কর্মজীবী হন বা গৃহিণী, আজকালকার দিনে কাজে ব্যস্ত সবাই। ব্যস্ত জীবনে রূপ চর্চার জন্য আলাদা করে সময় বের করাটা বেশ দুরূহ হয়ে পরে অনেকের ক্ষেত্রেই। সৌন্দর্য ফুরিয়ে বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকাতেই এই দুই ক্ষেত্রের ব্যস্ত নারীদের উপযোগী কিছু ছোট খাটো দিক নির্দেশনা।
প্রথমেই আসি কর্মজীবী নারীদের কথায়। অফিস, বাসা, সংসার সবদিক সামলাতে যেয়ে হিমশিম খাওয়া। ছুটির দিন গুলোতে বাড়িতে সময় দেওয়া, সংসারের নানা কাজ বা একটু আয়েশ করে ঘুমানোর সুযোগ যদিওবা পাওয়া যায়, রূপচর্চার জন্য আলাদা সময় নেহাতই বিলাসিতা মনে হয় তখন। যান্ত্রিক জীবনেও একটু কৌশলী হলে আর টাইম ম্যানেজমেন্টে একটু রপ্ত নিজের সৌন্দর্য ধরে রাখা এমন কঠিন কিছু না।
- যাদেরকে সকালে অফিসের জন্য বের হতে হয়, সারাদিন ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখা সম্ভব হয়না। সকালে গোসলের পর ত্বক একটু ভেজা থাকতেই ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে ফেলুন। ভেজা ত্বক ময়েশ্চার লক করে সারাদিনের জন্য। ত্বকের রুক্ষতা থেকে রেহাই পাবেন সহজেই।
- সময়ের অভাবে পার্লারে যাব যাব করেও হয়ত যাওয়া হয়ে ওঠে না, কিন্তু আইব্রাও, আপার লিপ, হেয়ার ট্রিমিং এর জন্য পার্লারের শরণাপন্ন হতেই হয়। যদি আপনার অফিসের কাছে কোন ভালো পার্লার থাকে তবে কোন একদিন লাঞ্চের জন্য ব্যাগে হালকা কোন খাবার যেমন স্যানডউইচ নিয়ে নিন। সেইটা দিয়ে ঝটপট লাঞ্চ সেরে বাকি সময়টুকুর মধ্যে সেরে ফেলুন এই কাজ গুলো। কিংবা অফিস থেকে ফেরার পথে করিয়ে নিন। কারণ কাজ শেষে বাড়িতে একবার ঢোকার পর আলাদা করে পার্লারে যেতে প্রায় সবারই আলসেমি লাগে।
- মাসে বা দুই মাসে অন্তত একদিন সময় বের করুন যেদিন ফেসিয়াল করবেন। যাদের বাইরে কাজ করতে হয় স্বভাবতই তাদের ত্বক ধুলোবালির সংস্পর্শে বেশি আসে। এতে ত্বক নির্জীব হয়ে যায়। সাধারণ হারবাল ফেসিয়াল করলেই ত্বকের বেশ খানিকটা যত্নও নেওয়া হয়ে যায় অনায়াসে।
- অনেকসময় রাতের কোন দাওয়াত থাকতে পারে। বাড়িতে এসে রেডি হয়ে আবার দাওয়াতে যাওয়ার সময় হয়ে ওঠেনা, শেষে দাওয়াতে যাওয়াই হয়ত বাদ দিতে হয়। এসব ক্ষেত্রে সকালে অফিস থেকে বের হওয়ার সময় কোন একরঙা সিল্ক বা শিফন শাড়ি বেছে নিন, যা অফিসে পড়া যায়, আবার তারপরে কোন পার্টিতেও। ব্যাগে নিয়ে নিন শাড়ির সঙ্গে মানানসই একটু ভারী কাজের গহনা। সঙ্গে রাখুন আইলাইনার, কাজল, কমপ্যাক্ট, মেকাপ ফিক্সিং স্প্রে আর গাঢ় রঙের কোন লিপস্টিক। অফিস শেষে গয়না পালটাতে আর মেকআপটা পার্টিতে যাওয়ার উপযোগী করে নিতে যতক্ষণ। ব্যাস! আপনি তৈরি!
- রাতের কোন পার্টি থেকে ফেরার সময় কখনো রাত হয়ে যায়। পরের দিন সকালে অফিসের তাড়া থাকে বলে ক্লান্ত হয়ে অনেকেই মেকাপ না তুলেই ঘুমিয়ে পড়েন। ফলে ব্রণ এর সমস্যায় পড়তে হয়। ব্যাগে রাখবেন ছোট্ট বেবি অয়েল এর একটা বোতল আর কটন বল। বাড়িতে ফেরার পথে আই মেকাপ সহ যতটা মেকাপ পারেন তুলে ফেলবেন। ঘরে ঢুকে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখটা ধুয়ে ফেলুন। এরপর ময়েশ্চারাইজার দিয়ে গা এলিয়ে দিন বিছানায়।
- সপ্তাহে অন্তত এক দিন গোসলের পানিতে গোলাপজল বা কোন এসেন্সিয়াল অয়েল ব্যবহার করুন ৩-৪ ফোঁটা। সারা সপ্তাহের ধকল থেকে কিছুটা হলেও রেহাই দেবে এটি। ব্যাগে রেখে দিতে পারেন গোলাপজলের স্প্রে বোতল। অফিসে কাজের ফাঁকে মুখে হালকা স্প্রে করে নিতে পারেন, কিছুটা ফ্রেশ অনুভব করবেন।
এবার আসি গৃহিণীদের রূপ রুটিন নিয়ে। সংসার সামলানোর গুরু দায়িত্ব নিঃস্বার্থ ভাবে পালন করতে করতে হয়ত নিজের দিকে তাকানোর সময়ই হয়ে ওঠে না। কারো কারো তো ৩ মাসে একবারো পার্লারে যাওয়া হয় না। কিন্তু ক্রমেই চোখের কোনে কালি পড়া, চামড়ায় বলিরেখার উঁকিঝুঁকি, মাস দুয়েক আগের বানানো জামা-ব্লাউজ হঠাৎ টাইট হয়ে যাওয়া। অগত্যা হা পিত্যেশ করতে হয়। এসব লক্ষণই বলে দেয়, পরিবারের সবার যত্নের আড়ালে নিজের যত্নআত্তিটা ঠিক মতো হচ্ছেনা।
- যখন শপিং এ যান হয়ত রূপচর্চার কথা ভেবে এটা সেটা কেনা হয়েই যায়। কিন্তু সেটা কিনে সাজিয়ে রাখা পর্যন্তই। ব্যবহার করা আর হয়ে ওঠে না। সকালে ঘুম থেকে উঠুন নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট আগে। এক দিন ব্যবহার করুন ক্লিঞ্জার, অন্য দিন গুলোতে কোন ফেস প্যাক। কাজের ফাঁকে ফাঁকে রূপচর্চাও হয়ে যাবে, ত্বক সজীব রাখতে নিজের সুবিধা মতো ঠিক করে নিন কোনদিন কী ব্যবহার করবেন। দিনের শুরুটা যদি হয় নিজের যত্ন দিয়েই, মন্দ কী!
- সকালে চায়ের পানি ফুটাতে দিয়েছেন। চা পাতা দেওয়ার পর যখন পানি ফুটে উঠবে, সেই স্টিমটা মুখে নিন হালকাভাবে। চায়ের লিকার এর স্টিম ত্বকের পক্ষে ভীষণ উপকারী। এতে লোমকূপগুলো খুলে যাবে। চা বানানো হয়ে গেলে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে নিন। এতে লোমকূপগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। প্রতিদিন চা বানানোর সাথে সাথে ত্বকের যত্নও হয়ে যাবে প্রতিদিন।
- সপ্তাহে অন্তত একটা দিন ৩০ মিনিটের জন্য হলেও টেলিভিশন এর সামনে বসা হয় কম বেশি। সময়টা কাজে লাগান। হাতের দেওয়া পুরনো নেইল পলিশ তুলে ফেলুন। প্রোগ্রামের ফাঁকে ফাঁকে নেইল শেপ করে নেইল পলিশ লাগিয়ে নিন। টিভি দেখাও হবে আর নেইল পলিশ লাগানোর জন্য আলাদা করে সময়ও বের করতে হবেনা। নখও থাকবে পরিপাটি। সপ্তাহের যেকোনো একটা দিন এই কাজটি করতে পারেন। একইভাবে পায়ের যত্নও নিতে পারেন। ঘরে বসেই করে নিতে পারেন ম্যানিকিওর আর প্যাডিকিওর।
- রূপচর্চার সাথে সাথে শরীরটাও ফিট রাখা চাই। বিকেলে বাচ্চাদের নিয়ে বেরিয়ে পরুন বাইরে। শপিং মলে নয়, তাদের নিয়ে যান কোন পার্কে বা বাড়ির নিকটবর্তী কোন খোলা মাঠে। অন্তত সপ্তাহে ৩-৪ দিন মিনিটে ১০০ পা হাঁটলে যে পরিমাণ ঘাম ঝড়ে, বাড়তি ক্যালোরি কমিয়ে ফেলার জন্য আলাদা করে আর ভাবতে হবেনা আপনাকে। আর খোলা জায়গায় বাচ্চারাও কিছুটা খেলার সুযোগ পায়। সেই সাথে সাংসারিক কাজের এক ঘেয়েমিটা কিছুক্ষণের জন্য ঝেড়ে ফেলতে পারেন আপনিও।
- সালাদ কাটার সময় ২ টা শশার স্লাইস আর ৪ স্লাইস টমেটো আলাদা করে রাখুন। রাতে শোবার আগে মুখ পরিষ্কার করে চোখে শশা আর মুখে টমেটোর স্লাইস দিয়ে রাখুন। ১৫-২০ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে চেহারার ক্লান্তি দূর হবে।
- একটা কাঁচের বোতলে লেবুর রস আর দানাদার চিনির ঘন মিশ্রণ তৈরি করে স্নান ঘরে রেখে দিন। গোসলের সময় স্ক্রাব হিসেবে পুরো শরীরে মাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের রুক্ষ ভাব কেটে ত্বক মসৃণ রাখতে এটুকুই যথেষ্ট।
লিখেছেনঃ চৌধুরী তাহাসিন জামান
ছবিঃ পিক্সেল.কম