পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা PCOS সম্পর্কে এখন কম বেশি সবারই ধারণা আছে। টিনেজ থেকে শুরু করে ম্যাচিউরড, যেকোনো নারীরই PCOS হতে পারে। এর মেইন সিম্পটমস হলো ইরেগুলার বা মিসড পিরিয়ড, বারবার ট্রাই করার পরেও কনসিভ করতে না পারা, অল্প সময়ের ব্যবধানে ওজন বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। এগুলোর পাশাপাশি PCOS এর কারণে স্কিন ও হেয়ারেও অনেক সময় চেঞ্জ ভিজিবল হয়। আজ আপনাদের জানাবো পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের সিম্পটম হিসেবে আমাদের স্কিন ও হেয়ারে যে সাইনগুলো দেখা যায়, সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
আপনি কি PCOS এ ভুগছেন?
প্রথমে একটু জানিয়ে দেই PCOS কী। এটি হলো একটি হরমোনাল ডিজঅর্ডার, যেখানে একজন নারীর দেহে অ্যান্ড্রোজেন নামক পুরুষ হরমোনের উপস্থিতি বেড়ে যায় এবং রিপ্রোডাক্টিভ হরমোনগুলো ইমব্যালেন্স হয়ে যায়। এই হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণেই মূলত ইরেগুলার পিরিয়ড ও ইনফার্টিলিটি দেখা যায়। সেই সাথে পিসিওএস আমাদের মেটাবলিজম স্লো করে দেয়, যার ফলে দ্রুত ওজন বেড়ে যায় এবং ওজন কমানোও কঠিন হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, পিসিওএসের কারণে টাইপ টু ডায়াবেটিস কিংবা হাই কোলেস্টেরলের সমস্যাও হতে পারে।
অনেকেই PCOS এর কারণ জানতে চান। সত্যি বলতে এটি কেন হয় তা এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে ফ্যামিলিতে পিসিওএসের পেশেন্ট থাকলে এটি হওয়ার পসিবিলিটি অনেক বেশি থাকে।
কোন কোন স্কিন কন্ডিশন এর সাথে কানেক্টেড?
পিসিওএসের মেইন সিম্পটমস তো আপনারা ইতিমধ্যেই জেনে গেছেন৷ এগুলোর পাশাপাশি আমাদের স্কিনের কিছু কনসার্নের সাথেও কিন্তু এর স্ট্রং কানেকশন রয়েছে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম হলে স্কিনে কী ধরনের সমস্যা দেখা দেয় সে সম্পর্কে।
১) একনে
আগেই বলেছি পিসিওএসের কারণে আমাদের বডিতে অ্যান্ড্রোজেন নামক হরমোনের উপস্থিতি বেড়ে যায়। এতে সেবাম প্রোডাকশনও বেড়ে যায়, তাই স্বাভাবিকভাবে স্কিন বেশ অয়েলি দেখায়। তখন ফেইস একনেপ্রন হয়ে যেতে থাকে৷ অনেক সময় ইনফ্ল্যামেটরি একনে হতে পারে, যাকে আমরা সিস্টিক একনে বলে থাকি।
সাধারণত এই ধরনের একনে জ-লাইন, চিক এরিয়ায় বেশি দেখা যায়। ফেইসের পাশাপাশি গলা, বুক কিংবা পিঠের উপরের অংশেও ব্রণ হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই একনেগুলো আকারে বড় হয় এবং ভেতরে পুঁজ থাকায় খুব পেইনফুল হয়। এগুলো সারতে সময় লাগে এবং একনে কমে যাওয়ার পরে স্কিনে একনে স্পট ভিজিবল হয়ে থাকে। তাই যদি হঠাৎ লক্ষ্য করেন আপনার ফেইস ও বডিতে এই ধরনের একনে বেড়ে যাচ্ছে, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
২) হিরসুটিজম বা আনওয়ান্টেড হেয়ার গ্রোথ
পিসিওএসের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ নারীদের স্কিনে যে সিম্পটমটি দেখা যায় সেটি হলো হিরসুটিজম। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের পিসিওএস রয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ নারীর ফেইস ও বডির বিভিন্ন অংশে হিরসুটিজম দেখা যায়। মূলত অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের কারণে ফেইস ও বডিতে আনওয়ান্টেড হেয়ার গ্রোথ বেড়ে গেলে সেটিকেই হিরসুটিজম বলা হয়। সাধারণত পিসিওএস হলে ঠোঁটের উপরে, চিন এরিয়াতে, বুকে কিংবা পেটের নিচ অংশে হেয়ার গ্রোথ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এই হেয়ার রিমুভ করা হলেও খুব তাড়াতাড়ি আবার গ্রো করে।
৩) অ্যাকানথোসিস নিগ্রিক্যানস
পিসিওএসের কারণে আমাদের বডিতে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স দেখা যায়। এই ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স থেকেই অ্যাকানথোসিস নিগ্রিক্যানসের সমস্যাটি হয়। আবার যাদের উচ্চতার তুলনায় ওজন বেশি, তাদের ক্ষেত্রেও এটি হতে পারে। অ্যাকানথোসিস নিগ্রিক্যানস এমন একটি স্কিন কন্ডিশন যেখানে গলা, ঘাড়ে ডার্ক প্যাচেস দেখা যায় এবং সেই সাথে ঐ এরিয়ার স্কিনে ক্রিজিংও নজরে আসে। যত সময় যায়, এটি তত বাড়তে থাকে।
PCOS এর কারণে হেয়ার প্রবলেম
শুধুমাত্র স্কিনেই নয়, PCOS এর কারণে হেয়ার প্রবলেমও দেখা যায়। যেমন-
১) অতিরিক্ত হেয়ার ফল
এক্সপার্টদের মতে, একজন মানুষের প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু যাদের পিসিওএস রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে হেয়ার ফলের পরিমাণ অনেক বেশি হয়। দেখা যায় শাওয়ারের সময় অথবা চুল আঁচড়াতে গেলে একবারে অনেকগুলো হেয়ার স্ট্র্যান্ড উঠে আসে। আবার রুমের ফ্লোরে, ড্রেসিং টেবিলে বা বালিশের কভারেও চুল পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাই যদি হঠাৎ করেই অতিরিক্ত হেয়ার ফল শুরু হয়, তাহলে কোনোভাবেই বিষয়টি এড়িয়ে যাবেন না।
২) অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপেশিয়া
PCOS এর কারণে চুল পড়া বেড়ে যায় বলে চুল খুব দ্রুত পাতলা হতে শুরু করে। এমনকি যাদের চুল অনেক ঘন ছিলো, তারাও অভিযোগ করেন যে তাদের চুলের গোছা একদম পাতলা হয়ে গেছে! বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্ক্যাল্পের সামনের ও সাইডের চুল পাতলা হয়ে যেতে থাকে। আবার অনেকের হেয়ার থিনিং এত বেড়ে যায় যে সেখান থেকে অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপেশিয়া বা চুল পাতলা হতে হতে টাক হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে থাকে।
এটুকুই ছিলো আজকের ডিসকাশন। সবার জন্য পরামর্শ থাকবে, যদি আপনারা নিজেদের স্কিন ও হেয়ারে এই সিম্পটমগুলো দেখতে পান, তাহলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আর যদি ডায়াগনোসিসের পর এটি ধরা পড়ে, তাহলেও ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, প্রোপার ডায়েট ও রেগুলার এক্সারসাইজ করলে PCOS অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা পসিবল হয়।
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক, endocrine.org