ইউটেরাস বা জরায়ু মেয়েদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্গান। কারণ এটি বাচ্চা ধারণ করে এবং এখান থেকে প্রতিমাসে পিরিয়ডের ব্লিডিং হয়। হিস্ট্রেকটমি অপারেশনের মাধ্যমে ইউটেরাস বা জরায়ু ফেলে দেওয়া হয়। ফলে এই অপারেশনের পর রোগীর খুব স্বাভাবিকভাবেই পিরিয়ড হবে না এবং গর্ভধারণ করতে পারবে না। কারো কারো ক্ষেত্রে এই অপারেশনের সময় ওভারি ও ফেলোপিয়ান টিউবও অপসারণ করা হয়। ইউটেরাস বা জরায়ু অপসারণ কেন করা হয়, নিশ্চয়ই জানতে চান? চলুন এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেই।
কী কী কারণে এই অপারেশন করা দরকার হয়?
এই অপারেশন বিভিন্ন কারণে করা হয়, যেমন-
- ইউটেরাস (জরায়ু), সার্ভিক্স (জরায়ুমুখ) বা ওভারির যেকোনো ক্যান্সার
- এছাড়া বিনাইন (ক্যান্সার নয়) সমস্যার জন্যও ইউটেরাস ফেলা হয়, যেমন- ফাইব্রয়েড, এডিনোমাইসিস
- এন্ডোমেট্রিওসিস
- পিরিয়ডের সময় প্রচুর রক্তপাত, অনেক বেশি ব্যথা হলে
- জরায়ু নিচে নেমে আসা ইত্যাদি
ইউটেরাস বা জরায়ু অপসারণ এর বিকল্প আছে কি?
প্রথমত, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেডিসিন দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হয়। যখন মেডিসিন দিয়েও ভালো ফলাফল না পাওয়া যায়, তখন অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অপারেশন ছাড়া আর যে সমাধানগুলো আছে তা হলো —
১) ফাইব্রয়েড টিউমার
এক্ষেত্রে অপারেশন নির্ভর করে টিউমার এর সাইজ এবং রোগীর সমস্যা কতটুকু তার উপরে। অনেক সময় কিছু ওষুধ রক্তপাত কমিয়ে দেয়, এমনকি টিউমার এর সাইজ ছোট করে সাময়িকভাবে কষ্ট লাঘব করতে পারে। যারা বাচ্চা নিতে চান, তাদের ক্ষেত্রে অপারেশন হলো Myomectomy/মায়োমেকটমি, এক্ষেত্রে শুধু টিউমার অপসারণ করা হয়।
২) এডিনোমাইসিস/এন্ডোমেট্রিওসিস
ব্যথা ও ব্লিডিং কমানোর জন্য অনেক ধরনের হরমোনের ওষুধ ও পেইন কিলার দেওয়া হয়। যারা বাচ্চা নিতে চান, তাদের জন্য ল্যাপরোস্কপি করে সিস্ট অপসারণ, অ্যাডহিওলাইসিস (Adheolysis) করার মাধ্যমে প্রজননতন্ত্রের অ্যানাটমি ঠিক করা হয়।
৩) ইউটেরাইন প্রলাপ্স বা জরায়ু নিচে নেমে যাওয়া
প্রাথমিক অবস্থায় থাকলে বিভিন্ন ধরনের এক্সারসাইজ, যেমন কেগেল এক্সারসাইজ সাজেস্ট করা হয়। এছাড়া ভ্যাজাইনাল রিং, পেজারি ও ফদারগিলস অপারেশন হিস্ট্রেকটমির বিকল্প হতে পারে।
কী কী উপায়ে অপারেশন করা যায়?
- অ্যাবডোমিনাল অর্থাৎ পেট কেটে
- ভ্যাজাইনাল
- ল্যাপরোস্কপিক হিস্ট্রেকটমি
কোন অবস্থায় ওভারি রিমুভ করা হয়?
এটি নির্ভর করে রোগীর বয়স, রোগের ধরন ও ওভারির অবস্থার উপরে। ফ্যামিলি প্ল্যানিং কমপ্লিট হলে আর বয়স যদি মেনোপজের কাছাকাছি হয়, তবে জরায়ুর সাথে ওভারি ও ফেলোপিয়ান টিউব ফেলে দেওয়া হয়, এতে পরবর্তীতে ওভারিয়ান ক্যান্সারের সম্ভাবনা আর থাকে না।
ওভারি ফেলে দিলে কী সমস্যা হতে পারে?
ওভারি মেয়েদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্গান। এখান থেকে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন আসে। ওভারি ফেলে দিলে এই হরমোনের অভাবে সার্জিক্যাল মেনোপজ শুরু হয়ে যাবে। অর্থাৎ রোগীর হাত পা জ্বালা করা, অস্থিরতা, ঘুমের সমস্যা, মুড সুইং, সেক্সুয়াল নিড কমে যাওয়া, শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য পরবর্তীতে অনেকের ক্ষেত্রে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি দেওয়া লাগে। আপনার বয়স, শারীরিক কন্ডিশন দেখে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নিবেন যে পরবর্তীতে আপনার ট্রিটমেন্ট কী হবে।
সুস্থ হতে কতদিন লাগে?
এই অপারেশনের দুই থেকে তিনদিনের মধ্যেই রোগী বাসায় যেতে পারে। অ্যাবডোমিনাল হিস্ট্রেকটমির ক্ষেত্রে সাধারণত রোগী চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারবে, ভ্যাজাইনাল ও ল্যাপরোস্কোপিক অপারেশন এর ক্ষেত্রে আরো আগেই অর্থাৎ চার সপ্তাহের মধ্যে রোগী সুস্থ হতে পারে।
ইউটেরাস বা জরায়ু অপসারণ নিয়ে অনেক তথ্য জানা হলো। এই সার্জারি করা প্রয়োজন কেন, সুস্থ হতে কতদিন লাগে, সেগুলোও জেনে নিলাম। জরায়ু অপসারণ সার্জারির পর সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য টাটকা ফল ও সবজি, হোলগ্রেইন ও ফাইবারযুক্ত খাবার ফুড চার্টে রাখতে হবে। অবশ্যই হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন করতে হবে। আজ এই পর্যন্তই। ভালো থাকবেন।
লেখা-
ডা. উম্মুল নুসরাত জাহান
এমবিবিএস, এফসিপিএস(অবস-গাইনী),
এম আর সিওজি(ইংল্যান্ড)
কনসালটেন্ট (গাইনী)
বি আর বি হসপিটালস লি:
ছবি- সাটারস্টক, healthdirect.org