ত্বকের সৌন্দর্য নিয়ে এখন আমরা সবাই বেশ সচেতন। সবাই চায় হেলদি, ফ্ললেস স্কিন। ছোট ছোট বাম্পস দেখলে মনটাই খারাপ হয়ে যায়, তাই না? দেখলে মনে হবে ব্রণ, কিন্তু আসলে ব্রণ নয়, কী তাহলে এটি? অনেক সময়ই দেখা যায় ত্বকে বিশেষত চোখের চারপাশে ছোট ছোট সাদা বাম্পের মতো সিস্ট, যা আসলে মিলিয়া! অনেকেই হয়তো এই সমস্যায় ভুগে থাকেন কিন্তু বুঝতে পারেন না মিলিয়া আসলে কী এবং কীভাবেই বা এর প্রতিকার পাওয়া যাবে। চলুন জেনে নেই বিস্তারিত।
মিলিয়া আসলে কী?
Milk spots নামে পরিচিত মিলিয়া। দেখতে ব্রণের মতো হলেও এই ক্ষুদ্র সিস্টগুলো আসলে আমাদের ত্বকের আপার লেয়ারের নিচে জমে থাকা কেরাটিন লাম্প। Stratum corneum হচ্ছে আমাদের স্কিনের এপিডার্মিসের আউটার লেয়ার, যেটি মূলত লিপিড ও কেরাটিন দিয়ে তৈরি। কেরাটিন এই স্কিন লেয়ারেই দেখা যায় সাধারণত। শিশুদের ত্বকে প্রায় সময়ই মিলিয়া হতে দেখা যায়, তবে মিলিয়া বড়দের ত্বকেও হয় যা মূলত চিক ও আই এরিয়ার চারপাশেই বেশি দেখা যায়। কয়েকমাস পর্যন্ত এই কেরাটিন সিস্ট স্থায়ী হতে পারে। এগুলো সাধারণত ক্ষতিকর নয়, কোনো ইরিটেশন হয় না।
কীভাবে বুঝবো এটি হোয়াইটহেডস নাকি মিলিয়া?
হোয়াইটহেডস ও মিলিয়া দেখতে কিছুটা একরকম হলেও এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, যেমন-
১. হোয়াইটহেডস ও একনে পপ করলে বা চাপ দিলে ভেতর থেকে ছোট গোটা জাতীয় কিছু বের হয় তা আমরা জানি, কিন্তু মিলিয়া পপ করলে কিছু বের হবে না।
২. একনের ক্ষেত্রে প্রায়ই ইচিনেস ও ইরিটেশন অনুভূত হয়, কিন্তু মিলিয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার ইচিনেস, ইরিটেশন ও ব্যথা অনুভব হবে না।
৩. হোয়াইটহেডস হচ্ছে একচুয়ালি ক্লোজড কমেডোন, এটি ওয়ান টাইপ অফ একনে। মিলিয়া কিছুটা বাম্পি, সিস্ট টাইপের। দু’টি দুই ধরনের স্কিন কনসার্ন।
মিলিয়া কেন হয়?
শিশুদের ক্ষেত্রে কেন মিলিয়া হয় তার নির্দিষ্ট কারণ এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি, এটি কিছুদিনের মধ্যে সাধারণত কিওর হয়ে যায়। এডাল্টদের মিলিয়া হওয়ার জন্য কিছু কারণ দায়ী হতে পারে। যেমন-
১. যদি ত্বকে আগে থেকেই কোনো ড্যামেজ থাকে, কোনো টক্সিক এলিমেন্টের সংস্পর্শে এসে থাকে অথবা ত্বকে যদি কোনো কারণে ফোসকা পড়ে থাকে।
২. দীর্ঘদিন স্টেরয়েড জাতীয় ক্রিমের ব্যবহারও এর কারণ হতে পারে।
৩. দীর্ঘদিনের সান ড্যামেজ ও ফ্রি রেডিক্যাল ড্যামেজের কারণ হতে পারে এই মিলিয়া।
৪. যদি ত্বকের স্বাভাবিক এক্সফোলিয়েশন প্রসেস স্লো ডাউন হয়ে যায়, তখন মিলিয়া দেখা দেয়।
৫. খুব বেশি অক্লুসিভ জাতীয় প্রোডাক্ট ব্যবহার করাও একটি কারণ।
৬. এছাড়াও ত্বকের নানা ধরন থাকে। কিছুক্ষেত্রে স্কিন মিলিয়াপ্রন হতে থাকে, আবার জেনেটিক্যালিও এটি হতে পারে।
এটি কি কিওর করা পসিবল?
মিলিয়া যদিও ত্বকের জন্য কোনো ক্ষতিকর কিছু নয় এবং সময়ের সাথে সাথেই এগুলো চলে যায়। তবে অনেক সময় অতিরিক্ত মিলিয়ার প্রবলেম আপনাকে বিব্রত করতে পারে এবং ফ্ললেস স্কিন পেতে এটি একটি ব্যারিয়ার মনে হতে পারে। ঠিকমতো যত্ন না নিলে এটি লাইফ লংও থেকে যেতে পারে। আজ আমরা জেনে নিবো এই প্রবলেমের সল্যুশন সম্পর্কে।
১. মিলিয়া পপ করা যাবে না কোনোভাবেই। কারণ মিলিয়া পপ করে এর ভেতরের কিছু বের করা সম্ভব নয় বরং এভাবে পপ করলে ত্বকের জন্য আরো ক্ষতিকর হবে যেমন পার্মানেন্ট ড্যামেজ হতে পারে বা স্পটস পড়ে যেতে পারে।
২. স্কিনকেয়ার রুটিনে পারফেক্ট এক্সফোলিয়েটর অ্যাড করুন। যেমন স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড। যদি আপনি প্রোপারলি সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই ও রিঅ্যাপ্লাই মেনটেইন করে থাকেন, আর বয়স যদি ২০ এর বেশি হয়, তাহলে সিরাম কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর চুজ করুন। সরাসরি চোখের চারপাশের ত্বকে এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করা যাবে না, বরং কটন বাডে সামান্য এক্সফোলিয়েটিং টোনার বা সিরাম নিয়ে শুধু মিলিয়ার উপরে ব্যবহার করতে হবে।
৩. সানস্ক্রিন ব্যবহার করা কিন্তু ম্যান্ডেটরি। লং টাইম সান ড্যামেজের কারণেও যেহেতু মিলিয়া হয়ে থাকে, তাই টিনেজ থেকেই এই ব্যাপারে সচেতন হোন।
৪. অক্লুসিভ হলো ময়েশ্চারাইজারের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা ত্বকের উপরিভাগে আবরণ তৈরি করে ভেতরের ময়েশ্চারকে লক করে রাখে। Petroleum gelly, silicon, dimethicon, waxes, oils (olive and soybean) এগুলো হলো কমন কিছু অক্লুসিভ। প্রয়োজনের অতিরিক্ত অক্লুসিভ ব্যবহারে যেহেতু মিলিয়া হতে পারে, তাই এই ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
ডার্মাটোলজিস্ট এর পরামর্শ নিতে ভুলবেন না
যদি স্কিনে মিলিয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়, তবে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা ডার্মাটোলজিস্ট এর পরামর্শ নিন। মিলিয়া ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রে খুব দ্রুত বা রাতারাতি সল্যুশন পাওয়ার আশা করা যাবে না।
মিলিয়া আসলে কী, এতক্ষণে কনফিউশন ক্লিয়ার হয়েছে আশা করি। তাহলে বুঝতেই পারলেন যে, এই স্কিন কনসার্নের জন্য আসলে কোনো কুইক ফিক্স সল্যুশন নেই। জাস্ট বেসিক স্কিনকেয়ার রুটিন মেনটেইন করুন, সান প্রোটেকশন নিন, ডাবল ক্লেনজিং মেথড ফলো করুন। এতেই আপনার স্কিন হেলদি থাকবে। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, ইস্টার্ন মল্লিকা, বসুন্ধরা সিটি, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), সীমান্ত সম্ভার, চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাটারস্টক, আইস্টক