মেকআপ করতে পছন্দ করে না এমন মেয়ে আজকাল খুঁজে পাওয়া কঠিন, তাই না? যেকোনো অকেশনে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে আমরা ডিফারেন্ট মেকআপ লুক ক্রিয়েট করে থাকি। তবে মেকআপ নিয়ে অনেকের মধ্যে বেশ কিছু ভুল ধারণা রয়েছে, যেগুলো আমাদের ফ্ললেস লুক ক্রিয়েট করতে বাধা তো দেয়ই, সেই সাথে ফিউচারে স্কিন ড্যামেজের কারণও হয়ে দাঁড়াতে পারে। মেকআপের কিছু মিথস অ্যান্ড ফ্যাক্টস সম্পর্কে জানাবো আজ। পারফেক্ট মেকআপ লুকের জন্য কোন ভ্রান্ত ধারণাগুলো দূর করতে হবে, জেনে নিন তাহলে।
মেকআপ নিয়ে কমন ভুল ধারণা
১) “মেকআপ প্রোডাক্টসে এসপিএফ থাকলে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করতে হয় না “
দিনের বেলা সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে ত্বক সুরক্ষিত রাখতে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করা জরুরি। তবে অনেকেই মনে করেন, যদি ফাউন্ডেশন, কনসিলার অথবা পাউডারে এসপিএফ অ্যাড করা থাকে, তাহলে আর আলাদা করে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করতে হয় না!
এটি কিন্তু ভুল ধারণা। কারণ বেশিরভাগ মেকআপ প্রোডাক্টসে যে এসপিএফ বা সান প্রোটেকশন থাকে, তা কখনোই আপনার স্কিনকে পুরোপুরি নিরাপদ রাখার জন্য এনাফ না। তাই যদি সানট্যান ও এজিং সাইনস প্রিভেন্ট করতে চান, তাহলে অবশ্যই ডে টাইমে মেকআপের আগে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করুন।
২) “ময়েশ্চারাইজার ও প্রাইমারের কাজের মধ্যে কোনো ডিফারেন্স নেই”
বেইজ মেকআপ পারফেক্ট করে তুলতে ময়েশ্চারাইজার ও প্রাইমার দু’টোর ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ দু’টো প্রোডাক্ট নিয়ে যে মিথ বা ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে সেটা হলো, ময়েশ্চারাইজার ও প্রাইমারের কাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই এবং এই কারণে মেকআপ করার সময় যেকোনো একটি ইউজ করলেই চলে অথচ এ দু’টো প্রোডাক্টের ফর্মুলা ও কাজ কিন্তু সম্পূর্ণ ডিফারেন্ট!
ময়েশ্চারাইজার ইউজ করলে আমাদের ফেইস দীর্ঘ সময় পর্যন্ত হাইড্রেটেড থাকে এবং এর ফলে মেকআপ লং লাস্টিং হয়। অন্যদিকে প্রাইমার ইউজ করলে আমাদের পোরগুলো কম বোঝা যায়, ছোট ছোট রিংকেলগুলোও কভার হয়ে যায় এবং সেই সাথে ফেইসের এক্সট্রা অয়েলও কন্ট্রোলে থাকে। এতে মেকআপের বেইজ একদম স্মুথ হয় এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত মেকআপ লুক ইনট্যাক্ট থাকে। আশা করি, এখন আপনারা বুঝতে পারছেন যে ময়েশ্চারাইজার ও প্রাইমারের কাজ সম্পূর্ণ আলাদা। তাই মেকআপ করার সময় প্রথমে ময়েশ্চারাইজার ও তারপর প্রাইমার ইউজ করতে হবে।
৩) “মাশকারার স্পুলি বারবার পাম্প করে প্রোডাক্ট বের করে আনা যায়”
মাশকারা ছাড়া চোখের সাজ কল্পনা-ই করা যায় না! তবে মাশকারার ব্যবহার নিয়েও আমাদের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে। সেটা হলো মাশকারা অ্যাপ্লাইয়ের সময় যদি স্পুলি দিয়ে মাশকারা বোতলের মধ্যে কয়েকবার পাম্প করা হয়, তাহলে ভেতর থেকে সহজেই প্রোডাক্ট বের করে আনা যায়। আপনারা হয়তো অনেক ভিডিওতেও এই প্রসেসটি দেখেছেন। কিন্তু সত্যি বলতে এভাবে পাম্প করা হলে মাশকারার বোতলে বাতাস ঢুকে যাওয়ার ফলে মাশকারা খুব দ্রুত ড্রাই হয়ে যায়। সেই সাথে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হওয়ারও চান্স থাকে, যা পরবর্তীতে ইরিটেশনের কারণ হতে পারে। তাই অতিরিক্ত পাম্প করা থেকে বিরত থাকুন।
৪) “মেকআপ প্রোডাক্টসের এক্সপায়ার্ড ডেইট থাকে না”
অনেকেই আছেন যারা একটি স্পেসিফিক মেকআপ প্রোডাক্ট কেনার পর বছরের পর বছর সেটি ইউজ করতে থাকেন। তারা মনে করেন মেকআপ প্রোডাক্টসের কোনো তো এক্সপায়ার্ড ডেইট থাকে না। বিশেষ করে আইশ্যাডো, ফাউন্ডেশন কিংবা ব্লাশের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়!
আসলে অন্যান্য সব প্রোডাক্টের মতো মেকআপ প্রোডাক্টসেরও এক্সপায়ার্ড ডেইট থাকে এবং এই ডেইটের পর সেই প্রোডাক্ট ইউজ করা হলে স্কিনে ইরিটেশন বা অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হওয়ার পসিবিলিটি থাকে। তাই যখন কোনো মেকআপ প্রোডাক্ট কিনবেন, তখন প্রোডাক্টের প্যাকেজিংয়ে এক্সপায়ার্ড ডেইট কবে সেটি খুঁজে বের করুন এবং সে অনুযায়ী প্রোডাক্ট ইউজ করুন।
৫) “ফাউন্ডেশন কেনার সময় গলায় সোয়াচ করে কেনা উচিত”
ফাউন্ডেশন কেনার সময় নিজের সঠিক শেইড খুঁজে পেতে কনফিউজড হননি এমন মানুষ খুব কম রয়েছেন। গলার স্কিনটোনের সাথে ম্যাচ করে ফাউন্ডেশনের শেইড চুজ করেন অনেকেই! কিন্তু অনেকেরই ফেইস আর নেক এর স্কিনটোন ডিফারেন্ট থাকে। সেক্ষেত্রে যদি গলায় সোয়াচ করে ফাউন্ডেশন কেনা হয়, তাহলে দেখা যায় অ্যাপ্লাই এর পর ফাউন্ডেশন ফেইসের চেয়ে এক থেকে দুই শেইড লাইট বা ডার্ক মনে হয়। এই সমস্যা এড়াতে সবসময় ন্যাচারাল লাইটে সরাসরি ফেইসে সোয়াচ করে ফাউন্ডেশন পারচেজ করুন।
৬) “ড্রাই স্কিনে পাউডার অ্যাপ্লাই করার প্রয়োজন নেই”
মেকআপ করার সময় ফেইসে ফাউন্ডেশন বা কনসিলারের মতো ক্রিম বেইজড প্রোডাক্টগুলো সেট করার জন্য লুজ পাউডার বা কমপ্যাক্ট পাউডার ইউজ করতে হয়। তবে অনেকের ধারণা, যদি স্কিন টাইপ ড্রাই হয়, তাহলে মেকআপের সময় পাউডার অ্যাপ্লাই না করাই ভালো, কারণ তাতে ফেইসে আরো বেশি ড্রাইনেস ফিল হয়। কিন্তু আপনার স্কিন টাইপ ড্রাই, অয়েলি বা কম্বিনেশন যেটাই হোক না কেন – ফেইসে ক্রিম বেইজড মেকআপ প্রোডাক্ট সেট করতে পাউডারের হেল্প নিতে হবে। তা না হলে ফাউন্ডেশন সেপারেট হয়ে যেতে পারে, মেকআপ লুক কেকি হয়ে যেতে পারে।
আশা করি, মেকআপ নিয়ে আপনাদের অনেকগুলো ভুল ধারণা দূর করতে পেরেছি। লেখার শেষে সবাইকে পরামর্শ দিতে চাই, সবসময় বেস্ট কোয়ালিটির অথেনটিক মেকআপ, স্কিন কেয়ার ও হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টস পারচেজ করুন। কারণ দিনশেষে ত্বক ও চুল সুন্দর রাখাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য, তাই না? অথেনটিক মেকআপ, স্কিন কেয়ার কিংবা হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট পারচেজ করার জন্য সাজগোজ হতে পারে ভরসার জায়গা। ভিজিট করুন সাজগোজের ওয়েবসাইট, অ্যাপ বা ফিজিক্যাল স্টোরে। সাজগোজের বেশ কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। এ শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে ও চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টারে অবস্থিত। এই শপগুলোর পাশাপাশি চাইলে অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকেও কিনতে পারেন আপনার দরকারি বা পছন্দের সব প্রোডাক্টস।
ছবি- সাজগোজ