারণ নিয়ে কথা বলি না। কী কী কারণে আপনি সহজে অধৈর্য হয়ে যাচ্ছেন, সেগুলো খুঁজে বের করুন। ধৈর্যশীল হওয়ার জন্য ইচ্ছাশক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিজের ইচ্ছা আর চেষ্টা-ই আপনাকে ধৈর্যশীল করে তুলতে পারবে। চাইলেই আপনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না, এটাই স্বাভাবিক। আজ তাহলে এই পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
ছবি- সাটারস্টক