ঠোঁটের চারপাশে কালচে ছোপ? লিপস এরিয়ার পিগমেন্টেশন বেশ কমন প্রবলেম! অনেক সময় দেখা যায় যে স্কিনে তেমন কোনো কনসার্ন নেই, কিন্তু এই একটি প্রবলেম-ই যেন ভুক্তভোগীকে বিব্রত করছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু কেন হয় ঠোঁটের চারপাশে পিগমেন্টেশন? আর এর প্রতিকারই বা কি? চলুন আজকের ফিচারে এই বিষয়গুলো নিয়ে জানবো।
পিগমেন্টেশন কীভাবে ফর্ম হয়?
আমাদের স্কিনের এপিডার্মিস লেয়ারে থাকে মেলানোসাইট সেল। এই সেল থেকেই মেলানিন প্রোডাকশন হয়। মেলানিন আমাদের ত্বকের রং নির্ধারণ করে। মেলানিনকে কন্ট্রোল করে টাইরোসিনেজ এনজাইম। এই টাইরোসিনেজ এনজাইম সূর্যের UV রশ্মির সংস্পর্শে আসলে মেলানিন প্রোডাকশন বাড়িয়ে দেয়; যা থেকে পরবর্তীতে মেছতা, হাইপারপিগমেন্টশন- এই সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে নজরে আসে। এছাড়া অন্য কারণেও টাইরোসিনেজ এনজাইম ট্রিগারড হতে পারে।
ঠোঁটের চারপাশে পিগমেন্টেশন কেন হয়?
১. হরমোনাল চেঞ্জ
মেলাজমা বেশ কমন একটি স্কিন কনসার্ন। মেলাজমাকে অনেক সময় বলা হয় ‘The mask of pregnancy’। প্রেগনেন্সিতে খুব স্বাভাবিকভাবেই হরমোনাল চেঞ্জ দেখা দেয়। যার কারণে গলা, ঘাড়, ঠোঁটের চারপাশে অনেক সময় ব্রাউন বা ব্ল্যাক প্যাচেস দেখা যেয়। আফটার প্রেগনেন্সি এই পিগমেন্টেশন কমেও যায় যখন শরীরে আবার হরমোনের লেভেল স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে শুধু প্রেগনেন্সি না, জন্ম নিয়ন্ত্রণের পিল খাওয়া ও হরমোনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির কারণেও অনেক সময় এই সমস্যা হয়ে থাকে। নারীদের হরমোনাল ফ্ল্যাকচুয়েশন বেশি হয়, তাই পিগমেন্টেশনের প্রবলেম পুরুষদের তুলনায় নারীদের বেশি দেখা দেয়।
২. লিপসের এরিয়াতে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই না করা
অনেকেই সানস্ক্রিন ব্যবহারের সময় ঠোঁটের চারপাশের অংশ স্কিপ করেন কিংবা সঠিক পরিমাণে অ্যাপ্লাই করেন না। এই ভুলগুলোর কারণেও ঠোঁটের চারপাশে পিগমেন্টেশন দেখা যায়। অনেকে ২/৩ ঘন্টা পর পর সানস্ক্রিন রিঅ্যাপ্লাইও ঠিকভাবে করেন না। এসব কারণেই পরবর্তীতে বিভিন্ন স্কিন কনসার্ন দেখা দেয়।
৩. ঠোঁটের চারপাশে ব্রেকআউটস, ইনফেকশন
মাউথ এরিয়ার চারপাশের স্কিনে কোনো ইনফেকশন হলে, খুব ফ্রিকোয়েন্টলি ব্রেকআউটস দেখা দিলে পরবর্তীতে প্যাচেস বা পিগমেন্টেশন দেখা দিতে পারে৷ এই কালচে দাগ ফেইড হতে বেশ কয়েক মাস লেগে যায়। এছাড়াও ক্ষতিকর কেমিক্যালযুক্ত রেপ্লিকা লিপস্টিক, লিপবাম ব্যবহারের ফলেও ঠোঁট ও তার চারপাশের অংশ কালচে হয়ে যায়।
৪. ভিটামিনের অভাব
শরীরে ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি ১২, ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি হলেও পিগমেন্টেশন দেখা দেয়। আপনার যদি ঠোঁটের চারপাশে পিগমেন্টেশন হয়ে থাকে, তাহলে ফুড হ্যাবিটের দিকে খেয়াল করুন।
এছাড়াও জেনেটিক্যাল ইস্যু, অতিরিক্ত ধূমপান, হার্শ স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট, ভুল নিয়মে ওয়্যাক্সিং এসব কারণেও লিপ এরিয়াতে পিগমেন্টেশন দেখা যায়।
কাদের ক্ষেত্রে বেশি হয়?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, যারা সঠিকভাবে সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন না, তারা এই সমস্যায় বেশি ভুগে থাকেন। মিডিল এইজড উইমেনদের মধ্যে এই ধরনের স্কিন কনসার্ন তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। এছাড়া যাদের অ্যালার্জি আছে, স্মোকিং করেন, একজিমার সমস্যা আছে; তাদের ঠোঁটের চারপাশে পিগমেন্টেশন হতে পারে।
এর সল্যুশন কী?
স্কিন টাইপ অনুযায়ী প্রোপারলি স্কিনকেয়ার রুটিন ফলো করতে হবে। রাতারাতি এর সল্যুশন পাওয়া সম্ভব না। গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, কজিক অ্যাসিড, নিয়াসিনামাইড, ভিটামিন সি, আলফা আরবুটিন এই ধরনের স্কিন কনসার্নের জন্য বেশ ইফেক্টিভ; তবে সঠিক কনসেনট্রেশনে ব্যবহার করতে হবে। ২০ বছরের আগে অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট ব্যবহার করা উচিত না। যদি দিন দিন এই সমস্যা বাড়তে থাকে, তাহলে একজন ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
ঠোঁটের চারপাশে পিগমেন্টেশন কীভাবে প্রিভেন্ট করা যায়?
- সঠিকভাবে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই ও রিঅ্যাপ্লাই করুন
- ব্যালেন্সড ডায়েট চার্ট মেনে চলুন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন
- নন ব্র্যান্ডের লিপস্টিক, লিপবাম এড়িয়ে চলুন
- প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন
- হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন করুন
ঠোঁটের চারপাশে পিগমেন্টেশন কেন হয়, কীভাবে প্রিভেন্ট করা যায়; এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন ছিলো। আশা করি আজ বেসিক আইডিয়া দিতে পেরেছি। পার্মানেন্টলি পিগমেন্টেশন, মেলাজমা রিমুভ করতে ডার্মাটোলজিস্টরা অ্যাডভান্স টেকনোলজি ব্যবহার করেন, যেমন- microdermabrasion, chemical peel, micro needling ইত্যাদি। এগুলো বেশ সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল।
সঠিক নিয়মে ত্বকের যত্ন নিতে পারলে এই ধরনের স্কিন কনসার্ন প্রিভেন্ট করা পসিবল। অনলাইনে অথেনটিক স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, ইস্টার্ন মল্লিকা, বসুন্ধরা সিটি, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), সীমান্ত সম্ভার, চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক