সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ঘুম, হেলদি ফুড, এক্সারসাইজ- এই তিনটি জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমাদের অনেকেরই রাত জেগে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করা, মুভি দেখা আর দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা রীতিমতো যেন হ্যাবিট হয়ে গেছে! লাইফস্টাইলের কারণেও স্লিপ প্যাটার্নে প্রভাব পড়ছে। ঠিকমতো ঘুম হলে শরীর, মন দু’টোই ভালো থাকে। আমাদের স্লিপ সাইকেল বা ঘুমের চক্র নিয়ন্ত্রণ করে এমন একটি হরমোন যার নাম ‘মেলাটোনিন’। ভালো ঘুমের জন্য এই হরমোনের পরিমাণ কীভাবে বাড়ানো যায়, চলুন জেনে নেই।
মেলাটোনিন আসলে কী?
মেলাটোনিন হরমোন পেনিয়াল গ্ল্যান্ডে তৈরি হয় যা শরীরের circadian rhythms বা আমাদের জেগে থাকা বা ঘুমানোর যে ন্যাচারাল বায়োলজিক্যাল সিস্টেম সেটা নিয়ন্ত্রণ করে। দিনের বেলা পেনিয়াল গ্ল্যান্ড সক্রিয় থাকে না। যখন অন্ধকার হয়, তখন শরীরে মেলাটোনিন বৃদ্ধি পায়। আলোতে মেলাটোনিন কমে যায় এবং আমরা জেগে যাই।
সানলাইট কি মেলাটোনিন প্রোডাকশনে ভূমিকা রাখে?
হ্যাঁ! চোখে কিছু লাইট-সেনসিটিভ সেলস থাকে, যা ফটোরেসিপ্টর নামে পরিচিত। যখন চোখ আলো শনাক্ত করে, বিশেষ করে নীল বা স্বল্প-তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো, তখন মেলাটোনিন প্রোডাকশন কমে যায়। আবার সন্ধ্যার পর এটি স্বাভাবিক নিয়মেই বাড়ে। তাই রাত হলে ঘুম আসে আর সকালে ন্যাচারাল লাইটের এক্সপোজার বডিকে সিগন্যাল দেয় যে এখন উঠতে হবে।
মেলাটোনিন কেন প্রয়োজন?
পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শরীরকে ন্যাচারালি হিলিং ও রিপেয়ার করে। সাধারণত ঘুমের সময় নিউরোট্রান্সমিটার ও হরমোন নিঃসৃত হয়, যা সারা দিনের জন্য শরীরকে সতেজ রাখে। যখন আমরা ডিপ স্লিপ নেই, আমাদের বডি রিস্টোরেটিভ ফাংশনে (যেমন- টিস্যু রিপেয়ার, ইমিউনিটি সিস্টেম সাপোর্ট) কাজ করে। কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে, মেলাটোনিনের অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপারটিজ আছে যা হিলিং বা রিকোভারি প্রসেসে ভূমিকা রাখে। এটি কিন্তু অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই বুঝতেই পারছেন এই হরমোন কতটা জরুরি!
ভালো ঘুমের জন্য এই হরমোন কীভাবে বাড়ানো যায়?
ঘুমের একটি নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলার মাধ্যমে মেলাটোনিন প্রাকৃতিক উপায়ে বৃদ্ধি করা যায়। ডিম, দুধ, মাছ, কলা, বাদাম, মাশরুম, আখরোট এগুলো মেলাটোনিন বৃদ্ধি করতে হেল্প করে। দুশ্চিন্তা না করা, স্ক্রিন টাইম লিমিটেড রাখা- এগুলোও আপনাকে সাহায্য করবে ঘুমের বায়োলজিক্যাল সিস্টেম ঠিক রাখতে।
খেয়াল রাখুন কিছু বিষয়
১) সুগারি ফুড আইটেমস, অ্যালকোহল, ক্যাফেইন, স্পাইসি ফুড ও হেভি মিল কিন্তু এই ঘুমের হরমোনের কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে পারে। স্লিপ প্যাটার্ন আর ন্যাচারাল বডি ফাংশন ঠিক রাখতে অবশ্যই রাত ৮টার মধ্যে ডিনার করে নিন। বেড টাইমের আগে হাই ক্যালোরি ইনটেক থেকে বিরত থাকুন।
২) ব্রেকফাস্টের টাইম একেক জনের লাইফস্টাইল, সিডিউল, প্রেফারেন্স এগুলোর উপর মূলত নির্ভর করে। কিন্তু ফিট থাকতে ঘুম থেকে ওঠার ১/২ ঘন্টা পর ব্রেকফাস্ট করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ঘুমের প্রয়োজনীয়তা নতুন করে কিছু বলার নেই। ঘুমের ঘাটতি হলে গ্লুকোজের বিপাক বাধাগ্রস্থ হয়, স্ট্রেস হরমোন বৃদ্ধি পায়, ফোকাস কমে যায়। ঘুম ভালো হলে মনটাও ভালো থাকে, তাই না? তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া ও ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করে ফেলুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের জন্য কোনো মেডিসিন গ্রহণ করবেন না, কারণ এর সাইড ইফেক্টস থাকে। তাই ন্যাচারাল ওয়েতে কীভাবে এই হরমোন বাড়ানো যায়, সেদিকে লক্ষ্য করুন। সুস্থ থাকুন, আনন্দে বাঁচুন।
ছবি- সাটারস্টক